Surah Al Fatihah Tafseer
Tafseer of Al-Fatihah : 4
Saheeh International
Sovereign of the Day of Recompense.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
ক্বিরা’আত প্রসঙ্গ
কতিপয় ক্বারী
مَلِك يَوْمِ الدِّينِ
পড়েছেন। আবার অন্যান্যগণ
مَالِك يَوْمِ الدِّينِ
পড়েছেন। উভয় ক্বিরা’আতই বিশুদ্ধ মুতাওয়াতির ভাবে বর্ণিত অনুমোদিত সাতটি ক্বিরা’আতের অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ مليك ও পড়েছেন। নাফি‘ থেকে এক ক্বিরা’আত এটাও বলা হয়েছে যে, ‘কাফ’ বর্ণে যের দিয়ে ملكِي পড়তে হবে। তবে প্রথম ক্বিরা’আত দু’টি অর্থগত ভাবে অগ্রগণ্য। আর দুটোই বিশুদ্ধ ও উত্তম। অবশ্য ইমাম যামাখশারী (রহঃ) مُلْكِ কেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা তা মাক্কা ও মাদীনায় বসোবাস কারীদের ক্বিরা‘আত। আর এর স্বপক্ষে মহান আল্লাহর বাণীঃ
"لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ"
‘আজ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কার?’ (৪০ নং সূরাহ আল মু’মিন, আয়াত ১৬) এবং
"قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ"
‘তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য, সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে।’ (৬ নং সূরাহ আল আন‘আম, আয়াত ৭৩) আয়াত দু’টিতে مُلْك পড়া হয়ে থাকে।
বিচার দিনে মহান আল্লাহই একক ক্ষমতার মালিক
মহান আল্লাহর এ উক্তি অনুসারে কিয়ামত দিবসের সাথে তাঁর অধিকারকে নির্দিষ্ট করার অর্থ এই নয় যে, কিয়ামত ছাড়া অন্যান্য জিনিসের অধিকারী থেকে তিনি অস্বীকার করেছেন। কেননা ইতোপূর্বে তিনি স্বীয় বিশেষণ ‘রাব্বুল ‘আলামীন’ রূপে বর্ণনা করেছেন এবং এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই জড়িত রয়েছে। কিয়ামত দিবসের সাথে অধিকারকে নির্দিষ্টকরণের কারণ এই যে, সেই দিন তো আর কেউ সার্বিক অধিকারের দাবীদারই হবে না। বরং সেই প্রকৃত অধিকারী মহান আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেউ মুখ পর্যন্ত খুলতে পারবে না। এমনকি টুঁ শব্দটিও করতে পারবে না। যেমন তিনি বলেনঃ
﴿ یَوْمَ یَقُوْمُ الرُّوْحُ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةُ صَفًّا١ۙۗؕ لَّا یَتَكَلَّمُوْنَ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَ قَالَ صَوَابًا ﴾
সেদিন রুহ্ ও ফিরিশতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতীত অন্যরা কথা বলবেনা এবং সে সঙ্গত কথা বলবে। (৭৮ নং সূরাহ্ নাবা, আয়াত নং ৩৮) অন্য এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃ
﴿ یَوْمَىِٕذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوْلًا﴾
দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (২০ নং সূরাহ্ তা-হা, আয়াত নং ১০৯) তিনি আরো বলেনঃ
﴿ یَوْمَ یَاْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ اِلَّا بِاِذْنِهٖ١ۚ فَمِنْهُمْ شَقِیٌّ وَّ سَعِیْدٌ﴾
যখন সেই দিন অর্থাৎ কিয়ামত দিবস আসবে তখন কোন ব্যক্তি আমার অনুমতি ব্যতীত কথাও বলতে পারবে না, অনন্তর তাদের মধ্যে কতক তো দুর্ভাগা হবে এবং কতক হবে ভাগ্যবান। (১১ নং সূরাহ্ হুদ, আয়াত নং ১০৫)
‘ইয়াওমিদ্দীন’ এর অর্থ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সেদিন তাঁর রাজত্বে তিনি ছাড়া আর কেউই থাকবে না। যেমন দুনিয়ার বুকে রূপক অর্থে ছিলো। یَوْمِ الدِّیْنِ-এর ভাবার্থ হচ্ছে সমগ্র সৃষ্ট জীবের হিসাব দেয়ার দিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন, যেদিন সমস্ত ভালো-মন্দ কাজের ন্যায্য ও চুলচেরা প্রতিদান দেয়া হবে। তবে হ্যাঁ যদি মহান আল্লাহ কোন কাজ নিজ গুণে মার্জনা করেন তাহলে তা হবে তাঁর ইচ্ছা ভিত্তিক কাজ। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম, ১/১৯) সাহাবী (রাঃ), তাবি‘ঈন (রহঃ) এবং পূর্ব যুগীয় সৎ ব্যক্তিগণ হতেও এটা বর্ণিত হয়েছে।
ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ مالك يوم الدين এর ভাবার্থে বলেছেন যে, মহান আল্লাহ কিয়ামত ঘটাতে সক্ষম। ইবনু জারীর (রহঃ) এ হাদীসটিকে য‘ঈফ বলেছেন।
বাহ্যিকভাবে এ দু’টো কথার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। প্রত্যেক উক্তিকারী অন্যের উক্তিকে বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে উক্তিগুলোর পূর্বাপর পর্যালোচনা করলে প্রথম উক্তির প্রতি বেশি প্রমাণ করে। যেমন মহান আল্লাহর বাণীঃ
﴿اَلْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَنِ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى الْكَافِرِينَ عَسِيرًا﴾
‘সেদিন সত্যিকারের কর্তৃত্ব হবে দয়াময় মহান আল্লাহর এবং কাফিরদের জন্য দিনটি হবে কঠিন।’ (২৫ নং সূরাহ আল ফুরক্বান, আয়াত-২৬) আর দ্বিতীয় উক্তিটি সাদৃশ্যশীল নিম্নোক্ত আয়াতের সাথেঃ
وَيَوْمَ يَقُولُ كُنْ فَيَكُونُ
‘আর যখনই তিনি বলবেন, ক্বিয়ামত ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে’। (৬ নং সূরাহ্ আন‘আম, আয়াত নং ৭৩) মহান আল্লাহই এসব বিষয়ে ভালো জানেন।
মহান আল্লাহই সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক
কেননা মহান আল্লাহই সব কিছুরই প্রকৃত মালিক। যেমন তিনি বলেনঃ
﴿هُوَ اللّٰهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ١ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ﴾
তিনিই মহান আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি। (৫৯ নং সূরাহ্ হাশর, আয়াত নং ২৩)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে এই মারফূ‘ হাদীসটি বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
أَخْنَعُ اسْمٍ عِنْدَ اللهِ رَجُلٌ تَسَمَّى مَلِكَ الأَمْلاَكِ لاَ مَالِكَ إِلاَّ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ.
‘ঐ ব্যক্তির নাম আল্লাহ তা‘আলার নিকট অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট যাকে শাহান শাহ বা রাজাধিরাজ বলা হয়। কারণ সব কিছুরই প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ নেই।’ (সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৫৩, সহীহ মুসলিম হাঃ ৫৭৭৪) উক্ত সহীহ হাদীস গ্রন্থদ্বয়ের মধ্যে এসেছেঃ
يَقْبِضُ اللهُ الْأَرْضَ وَيَطْوِي السَّمَاءَ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ مُلُوكُ الْأَرْض (أين الجبارون؟ أين المتكبرون؟)
‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সেদিন সমগ্র যমীনকে স্বীয় মুষ্ঠির মধ্যে গ্রহণ করবেন এবং আকাশ তাঁর ডান হাতে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ হয়ে জড়িয়ে থাকবে, তারপর তিনি বলবেনঃ ‘আমি আজ প্রকৃত বাদশাহ, যমীনের সেই প্রতাপশালী বাদশাহরা কোথায় গেলো? কোথায় রয়েছে সেই মদমত্ত অহঙ্কারীরা?’ (সহীহুল বুখারী, ৬১৫৪ ও ৬৯৪৭, সহীহ মুসলিম ৪/২১৪৮) কুর’আনুল কারীমে আরো রয়েছেঃ
﴿ لِمَنِ الْمُلْكُ الْیَوْمَ١ؕ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ﴾
যেদিন মানুষ বের হয়ে পড়বে সেদিন মহান আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। ঐ দিন কর্তৃত্ব কার? এক, পরাক্রমাশালী মহান আল্লাহরই। (৪০ নং সূরাহ্ মু’মিন, আয়াত নং ১৬) অন্যকে তাই শুধু রূপক অর্থে মালিক বলা হয়েছেঃ কুর’আনুল কারীমে রয়েছেঃ
﴿ اِنَّ اللّٰهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوْتَ مَلِكًا ﴾
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য রাজা রূপে নির্বাচিত করেছেন। (২ নং সূরাহ্ বাকারাহ, আয়াত নং ২৪৭)
এখানে তালূতকে মালিক বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে বলা হয়েছেঃ
﴿ وَ كَانَ وَرَآءَهُمْ مَّلِكٌ ﴾
কারণ তাদের সামনে ছিলো এক রাজা। (১৮ নং সূরাহ্ কাহফ, আয়াত নং ৭৯) কুর’আন মাজীদের একটি আয়াতে আছেঃ
﴿ اِذْ جَعَلَ فِیْكُمْ اَنْۢبِیَآءَ وَ جَعَلَكُمْ مُّلُوْكًا ﴾
তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নবী সৃষ্টি করেছেন, বাদশাহ করেছেন। (৫ নং সূরাহ্ মায়িদাহ, আয়াত নং ২০)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে একটি হাদীসে আছেঃ
مِثْلُ الْمُلُوكِ عَلَى الْأَسِرَّةِ.
‘সিংহাসনে অধিষ্ঠিত বাদশাহদের ন্যায়।’ (সহীহুল বুখারী, ৬/২৭৮৮, ২৭৮৯, সহীহ মুসলিম ৩/১৬০, ১৬১, ১৫১৮, ১৫১৯)
‘দীন’ শব্দের অর্থ
دِيْن শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রতিদান, প্রতিফল এবং হিসাব নিকাশ। যেমন মহান আল্লাহ কুর’আনুল কারীমে ইরশাদ করেনঃ
﴿یَوْمَىِٕذٍ یُّوَفِّیْهِمُ اللّٰهُ دِیْنَهُمُ الْحَقَّ﴾
সেদিন মহান আল্লাহ তাদের প্রাপ্ত প্রতিফল পুরোপুরি দিবেন। (২৪ নং সূরাহ্ নূর, আয়াত নং ২৫) পবিত্র কুর’আনের অন্য জায়গায় আছেঃ
﴿ءَاِنَّا لَمَدِیْنُوْنَ﴾
আমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে? (৩৭ নং সূরাহ্ সাফফাত, আয়াত নং ৫৩)
হাদীসে আছেঃ বিজ্ঞ সেই ব্যক্তি যে নিজেই নিজের কাছে প্রতিদান নেয় এবং এমন কার্যাবলী সম্পাদন করে যা অবধারিত মৃত্যুর পরে কাজে লাগে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২/১৪২৩। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেন, হাদীসটি হাসান। কিন্তু আসলে হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী ছাড়াও ইমাম আহমাদ, হাকিম ও ত্বাবারানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির কোন সূত্রই দুর্বল বর্ণনাকারী থেকে মুক্ত নয়। মুসনাদ আহমাদে বর্ণিত সূত্রে আবূ বাকর ইবনু আবী মারইয়াম নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু ‘আদী বলেন ঃ তার হাদীস দ্বারা দালীল গ্রহণ করা যায় না। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন : তিনি দুর্বল। তার বাড়িতে চুরি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিলো। “সিলসিলাহ য‘ঈফাহ” গ্রন্থের ২১১০ নম্বর হাদীসে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া আরো অনেকেই তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর অন্য সূত্রে ইবরাহীম ইবনু ‘আমর ইবনু বাক্র সাকসাকী রয়েছেন যাকে দারাকুতনী মাতরূক আখ্যা দিয়েছেন। আর ইবনু হিববান তার সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি তার পিতার উদ্ধৃতিতে বানোয়াট বহু কিছু বর্ণনা করেছেন। তার পিতাও কিছুই না। (বিস্তারিত দেখুন ‘‘সিলসিলাহ য‘ঈফাহ’’ হাঃ ৫৩১৯)
অর্থাৎ নিজের আত্মার কাছে নিজেই হিসাব নিকাশ নিয়ে থাকে। যেমন- ফারুকে ‘আযম (রাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের হিসাব নিকাশ গৃহীত হওয়ার পূর্বে তোমরা নিজের হিসাব নিকাশ নিজেই গ্রহণ করো এবং তোমাদের কার্যাবলী দাঁড়ি পাল্লায় ওযন হওয়ার পূর্বে তোমরা নিজেরাই ওযন করো এবং তোমরা মহান আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে সেই বড় উপস্থিতির জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করো যেদিন তোমাদের কোন কাজ গোপন থাকবে না।’ যেমন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
﴿یَوْمَىِٕذٍ تُعْرَضُوْنَ لَا تَخْفٰى مِنْكُمْ خَافِیَةٌ﴾
সেদিন উপস্থিত করা হবে তোমাদেরকে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (৬৯ নং সূরাহ্ হাক্কাহ, আয়াত নং ১৮)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings