Surah Maryam Tafseer
Tafseer of Maryam : 60
Saheeh International
Except those who repent, believe and do righteousness; for those will enter Paradise and will not be wronged at all.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৫৯-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ সৎলোকদের বিশেষ করে নবীদের (আঃ) বর্ণনা করলেন, যারা আল্লাহর হুদূদের রক্ষণাবেক্ষণকারী, সত্ত্বার্যের নমুনা স্বরূপ এবং মন্দকাজ থেকে দূরে অবস্থানকারী ছিলেন। এখন তিনি মন্দলোকদের বর্ণনা দিচ্ছেন, যারা ঐ ভাল লোকদের পরে এমনই হয়ে যায় যে, তারা নামায থেকেও বেপরোয়া হয়ে যায়। নামাযের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ফরজকেও যখন তারা ভুলে বসে, তখন তো এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, অন্যান্য ফরজগুলিকে কি পরোয়া তারা করতে পারে? কেননা নামায তো হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি এবং সমস্ত আমল হতে এটা উত্তম ও মর্যাদা সম্পন্ন। ঐ লোকগুলি তাদের কুপ্রবৃত্তির পিছনে লেগে পড়ে। পার্থিব জীবনেই তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নামাযকে নষ্ট করা দ্বারা উদ্দেশ্য হয়তো বা নামাযকে সম্পূর্ণরূপেই ছেড়ে দেয়। এ জন্যেই ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং পূর্ব যুগীয় ও পর যুগীয় অনেক গুরুজনের মাযহাব এটাই যে, নামায পরিত্যাগকারী কাফির। ইমাম শাফিয়ীরও (রঃ) একটি উক্তি এটাই। কেননা, হাদীসে রয়েছে যে, বান্দা ও কুফরীর (শিরকের) মধ্যে প্রভেদকারী হচ্ছে নামায। অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে প্রভেদকারী হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেল। এই মাসআলা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার জায়গা এটা নয়। অথবা নামাযকে ছেড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে সঠিকভাবে নামাযের সময়ের পাবন্দী না করা।
হযরত ইবনু মাসউদকে (আঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ কুরআনকারীমে নামাযের বর্ণনা খুবই বেশী রয়েছে। কোথাও রয়েছে নামাযের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনকারীদের শাস্তির বর্ণনা, কোথাও রয়েছে নামাযে চিরকালীনব্যাপী লেগে থাকার নির্দেশ এবং কোথাও আছে নামাযে যত্নবান থাকার হুকুম (এর কারণ কি?) উত্তরে তিনি বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নামাযের সময়ের ব্যাপারে অবহেলা না করা এবং সময়ের পাবন্দী করা।" জনগণ বললোঃ “আমরা মনে করতাম যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযকে ছেড়ে দেয়া ও ছেড়ে না দেয়া।” হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) তখন বললেনঃ “নামায ছেড়ে দেয়া তো কুফরী।" হযরত মারূক (রঃ) বলেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি যত্নবান লোকেরা উদাসীনদের তালিকাভুক্ত নয়।
খলীফাতুল মুসলেমীন আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমার ইবনু আবদিল আযীয (রঃ) এই আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “এর দ্বারা উদ্দেশ্য সরাসরি নামাযকে ছেড়ে দেয়া নয়, বরং নামাযের সময়কে নষ্ট করে দেয়া উদ্দেশ্য। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এই সব অসৎ লোকের আবিভাব ঘটবে। এই লোকগুলি চতুষ্পদ জন্তুর মত লম্ফ ঝম্ফ করতে থাকবে। আতা ইবনু আবি রবাহ্ও একথাই বলেন যে, শেষ যামানায় এ সব লোকের আবির্ভাব হবে। তারা চতুষ্পদ জন্তু ও গাধার মত রাস্তাতেই লাফাতে থাকবে এবং যে আল্লাহ আকাশে রয়েছেন তাকে মোটেই ভয় করবে। তারা লোকদেরকে দেখে কোন লজ্জা শরমও করবে না।
মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই অপদার্থ পরবর্তী লোকেরা ষাট বছর পরে আসবে যারা নামাযকে নষ্ট করে দিবে এবং কুপ্রবৃত্তির পিছনে লেগে পড়বে। তারা কিয়ামতের দিন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতঃপর এদের পরে ঐ সব অযোগ্য লোক আসবে যারা কুরআন কারীমের পাঠ করবে বটে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠ থেকে নীচে নামবে না।
কুরআনের পাঠক তিন প্রকারের রয়েছে। তারা হচ্ছে মু'মিন, মুনাফিক ও পাপাচার।" এই হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত ওয়ালীদকে (রাঃ) তাঁর শিষ্য এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “মুমিন তো ওর সত্যতা স্বীকার করবে, মুনাফিক ওর উপর বিশ্বাস রাখবে না, আর পাপাচার এর দ্বারা নিজের পেট পূর্ণ করবে।”
মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমে একটি গারীব হাদীসে রয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) যখন আসহাবে সুফফার নিকট কিছু সাদকী পাঠাতেন, তখন তিনি বলতেনঃ “কোন বারবারী পুরুষ ও বারবারিয়া স্ত্রী লোককে যেন এর থেকে কিছু না দেয়া হয়। কেননা, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) আমি বলতে শুনেছিঃ “এরাই হচ্ছে ঐ পরবর্তী অপদার্থ লোক যাদের বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু কা'ব কারাযী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা পশ্চিমের ঐ বাদশাহকে বুঝানো হয়েছে, যে চরম দুষ্ট বাদশাহ। হযরত কা'ব আহবার (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি মুনাফিকদের বিশেষণ কুরআনকারীমে পেয়ে থাকি। তা এই যে, তারা নেশাপানকারী, নামায পরিত্যাগকারী, দাবা ও চৌসির (ক্রীড়া বিশেষ) খেলোয়াড়, এশার নামাযের সময় শয়নকারী, পানাহারের ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারী এবং জামাআত পরিত্যাগকারী।" হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মসজিদগুলি তাদের থেকে শূন্য দেখা যায় এবং তারা অত্যন্ত শান শওকতের সাথে চলাফেরা করে।
আবুল আশহাব আতারদী (রঃ) বলেন যে, হযরত দাউদের (আঃ) উপর ওয়াহী আসেঃ “তোমার সঙ্গীদেরকে সতর্ক করে দাও যে, তারা যেন কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ হতে বিরত থাকে। যার অন্তর কুপ্রবৃত্তির অনুসরণে পূর্ণ থাকে তাদের জ্ঞান ও বিবেকের উপর পর্দা পড়ে যায়। যখন কোন বান্দা প্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে অন্ধ হয়ে যায়, তখন তাকে আমি সবচেয়ে হালকা শাস্তি এই দেই যে, তাকে আমার আনুগত্য হতে বঞ্চিত রাখি। হযরত উবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি উম্মতের ব্যাপারে দুটি জিনিসকে ভয় করি। এক এই যে, তারা মিথ্যা কৃত্রিমতা ও প্রবৃত্তির পিছনে পড়ে যাবে এবং নামাযকে ছেড়ে দিবে। দ্বিতীয় এই যে, মুনাফিকরা দুনিয়াকে দেখাবার জন্যে কুরআনের উপর আমলকারী হয়ে খাটি মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
(আরবী) শব্দের অর্থ হলো ক্ষতি ও অকল্যাণ। হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম য অত্যন্ত গভীর। এতে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ওটা রক্ত ও পুঁজে পরিপূর্ণ রয়েছে।
লুকমান ইবনু আমির (রঃ) বলেনঃ “আমি হযরত আবু উমামা সাদী ইবনু আজলানের (রাঃ) নিকট গমন করি। আমি তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলিঃ আপনি রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে যে হাদীস শ্রবণ করেছেন তা আমাকে শুনিয়ে দিন।" তিনি তখন বলেনঃ আচ্ছা তা হলে শুনো রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন দশ ওজনের একটি পাথর যদি জাহান্নামের ধার থেকে তাতে নিক্ষেপ করা হয় তবে পঞ্চাশ বছর ধরে পড়তে থাকলেও তা জাহান্নামের তলদেশে পৌঁছতে পারবে না। ওটা (আরবী) ও (আরবী) এর মধ্যে পৌঁছবে। (আরবী) ও (আরবী) হলো জাহান্নামের দুটি কূপ, যেখানে জাহান্নামীদের রক্ত পুঁজ জমা হয়। (আরবী) এর বর্ণনা (আরবী) এর মধ্যে রয়েছে। আর (আরবী) এর বর্ণনা আছে (আরবী) এই আয়াতের মধ্যে। (এটা ইমাম আবু জাফর ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করা মুনকার বা অস্বিকার্য। সনদের দিক দিয়েও এ হাদীসটি গারীব)
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে। অর্থাৎ নামাযে অবহেলা এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ পরিত্যাগ করেছে, আল্লাহ তাআলা তাদের তাওবা কবুল করবেন, তাদের পরিণাম ভাল করবেন এবং তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবেন। তাওবার মাধ্যমে পর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীসে আছে যে, তাওবাকারী এমন হয়ে যায় যে, যেন সে নিস্পাপ। এই লোকগুলি যে সৎকর্ম করে তার প্রতিদান ও বিনিময় তারা অবশ্যই প্রাপ্ত হবে। কোন একটি পুণ্যের প্রতিদান কম হবে না। তাওবার পূর্ববর্তী পাপের জন্যে পাকড়াও করা হবে না। এটাই হচ্ছে ঐ দয়াময়ের দয়া ও সহনশীলের সহনশীলতা যে, তাওবা করার পর তিনি পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিচ্ছেন। সূরায়ে ফুরকানে গুনাহ সমূহের বর্ণনা দেয়ার পর ওর শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন, অতঃপর ব্যতিক্রম দেখিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings