Surah An Nahl Tafseer
Tafseer of An-Nahl : 69
Saheeh International
Then eat from all the fruits and follow the ways of your Lord laid down [for you]." There emerges from their bellies a drink, varying in colors, in which there is healing for people. Indeed in that is a sign for a people who give thought.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৬৮-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে ওয়াহী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইলহাম বা অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দেয়া। মৌমাছিদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এটা বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, ওরা যেন পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং (মানুষের বাড়ীর) ছাদে ওদের মৌচাক তৈরী করে। এই দুর্বল সৃষ্টজীবের ঘরটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়! ওটা কতই না মজবুত, কতই না সুন্দর এবং কতই কারুকার্য খচিত!
অতঃপর মহান আল্লাহ মৌমাছিদেরকে হিদায়াত করেন যে, ওরা যেন ফল, ফুল এবং ঘাসপাতা হতে রস আহরণ করে ও যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গমনাগমন করে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সময় যেন সরাসরি নিজেদের মৌচাকে পৌঁছে যায়। উঁচু পাহাড়ের চূড়া হোক, মরু প্রান্তর হোক, বৃক্ষ হোক, লোকালয় হোক, জনশূন্য স্থান ইত্যাদি যে স্থানই হোক না কেন ওরা পথ ভুলে না। যত দূরেই গমন করুক না কেন ওরা প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি নিজেদের মৌচাকে নিজেদের বাচ্চা, ডিম ও মধুতে পৌঁছে যায়। ওরা ডানার সাহায্যে মোম তৈরী করে এবং মুখ দ্বারা জমা করে মধু।
(আরবি) এর তাফসীর ‘বশীভূত’ দ্বারাও করা হয়েছে। যেমন (আরবি) স্থলেও এটাই ভাবার্থ। সুতরাং (আরবি) এটা থেকে (আরবি) হবে এর একটি দলীল এটাও যে, লোকেরা মৌচাককে এক শহর হতে অন্য শহর পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট। অর্থাৎ (আরবি) এটা বা পথ হতে (আরবি) হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) দুটোকেই সঠিক বলেছেন।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাছির বয়স হলো চল্লিশ দিন। আর মৌমাছি ছাড়া সমস্ত মাছি আগুনে থাকবে।” (এ হাদীসটি আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মধু সাদা, হলদে লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ-এর হয়ে থাকে। ফল, ফুল ও মাটির রঙ-এর বিভিন্নতার কারণেই মধুর এই বিভিন্ন রং হয়ে থাকে। মধুর বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চমকের সাথে সাথে ওর দ্বারা রোগ হতেও আরোগ্য লাভ হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা বহু রোগ হতে আরোগ্য দান করে থাকেন। এখানে (আরবি) বলা হয় নাই। এরূপ বললে এটা সমস্ত রোগের আরোগ্য দানকারী রূপে সাব্যস্ত হতো। বরং (আরবি) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এতে লোকদের জন্যে শিফা রোগের আরোগ্য) রয়েছে। এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের প্রতিষেধক। ঔষধ সব সময় রোগের বিপরীত হয়ে থাকে। মধু গরম, কাজেই এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের জন্যে উপকারী। মুজাহিদ (রঃ) এবং ইবনু জারীর (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনে শিফা রয়েছে। এ উক্তিটি আপন স্থানে সঠিক বটে, কিন্তু এখানে তো মধুর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ফলে এখানে মুজাহিদের (রঃ) উক্তির অনুসরণ করা হয়নি। হ্যা, তবে কুরআনের শিফা হওয়ার বর্ণনা অন্য জায়গায় দেয়া হয়েছে। যেমনঃ (১৭:৮২) এই আয়াতে এবং (আরবি) এই আয়াতে (আরবি) আল্লাহ পাকের এই উক্তিতে দ্বারা যে মধু উদ্দেশ্য তার দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বললোঃ “আমার ভাই-এর পেট ছুটে গিয়েছে। (অর্থাৎ খুব পায়খানা হচ্ছে)।” তিনি বলেনঃ “তাকে মধু পান করিয়ে দাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। আবার সে আসলো এবং বললোঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! তার রোগ তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এবারও বললেনঃ “যাও, তাকে মধু পান করাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান। করালো। পুনরায় এসে সে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তার পায়খানা তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।” তিনি বললেনঃ “আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাই-এর পেট মিথ্যাবাদী। তুমি যাও এবং তাকে মধু পান করাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। এবার সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করলো। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁদের সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা)
কোন কোন ডাক্তার মন্তব্য করেছেন যে, সম্ভবতঃ ঐ লোকটির পেটে ময়লা আবর্জনা খুব বেশী ছিল। মধুর গরম গুণের কারণে ওগুলি হজম হতে থাকে। ফলে ঐ ময়লা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট অংশগুলি বেরিয়ে যেতে শুরু করে। কাজেই পাতলা মল খুব বেশী হয়ে বেরিয়ে যায়। বেদুঈন ওটাকেই রোগ বৃদ্ধি বলে মনে করে এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট অভিযোগ করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে আরো মধু পান করাতে বলেন। এতে ময়লা আবর্জনা পাতলা মলরূপে আরো বেশী হয়ে নামতে শুরু করে। পুনরায় মধু পান করানোর পর পেট সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সে পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে। ফলে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কথা, যা তিনি আল্লাহ তাআলার ইঙ্গিতেই বলেছিলেন, সত্য প্রমাণিত হয়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)হাওয়া ও মধু খুব ভালবাসতো। (এ হাদীসটিও সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, কিন্তু এটা সহীহ বুখারীর শব্দ)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিনটি জিনিসে শিফা বা রোগ মুক্তি রয়েছে। শিঙ্গা লাগানো মধুপান এবং (গরম লোহা দ্বারা) দাগ দিয়ে নেয়া। কিন্তু আমার উম্মতকে আমি দাগ নিতে নিষেধ করছি।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “তোমাদের ওষুধগুলির মধ্যে কোন গুলিতে যদি শিফা’ থেকে থাকে তবে সেগুলি হচ্ছে শিঙ্গা লাগানো, মধুপান এবং আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়া, যেটা যে রোগের জন্যে উপযুক্ত। তবে আমি দাগিয়ে নেয়াকে পছন্দ করি না।” (এ হাদীসটিও সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়াকে আমি অপছন্দ করি, বরং পছন্দ করি না)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রোগের আরোগ্যদানকারী দুটি জিনিসকে তোমরা নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নাও। সে দু’টি জিনিস হচ্ছে মধু ও কুরআন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী ইবনু আবি তালিব, (রাঃ) বলেনঃ “তোমাদের কেউ যদি তার রোগের শিফা চায়, তবে সে যেন কুরআনের কোন আয়াতকে একটি সহীফায় লিখে নেয় এবং ওটাকে বৃষ্টির পানি দ্বারা ধৌত করে। অতঃপর তার স্ত্রীর নিকট থেকে একটা দিরহাম রৌপ্য মুদ্রা চেয়ে নেয় যা সে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করবে। তারপর ঐ দিরহাম দ্বারা কিছু মধু কিনে নেয় এবং তা পান করে। এইভাবে কয়েকটি কারণে এর দ্বারা শিফা পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি কুরআনে ওটা নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্যে শিফা (রোগমুক্তি) ও রহমত স্বরূপ।” (১৭:৮২) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি আকাশ হতে বরকতময় পানি বর্ষিয়ে থাকি।” (৫০:৯) আর এক জায়গায় বলেছেন (আরবি) অর্থাৎ যদি তারা (তোমাদের স্ত্রীরা) মহরের কিয়দাংশ ছেড়ে দেয় তবে তা তোমরা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।” (৪:৪) মধুর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ এতে (মধুতে) লোকদের জন্যে শিফা রয়েছে।” (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে নেয় তার উপর কোন বড় বালা মসীবত আসে না। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যুবাইর ইবনু সাঈদ এবং তার বর্ণিত হাদীস পরিত্যাজ্য)
আবু উবাই ইবনু উম্মি হারাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “তোমরা (আরবি) ও (আরবি) ব্যবহার কর। কেননা, এতে প্রত্যেক রোগের শিফা’ রয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবি) এর অর্থ কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “মৃত্যু”। (এ হাদীসটিও ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবি) ঐ মধুকে বলা হয় যা ঘিয়ের মশকে রাখা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে! অর্থাৎ হে মানব মণ্ডলী! মৌমাছির মত অতি দুর্বল ও শক্তিহীন প্রাণী তোমাদের জন্যে মধু ও মোম তৈরী করা, স্বাধীনভাবে বিচরণ করা এবং বাসস্থান ভুল না করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যারা চিন্তা গবেষণা করে তাদের জন্যে এতে আমার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আধিপত্যের বড় নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর বিজ্ঞানময়, জ্ঞানী, দাতা এবং দয়ালু হওয়ার দলীল লাভ করতে পারে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings