Surah Al Hijr Tafseer
Tafseer of Al-Hijr : 94
Saheeh International
Then declare what you are commanded and turn away from the polytheists.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৯৪-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তুমি জনগণের কাছে আমার বাণী স্পষ্টভাবে পৌছিয়ে দাও। এ ব্যাপারে কোনই ভয় করবে না। মুশরিকদের কাছে তুমি একত্ববাদ খোলাখুলি ভাবে প্রচার করো। নামাযে কুরআন কারীম উচ্চ স্বরে পাঠ করো।
এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সঃ) গোপনীয় ভাবে প্রচার কার্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি এবং তার সাহাবীগণ প্রকাশ্য ভাবে তাবলীগের কাজ চালিয়ে যেতে শুরু করেন।
আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! এ কাজে মুশরিকদের ঠাট্টা বিদ্রুপকে। তুমি উপেক্ষা করো। বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্যে আমিই যথেষ্ট। প্রচার কার্যে তুমি মোটেই অবহেলা প্রদর্শন করো না। এরা তো চায় যে, তুমি তাবলীগের কাজে অমনোযোগী হয়ে যাও। সুতরাং তোমার কর্তব্য হচ্ছে দ্বিধাসংকোচহীন ভাবে পুরোমাত্রায় প্রচারকার্য চালিয়ে যাওয়া এবং তাদেরকে মোটেই ভয় না করা। আমি আল্লাহ স্বয়ং তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী। আমিই তোমাকে তাদের ক্ষতি ও দুষ্টামি থেকে রক্ষা করবো। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তুমি পৌছিয়ে দাও, আর তা যদি তুমি না কর তাহলে তুমি তাঁর রিসালাতকে পৌছিয়ে দিলে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ (এর অনিষ্ট) থেকে রক্ষা করবেন।”
হযরত আনাস (রাঃ) (আরবি) আয়াত সম্পর্কে বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পথ দিয়ে গমন করছিলেন। এমতাবস্থায় মুশরিকরা তাঁকে জ্বালাতন করে। তখন তার রক্ষক হিসেবে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করেন এবং তাদেরকে চওকা মারেন। ফলে তাদের দেহ এমন ক্ষত বিক্ষত হয় যে, যেন তাতে বর্শা দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। তাতেই তারা মৃত্যু মুখে পতিত হয়। তারা ছিল মুশরিকদের বড় বড় নেতা। তারা ছিল বেশ বয়স্ক লোক এবং তাদেরকে খুবই সম্ভ্রান্ত মনে করা হতো। আসওয়াদ ইবনু আবদিল মুত্তালিব আবু যামআ ছিল বানু আসাদ গোত্রভূক্ত। সে ছিল রাসূলুল্লাহর (সঃ) চরমতম শত্রু। সে তাঁকে খুবই দুঃখ-কষ্ট দিতো এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। তিনি অসহ্য হয়ে তার জন্যে বদদুআ’ও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি তাকে অন্ধ ও সন্তানহীন করে দিন।” আসওয়াদ ছিল বানু যাহরার অন্তর্ভূক্ত। বানু মাখযুম গোত্রভূক্ত ছিল ওয়ালীদ। আস ইবনু ওয়ায়েল ছিল বানু সাহমের অন্তর্ভূক্ত। হারিস ছিল খুযাআ গোত্রভূক্ত। এই লোকগুলি সদা সর্বদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) ক্ষতি করতেই থাকতো। তারা জনগণকেও তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতো। যতদূর কষ্ট দেয়ার শক্তি তাদের ছিল তাতে তারা মোটেই ত্রুটি করতো না। তাদের উৎপীড়ন যখন চরম পর্যায়ে পৌছে গেল এবং কথায় কথায় রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বিদ্রুপ করতে থাকলো তখন আল্লাহ তাআলা (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াত নাযিল করলেন। (এটা হাফিয আবু বকর আল বায্যার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যান। এমন সময় আসওয়াদ ইবনু আবদে ইয়াছ তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার পেটের দিকে ইশার করেন। এর ফলে তার পেটের অসুখ হয়ে যায় এবং তাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ইতিমধ্যে ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা গমন করে। খোযা’ গোত্ৰীয় একটি লোকের তীরের ফলকের সামান্য আঘাতে তার পায়ের গোড়ালী কিছুটা আহত হয়েছিল। এরপর সুদীর্ঘ দু' বছর কেটে গিয়েছিল। হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঐ দিকেই ইশারা করেন। এর ফলে ঐ ক্ষতস্থানটুকু ফুলে যায় ও পেকে ওঠে এবং তাতেই সে মৃত্যু বরণ করে। এরপর গমন করে আস ইবনু ওয়ায়েল। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার পায়ের পাতার দিকে ইশারা করেন। কিছু দিন আগে তায়েফ গমনের উদ্দেশ্য সে তার গাধার উপর আরোহণ করে। পথে সে গাধার পিঠ থেকে পড়ে যায় এবং তার পায়ের পাতায় কাটা ঢুকে যায়। তাতেই তার জীবন লীলা শেষ হয়। হযরত জিবরাঈল (আঃ) হারিছের মাথার দিকে ইশারা করেন। এর ফলে তার মাথা দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাতেই তার মৃত্যু হয়। এই সব কষ্টদাতাদের নেতা ছিল ওয়ালীদ ইবনু মুগীরা। সেই তাদেরকে একত্রিত করেছিল। তারা ছিল সংখ্যায় পাঁচ জন বা সাতজন। তারাই ছিল প্রধান এবং তাদের ইঙ্গিতেই ইতর লোকেরা ইতরামি করতো। এই লোকগুলি এই সব বাজে ও জঘন্য ব্যবহারের সাথে সাথে একাজও করতো যে, তারা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যদেরকে শরীক করতো। তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি এখনই ভোগ করতে হবে। আরো যারা রাসূলের (সঃ) বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করবে তাদেরও অবস্থা অনুরূপই হবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ) আমি তো জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়। কিন্তু তুমি তাদের কথার প্রতি মোটেই ভ্রুক্ষেপ করো না। আমি তোমার সাহায্যকারী। তুমি তোমার প্রতিপালকের যিকর, পবিত্রতা ঘোষণা এবং গুণকীর্তনে লেগে থাকো। মন ভরে তাঁর ইবাদত কর, নামাযের খেয়াল রেখো এবং সিজদাকারীদের সঙ্গ লাভ কর।”
হযরত নাঈম ইবনু আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! তুমি দিনের প্রথমভাগে চার রাকআত নামায হতে অপারগ হয়ো না, তা হলে আমি তোমার জন্যে ওর শেষ ভাগ যথেষ্ট করবো।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এজন্যেই রাসূলুল্লাহর (সঃ) অভ্যাস ছিল এই যে, যখন তিনি কোন ব্যাপারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়তেন তখন নামায শুরু করে দিতেন।
এই শেষ আয়াতে (আরবি) শব্দ দ্বারা মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। এর দলীল হচ্ছে সূরায়ে (আরবি) এর ঐ আয়াতগুলি যেগুলিতে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামীরা নিজেদের অপরাধ বর্ণনা করতে গিয়ে বলবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা বলবেঃ আমরা নামাযীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না। আর আমরা আলোচনাকারীদের সাথে। আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। আমরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন পর্যন্ত।” (৭৪:৪৩-৪৭) এখানেও এর স্থলে (আরবি) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
একটি সহীহ, হাদীসেও রয়েছে যে, হযরত উসমান ইবনু মাঊনের (রাঃ) মৃত্যুর পর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নিকট গমন করেন তখন উম্মুল আ’লা (রাঃ) নাম্নী আনসারের একটি মহিলা বলেনঃ “হে আবুস সায়েব (রাঃ) । আপনার উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে সম্মান দান করেছেন।” তাঁর একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মান দান করেছেন?” উত্তরে মহিলাটি বলেনঃ “আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উৎসর্গিত হোক! তার উপর আল্লাহ তাআলা দয়া না করলে আর কার উপর করবেন?” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, তার মৃত্যু হয়ে গেছে এবং আমি তার মঙ্গলেরই আশা রাখি।” এই হাদীসেও (আরবি) এর স্থলে (আরবি) শব্দ রয়েছে।
এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের জ্ঞান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত নামায ইত্যাদি ইবাদত তার উপর ফরয। তার অবস্থা যেমন থাকবে সেই অনুযায়ী সে নামায আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দাঁড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসে পড়তে না পারলে শুয়ে শুয়েই পড়বে।”
এর দ্বারা বদমাযহাবীরা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির লক্ষ্যে একটি কথা বানিয়ে নিয়েছে। তা এই যে, তাদের মতে মানুষ যে পর্যন্ত পূর্ণতার পর্যায়ে না পৌছে সেই পর্যন্ত তার উপর ইবাদত ফরয থাকে। কিন্তু যখনই সে মারেফাতে মনযিলগুলো অতিক্রম করে ফেলে তখন তার উপর থেকে ইবাদতের কষ্ট লোপ পেয়ে যায়। এটা সরাসরি বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতামূলক কথা। এই লোকগুলি কি এটুকুও বুঝে না যে, নবীগণ, বিশেষ করে নবীকূল শিরমণি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর সাহাবীবর্গ মারেফাতের সমস্ত মনযিল অতিক্রম করেছিলেন এবং তারা খোদায়ী বিদ্যা এবং পরিচিতির ক্ষেত্রে সারা দুনিয়া অপেক্ষা পূর্ণতম ছিলেন। মহান আল্লাহর গুণাবলী এবং তাঁর পবিত্র সত্তা সম্পর্কে তাঁরাই সবচেয়ে বেশী জ্ঞান রাখতেন। এতত্সত্ত্বেও তারা সকলের চেয়ে বেশী ইবাদত করতেন এবং দুনিয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাতেই লেগে রয়েছিলেন। তাঁরা মহান প্রতিপালকের আনুগত্যের কাজে সমস্ত দুনিয়া হতে বেশী নিমগ্ন ছিলেন। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, এখানে (আরবি) দ্বারা (আরবি) উদ্দেশ্য। সমস্ত মুফাসির, সাহাবী, তাবিঈ প্রভৃতির এটাই মাযহাব। অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে, তিনি আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। আমরা তার কাছে ভাল কাজে সাহায্য চাচ্ছি। তার পবিত্র সত্তার উপরই আমাদের ভরসা। আমরা সেই মালিক ও হাকিমের কাছে এই প্রার্থনা জানাই যে, তিনি যেন আমাদেরকে পূর্ণ ইসলাম ও ঈমান এবং পুণ্য কাজের উপর আমাদের মৃত্যু ঘটান। তিনি বড় দাতা এবং পরম দয়ালু।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings