Surah Ibrahim Tafseer
Tafseer of Ibrahim : 35
Saheeh International
And [mention, O Muhammad], when Abraham said, "My Lord, make this city [Makkah] secure and keep me and my sons away from worshipping idols.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩৫-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
মক্কার নিরাপত্তা ও শির্ক থেকে নিজে ও সন্তানদেরকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরগাহে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (عليه السلام) যে দু‘আ করেছিলেন সে কথা অত্র আয়াতগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত আয়াতে هذا البلد দ্বারা মক্কা নগরীকে বোঝানো হয়েছে। ইবরাহীম (عليه السلام) প্রথমেই নিরাপত্তার দু‘আ করলেন এজন্য যে, কোন স্থানে নিরাপত্তা না থাকলে সে স্থান যতই মূল্যবান হোক আর যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক তাতে কেউ যেতে চাইবে না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবূল করলেন যার ফলে আজও সেখানে নিরাপত্তা বিরাজ করছে, কোন হত্যা, খুন, রাহাজানি, বিবাদ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি; এমনকি পশুপাখি পর্যন্তও নিরাপদে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا اٰمِنًا وَّيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ)
“তারা কি দেখে না আমি ‘হারাম'কে নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ তার চতুষ্পার্শ্বে যেসব মানুষ আছে, তাদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয় (হামলা করা হয়)।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৭)
যারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ ঘরের দিকে অগ্রসর হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছেন, কিয়ামত পর্যন্ত এ ঘর এবং এ ঘরে যারা আসবে সবাই নিরাপদে থাকবে।
(وَّاجْنُبْنِيْ وَبَنِيَّ)
তিনি আরো দু‘আ করলেন তাঁর জন্য এবং তাঁর সন্তানদের জন্য যেন তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা মূর্তি পূজা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। এখানে তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে। তারা দাবী করত আমরা ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসারী, ইবরাহীম (عليه السلام) তো প্রতিমা পূজারী ছিলেন না, তিনি কাবা নির্মাণ করলেন তাওহীদের ওপর ভিত্তি করে। ভবিষ্যতে কখনো যাতে শির্ক না হয় সে জন্য তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন যেন তিনি তাঁকে ও তাঁর সন্তানদেরকে শির্ক থেকে রক্ষা করেন। অথচ তোমরা কাবা ঘরে মূর্তি রেখে পূজা করছ আর বলছ, আমরা ইবরাহীম (عليه السلام) এর অনুসারী।
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام)-এর এই দু‘আ তাঁর কিছু সন্তানের জন্য কবূল করলেন এবং কিছু সন্তানের জন্য কবূল করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَّظٰلِمٌ لِّنَفْسِه۪ مُبِيْنٌ)
“তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক ছিল সৎ লোক এবং কতক নিজেদের ওপর প্রকাশ্য অত্যাচারী।” (সূরা স্বফ্ফাত ৩৭:১১৩)
অর্থাৎ সবাই তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে না, কেবল আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে তাওফীক দান করবেন তারাই পারবে।
সন্তানের ভবিষ্যত মঙ্গল কামনা করে সব পিতা-মাতাই দু‘আ করে থাকে। পিতা-মাতার উচিত সন্তানকে শির্ক থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করা যেমন ইবরাহীম (عليه السلام) করেছেন।
(إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيْرًا)
অর্থাৎ এসব মূর্তি, প্রতিমা অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। প্রশ্ন হতে পারে এরা তো জড় পদার্থ, এরা পথভ্রষ্ট করল কিভাবে? উত্তর এরা পথভ্রষ্ট করেনি, কিন্তু এদের কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়েছে। এদেরকে অনেকে কল্যাণদাতা, অকল্যাণ প্রতিরোধকারী মনে করে ইবাদত করে। তাই ইবরাহীম (عليه السلام) বললেন: যারা তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারাই আমার অন্তর্ভুক্ত, আমার মিল্লাতভুক্ত। আর যারা আমার অবাধ্য হবে তথা আমি যে তাওহীদের বাণী নিয়ে এসেছি তা বর্জন করবে তাদের দায়িত্ব তোমার হাতে, তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু। যেমন
ঈসা (عليه السلام)-ও বলেছিলেন:
(إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ج وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)
“তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’’ (সূরা মায়িদা ৫:১১৮)
সুতরাং কেউ কথা অমান্য করলে রাগের বশবর্তী হয়ে তার ওপর বদ্দু‘আ করা যাবেনা বরং তার ওপর রহমতের দু‘আ করতে হবে। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে সঠিক জিনিস বোঝার জ্ঞান দান করেন।
হাজেরার ঘরে যখন ইসমাঈল (عليه السلام) জন্ম নিলেন তখন ইবরাহীম (عليه السلام) কে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিলেন তিনি যেন হাজেরা ও সন্তান ইসমাঈলকে নির্জন মরুভূমি মক্কায় রেখে আসে। বৃদ্ধ বয়সে একটি সন্তান পেলেন তাও নিজের কাছে রাখার সুযোগ পেলেন না। আল্লাহ তা‘আলার আদেশ পেতে দেরী, পালন করতে দেরী নয়। সকল মায়া মমতা বর্জন করে স্ত্রী হাজেরা ও কলিজার টুকরা ইসমাঈলকে রেখে আসলেন। যখন রেখে চলে আসেন তখন হাজেরা বললেন: আপনি কি নিজের পক্ষ থেকে রেখে যাচ্ছেন, না কি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে?
ইবরাহীম ভারাক্রান্ত মনে কথা বলতে পারছেন না, হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে। তখন হাজেরা বললেন: তাহলে কোন চিন্তা নেই, যে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে রেখে যাচ্ছেন সে আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের ব্যবস্থা করবেন। তখন ইবরাহীম (عليه السلام) এ দু‘আ করলেন ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসতি করলাম অনুর্বর (চাষাবাদহীন) উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট, হে আমাদের প্রতিপালক! তারা যেন সালাত কায়েম করে।’
مِنْ এখানে تبعضية বা আংশিক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ কিছু লোক, উদ্দেশ্য হল মুসলিমগণ। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام) এর দু‘আ কবূল করে নিলেন, ফলে সারা পৃথিবী থেকে মুসিলমরা দলে দলে হজ্জের মওসুমে উপস্থিত হয়, হজ্জের মওসুম ছাড়াও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। এমনকি যাদের হজ্জ করার সামর্থ নেই তাদের মনে আগ্রহ থাকে, যদি একবার সেখানে যেতে পারতাম। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা মুসিলমদের মনে মক্কার প্রতি একটি আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
(وَارْزُقْهُمْ مِّنَ الثَّمَرٰتِ)
এ দু‘আরও প্রভাব লক্ষ্যণীয়, মক্কার মত বৃক্ষ-লতাহীন মরুভূমি, যেখানে কোন ফলফলাদি আবাদ হয় না সেখানে আজ বিভিন্ন রকমের ফলফলাদি সর্বদা পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায়, যদিও মওসুম না হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর স্মরণ কর! যখন ইবরাহীম বললেন: হে আমার রব! এ স্থানকে তুমি নিরাপত্তাময় শহরে পরিণত কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে জীবিকার জন্য ফল-শস্য প্রদান কর। আল্লাহ বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকে আমি অল্পদিন ভোগ করতে দেব। পরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব, এটি নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল! ” (সূরা বাক্বারাহ ২:১২৬)
(رَبَّنَآ إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِيْ وَمَا نُعْلِنُ)
অর্থাৎ হে আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু তুমি সব জান, কোন কিছুই তোমার কাছে গোপন নেই সেহেতু তুমি আমার দু‘আর উদ্দেশ্যও জান। সুতরাং তুমি আমার দু‘আ কবূল করে নিও।
বৃদ্ধ বয়সে সন্তান ইসমাঈল ও ইসহাককে পেয়ে ইবরাহীম (عليه السلام) আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করলেন, আর তিনি প্রার্থনা করলেন যেন তিনি সালাত কায়েম করতে পারেন এবং তাঁর উত্তরসূরীগণ। আরো দু‘আ করলেন যাতে তাঁকে, পিতা-মাতাকে এবং সকল মু’মিনদেরকে হিসাবের দিন আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন। তবে তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা তখন করেছিলেন যখন তিনি জানতেন না যে, তার পিতা আল্লাহ তা‘আলার দুশমন। যখন জানতে পারলেন তখন এ দু‘আ থেকে বিরত থাকলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرٰهِيْمَ لِأبِيْهِ إِلَّا عَنْ مَّوْعِدَةٍ وَّعَدَهَآ إِيَّاهُ ج فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَه۫ أَنَّه عَدُوٌّ لِّـلّٰهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ ط إِنَّ إِبْرٰهِيْمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيْمٌ)
“ইব্রাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে; অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শত্র“ তখন ইব্রাহীম তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল। ইব্রাহীম তো কোমল হৃদয়সম্পন্ন ও সহনশীল।” (সূরা তাওবা ৯:১১৪)
কারণ কাফির-মুশরিকদের জন্য দু‘আ করা কোন নবী-রাসূলের জন্য সমীচীন নয়।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُولِيْ قُرْبٰي مِنْۭ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحٰبُ الْجَحِيْمِ)
“নিকট আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাবী এবং মু’মিনদের জন্য সংগত নয় যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী।” (সূরা তাওবাহ ৯:১১৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পিতা-মাতার উচিত সন্তানের জন্য ভাল দু‘আ করা।
২. কোন মানুষের জন্য বদদু‘আ করা উচিত নয়।
৩. মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তাই ইসলাম সন্ন্যাসী জীবন পছন্দ করে না।
৪. কোন খুশির সংবাদ পেলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা আদায় করতে হবে। যেমন ইবরাহীম (عليه السلام) সন্তান লাভ করার পর আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করেছেন।
৫. ভালো কাজ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার তাওফীক কামনা করতে হবে।
৬. সন্তান পিতা-মাতার জন্য উত্তম দু‘আ করবে।
৭. মক্কা ও পার্শ্ববর্তী হারাম এলাকা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। সেখানে কোন মারামারি, হানাহানি ইত্যাদি কিছুই হবে না।
৮. মু’মিন ব্যক্তিদের উচিত পরস্পরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা ।
৯. কোন কাফির-মুশরিকদের জন্য ক্ষমা চাওয়া জায়েয নয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings