Surah Ibrahim Tafseer
Tafseer of Ibrahim : 13
Saheeh International
And those who disbelieved said to their messengers, "We will surely drive you out of our land, or you must return to our religion." So their Lord inspired to them, "We will surely destroy the wrongdoers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৩-১৭ আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল আর রাসূলগণ দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছেন এবং তাতে অটল অবস্থানে রয়ে গেলেন তখন তারা ধমক ও ভয় দেখিয়ে বলল: আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব যদি আমাদের ধর্মের অনুসরণ না কর। শু‘আইব (عليه السلام) ও লূত (عليه السلام)-এর জাতির লোকেরা বলেছিল যে, আমাদের বাসভূমি থেকে তাদেরকে বের করে দাও। যেমন সূরা আ‘রাফের ৮৮ নং আয়াত এবং সূরা নামলের ৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে মক্কার কুরাইশরাও এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বলেছিল তাকে বন্দী কর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে তাড়িয়ে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ أَوْ يَقْتُلُوْكَ أَوْ يُخْرِجُوْكَ ط وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللّٰهُ ط وَاللّٰهُ خَيْرُ الْمٰكِرِيْنَ )
“স্মরণ কর! যখন কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” (সূরা আনফাল ৮:৩০)
কাফিরদের এসব কথায় আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সাহস দিয়ে ওয়াহী প্রেরণ করলেন যে, তোমাদেরকে সাহায্য করব আর জালিমদেরকে ধ্বংস করব।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ سَبَقَتْ کَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِیْنَﯺﺊ اِنَّھُمْ لَھُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَﯻﺕ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَھُمُ الْغٰلِبُوْنَﯼ )
“আমার রাসূল বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এবং আমার বাহিনী, অবশ্যই তারাই জয়ী হবে।” (সূরা স্বফফাত ৩৭:১৭১-১৭৩)
এরূপ সূরা আ‘রাফের ১২৮ নং এবং সূরা মুজাদালার ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
আমরা দৃষ্টিপাত করলেই দেখতে পাব যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সহযোগিতা করেছেন, কাফির-মুশরিকদেরকে ধ্বংস করেছেন। নূহ, হূদ, সালেহ, লূত, ইবরাহীম, ঈসা ও মূসা আলাইহিমুস সালাম-সহ সকল নাবীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। যখন মক্কার কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সুন্দরভাবে মদীনায় পৌঁছে দিলেন এবং সেখানে দীনের সাহায্যকারী সহচর্য বানিয়ে দিলেন, তারা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলামকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিয়ে যায় এমনকি শেষ পর্যন্ত যে মক্কা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বের করে দেয়া হয়েছিল সে মক্কাই তারা জয় করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
(مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ ط وَالَّذِيْنَ مَعَه۫ أَشِدَّا۬ءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَا۬ءُ بَيْنَهُمْ)
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল।” (সূরা ফাতহ ৪৮:২৯)
(وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِنْۭ بَعْدِهِمْ)
কাফিরদেরকে ধ্বংস করে, তাদেরকে হীন ও অপদস্ত করে পরাজয় বরণ করিয়ে সে দেশ তোমাদের অধীনস্থ করে দেব। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয় করলেন, উমার (রাঃ) অর্ধ-জাহান ইসলামের শাসনাধীনে নিয়ে এসেছিলেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُسْتَضْعَفُوْنَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِيْ بٰرَكْنَا فِيْهَا)
“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত (সিরিয়া) রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করেছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩৭)
মু’মিনদের জয় আর কাফিরদের পরাজয় দুনিয়াতেও হয়েছিল এবং হবে আখিরাতেও। কাফিররা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে যাবে, আর মু’মিনরা জান্নাতের ওয়ারিশ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْۭ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصّٰلِحُوْنَ)
“আমি অবশ্যই লাওহে মাহফুযে যা লেখার তা লেখার পর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৫)
তবে এ জয় সে সকল মু’মিনদের যারা আল্লাহ তা‘আলার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে ভয় করে। কারণ যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলে তারাই দীনের ওপর অটল থাকতে পারে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه۪ وَنَهَي النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰي فَإِنَّ الْـجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰي)
“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় রেখেছে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রেখেছে, অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯:৪০-৪১)
وَاسْتَفْتَحُوْا অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফায়সালা কামনা করল। যদি নাবীদের দীন সঠিক হয় তাহলে আমাদেরকে পাথরের বৃষ্টি দ্বারা ধ্বংস করে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ قَالُوا اللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ هٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَا۬ءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)
“স্মরণ কর! যখন তারা বলছিল, ‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের ওপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দাও।” (সূরা আনফাল ৮:৩২)
যারা কুফরী করেছে, ঈমান আনতে অহংকার করেছে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। দুনিয়াতে পরাজয়ের গ্লানি আর (وَمِنْ وَّرَا۬ئِه۪) তথা আখিরাতে জাহান্নাম। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ لا مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيْبِ لا نِالَّذِيْ جَعَلَ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيْدِ )
‘‘আদেশ করা হবে:) তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধা দানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা‘বূদ গ্রহণ করত তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” (সূরা ক্বফ ৫০:২৪-২৬)
(مَّا۬ءٍ صَدِيْدٍ) বলা হয় জাহান্নামীদের শরীর ও চামড়া থেকে নির্গত পূঁজ ও রক্তকে। কতক হাদীসে এসেছে عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ অর্থাৎ জাহান্নামীদের দেহ-নিঃসৃত রক্ত ও পূঁজ ইত্যাদি। আর কতক হাদীসে এসেছে উক্ত পুঁজ ও রক্ত এত গরম হবে যে, তাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই তাদের মুখমণ্ডলের চামড়া খসে পড়বে এবং এর এক ঢোক পান করতেই তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। (তিরমিযী হা: ২৪৯২, সহীহ)
আর তাদের নিকট সর্বদিক থেকে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা, কিন্তু তারা তথায় মৃত্যু বরণ করবেনা। বরং এরপরেও তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। সুতরাং যারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাাস্তি আস্বাদন করাবেন, আর যদি মু’মিন হয়ে সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুনিয়াতেও প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফির-মুশরিকরা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত ও লাঞ্ছিত হবে।
২. কাফিরদের ধ্বংস ও পরাজিত করে পৃথিবীতে মু’মিনগণ ক্ষমতাসীন থাকবেন।
৩. পানীয় হিসেবে তথায় (জাহান্নামে) থাকবে গলিত পুঁজ।
৪. কাফিররা তথায় মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করবে কিন্তু মৃত্যু বরণ করবে না।
৫. মু’মিনদের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings