Surah Ar Rad Tafseer
Tafseer of Ar-Ra'd : 3
Saheeh International
And it is He who spread the earth and placed therein firmly set mountains and rivers; and from all of the fruits He made therein two mates; He causes the night to cover the day. Indeed in that are signs for a people who give thought.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পরিপূর্ণ ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বিনা খুঁটিতে আকাশমণ্ডলী সুঊচ্চে স্থাপন করে রেখেছেন যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। এটা কি আল্লাহ তা‘আলা র কুদরত ও ক্ষমতার ওপর প্রমাণ বহন করে না? অবশ্যই বহন করে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(خَلَقَ السَّمٰوٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقٰي فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ)
“তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতিরেকে, তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে সুউচ্চ পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (সূরা লুকমান ৩১:১০)
সুতরাং এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা, বড়ত্ব ও মর্যাদা প্রতীয়মান হয়। কেননা, এরূপ খুঁটি বিহীন কোন কিছুকে শূন্যের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তা কেবল মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার দ্বারাই সম্ভব। এখানে تَرَوْنَهَا এর দু‘টো অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথমত, এর খুঁটি রয়েছে কিন্তু আমরা তা দেখতে পাই না। দ্বিতীয়ত হচ্ছে তাতে কোনই খুঁটি নেই। আর এই অর্থটিই কুরআনের আয়াতের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
(وَيُمْسِكُ السَّمَا۬ءَ أَنْ تَقَعَ عَلَي الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِه۪)
“আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পতিত না হয় পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ব্যতীত।” (সূরা হজ্জ্ব ২২:৬৫)
এই আয়াতও প্রমাণ করে আকাশের কোন খুঁটি নেই।
( ثُمَّ اسْتَوٰی عَلَی الْعَرْشِ)
‘অতঃপর তিনি ‘আরশে সমুন্নত হলেন’ আল্লাহ তা‘আলা স্বসত্তায় আরশের উপর রয়েছেন, কিভাবে রয়েছেন তা তিনিই ভাল জানেন, এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা নিষেধ। তবে অবশ্যই প্রত্যেক মু’মিনকে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর রয়েছেন। যেমন
আল্লাহ তা‘আলার অবস্থান সম্পর্কে ইমাম মালেক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
الاستواء معلوم، والكَيْف مجهول، والإِيمان به واجب، والسؤال عنه بدعة
আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর রয়েছেন তা জানা কথা, কিভাবে আছেন তা অজ্ঞাত, এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং কোন প্রশ্ন করা বিদ‘আত। (আযওয়াউল বায়ান ৭/২৯৫) এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফ এর ৫৪ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ)
‘সূর্য ও চন্দ্রকে (তোমাদের কল্যাণে) নিয়োজিত করেছেন’ অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সূর্যের আলো পেয়ে গাছ-পালা, তরুলতা, ফসল-ফলাদি ইত্যাদি জন্মাবে এবং সূর্য আলো দিয়ে দিনকে মানুষের কর্মের উপযোগী করে দিবে। আর চন্দ্রের স্নিগ্ধ আলো মানুষ উপভোগ করবে এবং দিন-তারিখ ও মাস গণনা করবে।
(کُلٌّ یَّجْرِیْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی)
‘প্রত্যেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আবর্তন করে’ এর দুটো অর্থ হতে পারে: প্রথমত: প্রত্যেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলবে বলতে কিয়ামত পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ط ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ)
“আর সূর্য নিজ কক্ষ পথে চলতে থাকে। (স্থির হওয়া সময় পর্যন্ত) এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।” (সূরা ইয়াছিন ৩৬:৩৮)
এখানে স্থির হওয়ার সময় বলতে কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত চন্দ্র ও সূর্য উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে। সূর্য নিজের চক্র এক বছরে এবং চন্দ্র এক মাসে পূর্ণ করে নেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَالْقَمَرَ قَدَّرْنٰهُ مَنَازِلَ)
“আমি চন্দ্রের জন্য নির্ধারণ করেছি বিভিন্ন কক্ষপথ।” (ইয়াসীন ৩৬:৩৯)
এখানে শুধু চন্দ্র ও সূর্যের কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, এ দুটো গ্রহই সর্ববৃহৎ, আর এ দুটোই মানুষের চোখে পড়ে সহজেই। এ দুটো যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা র অধীনস্থ তাহলে আর যে সব ছোট ছোট গ্রহ রয়েছে সেগুলো তো আল্লাহ তা‘আলার হুকুম মেনে চলতে আরো বাধ্য। আর এরা যখন আল্লাহ তা‘আলার হুকুম মেনে চলে তখন এরা মা‘বূদ হতে পারে না। মা‘বূদ তো তিনিই যিনি এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন
(وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرٰتٍم بِأَمْرِه۪)
“আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই আজ্ঞাধীন।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৪)
যেহেতু এরা আল্লাহ তা‘আলার আজ্ঞাধীন তাই এদের ইবাদত বা উপাসনা করা যাবে না। কারণ উপাসনার যোগ্য সেই যে কারো হুকুম মেনে চলে না বরং সে অন্যকে হুকুম করে আর সবাই তাঁর হুকুম মেনে চলে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ)
“তোমরা সূর্যকে সিজদা কর না, চন্দ্রকেও নয়; সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।” (হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩৭)
অনেক লোক অজান্তেই এ চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রের পূজা করে; যেমন নববর্ষের সূর্যকে বরণ করার জন্য সমুদ্রের উপকূলে গমন করে, সেদিন ভাল কিছু খায় ইত্যাদি। সেদিনে সূর্যকে বরণ করে নিলে এবং ভাল কিছু খেলে সারা বছর ভাল যাবে বলে মনে করা হয়। অথচ মানুষের ভাল-মন্দের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই যদি কিছু করতেই হয় তাহলে সূর্যকে বরণ না করে নতুন বছরের শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাওয়া উচিত, তিনি যেন সারা বছর ভালভাবে জীবন-যাপন করার তাওফীক দান করেন এবং বিগত বছরের অপরাধ স্বীকার করে আগামী বছরে তা সংশোধন করে নেয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বেশি বেশি ভাল কাজ করা সেই সাথে সূর্য পূজা-সহ সকল প্রকার শির্ক ও কুসংস্কার থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এ বিষয়ে ইবরাহীম (عليه السلام) থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, ইবরাহীম (عليه السلام) প্রথমে সঠিক মা‘বূদকে না চিনে চন্দ্র ও সূর্যকে মা‘বূদ মনে করেছিলেন কিন্তু সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে সব বর্জন করে সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলার দিকে অভিমুখী হলেন এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা শুরু করলেন। এ সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ৭৬-৭৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(يُدَبِّرُ الْأَمْرَ) ‘তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন’ এর তাফসীর সূরা ইউনুস এর ৩ নং আয়াতে করা হয়েছে।
এতসব নিদর্শন বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল, যাতে করে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনে। কিয়ামত দিবসে তাঁর সাক্ষাৎকে স্বীকার করে ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা ঊর্ধ্বজগতের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে নিম্নজগতের বর্ণনা দিয়েছেন যে, তিনিই জমিনকে বিস্তৃত করেছেন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সহকারে। مَدَّ অর্থ বিস্তৃত করা। অর্থাৎ আকাশ-জমিন মিলিত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আলাদা করে পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ أَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا ط وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَا۬ءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ط أَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ )
“যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩০)
উঁচু ও বিশাল পাহাড় তিনিই ভূ-পৃষ্ঠে স্থাপন করেছেন। নদী-নালা, সমুদ্র ও ঝর্ণার এমন ব্যবস্থাপনা রেখেছেন। যার দ্বারা মানুষ নিজেও উপকৃত হয় এবং ক্ষেত-খামারেও সেচন করে থাকে। এর ফলে জমিনে বিভিন্ন রং, বিভিন্ন স্বাদ ও আকারের ফল-ফলাদি উৎপন্ন হয়। এখানে (زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ) এর দু‘টো অর্থ হতে পারে। প্রথমত এর দ্বারা নর-মাদী দু‘টোই বানিয়েছেন এরকম অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমনটি আধুনিক বিজ্ঞানীরা সত্যায়ন করেছেন। আবার এর দ্বারা বিপরীতমুখী অর্থও গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন টক-মিষ্টি, ঠাণ্ডা-গরম, সুস্বাদু-বিস্বাদ, সাদা-কালো এই অর্থও গ্রহণ করা যেতে পারে।
তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এরা পর্যায়ক্রমে আসা-যাওয়া করছে একটির আগমন ঘটছে এবং অপরটির প্রস্থান। এই সবগুলোই প্রমাণ করছে যে, সারা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন এক আল্লাহ তা‘আলা যিনি অদ্বিতীয় ও অংশীবিহীন। আর এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী ও চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। যদি কেউ এসব বিষয় নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে নিশ্চিত সু-পথ প্রাপ্ত হবে।
قِطَعٌ -(وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ)
অর্থ ভূ-খণ্ড, আর مُتَجَاوِرَاتٌ অর্থ পাশাপাশি, প্রতিবেশি। অর্থাৎ পৃথিবীতে যে ভূ-খণ্ড রয়েছে তা পরস্পর সংলগ্ন, একে অপরের পাশাপাশি ও নিকটবর্তী। তা সত্ত্বেও সর্বত্র একই রকম ফলমূল উৎপন্ন হয় না। কিছু জায়গা আছে যেখান আঙ্গুর হয়, আবার কিছু জায়গা আছে যেখান আঙ্গুর হয় না। এক দেশের খেজুর, ধান ও অন্যান্য ফলাদি আরেক দেশে হয় না। অথচ একটি পৃথিবী, একই আকাশ থেকে একই প্রকার বৃষ্টি হয়। কোন জমি খুবই উর্বর আবার কোন জমি অনুর্বর, আবার কোনটি এমন যাতে কোন ফসলই উৎপন্ন হয় না। এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে আল্লাহ তা‘আলাকে চেনার।
صِنْوَانٌ বলা হয় যার মূল একটি কিন্তু এর শাখা-প্রশাখা অনেকগুলো। যেমন, ডালিম, ডুমুর ইত্যাদি।
(وَغَيْرُ صِنْوَانٍ)
বলা হয় যার একটিই মূল থাকে এবং তাঁর থেকে কোন শাখা-প্রশাখা বের হয় না। যেমন তালগাছ, নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ, সুপারি গাছ ইত্যাদি। সবগুলোর জন্য অর্থাৎ
صِنْوَانٌ ও وَغَيْرُ صِنْوَانٍ
এর জন্য একই পানি থেকে সেচ দেয়া হয় অর্থাৎ বর্ষার পানি এবং একই মাটি থেকে উৎপন্ন। অথচ স্বাদের দিক দিয়ে, ছোট-বড় হওয়ার দিক দিয়ে ফলের মধ্যে বড়ই পার্থক্য রয়েছে। এগুলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই করে থাকেন অন্য কেউ নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আকাশের উচ্চতায় কোন খুঁটি প্রয়োজন হয়নি।
২. সূর্য-চন্দ্র প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ রয়েছে।
৩. মৃত্যুর পর মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে।
৪. পৃথিবীতে যে সমস্ত পাহাড় রয়েছে তা জমিনের জন্য পেরেকস্বরূপ করা হয়েছে।
৫. প্রত্যেক প্রকারের ফল জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান।
৬. একই মাটি থেকে একই পানির সিঞ্চনে বিভিন্ন প্রকারের ফল উৎপন্ন হয়।
৭. সকল কিছুর প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings