Surah Yusuf Tafseer
Tafseer of Yusuf : 64
Saheeh International
He said, "Should I entrust you with him except [under coercion] as I entrusted you with his brother before? But Allah is the best guardian, and He is the most merciful of the merciful."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৫৮-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে ইউসুফ (عليه السلام) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর যে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ইউসুফ (عليه السلام) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবার পর বাদশা যে সাত বছর ভাল ফসল উৎপন্ন হবার স্বপ্ন দেখেছিল সে সাত বছর তিনি সারা মিসরে ফসল উৎপন্ন করলেন এবং যেভাবে পরবর্তী সাত বছরের দুর্ভিক্ষের জন্য জমা রাখা দরকার সেভাবে জমা রাখলেন। এতে বুঝা যায় আধুনিককালের এলএসডি, সিএসডি খাদ্য গুদামজাতের অভিযাত্রা ইউসুফ (عليه السلام) এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। যখন সাত বছর অতিক্রান্ত হয়ে দুর্ভিক্ষের সাত বছর এসে গেল তখন মিসরের সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দূর-দূরান্ত এলাকাসমূহে এই দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ল। ফলে ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর পরিবারেও অনটন দেখা দেয়। এ সময় ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, মিসরের নতুন বাদশা অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু। তিনি স্বল্পমূল্যে এক উট পরিমাণ খাদ্যশস্য অভাবী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করেন। এ খবর শুনে তিনি পুত্রদের বললেন, তোমরা মিসরে গিয়ে খাদ্যশস্য নিয়ে এসো। সেমতে দশ ভাই দশটি উট নিয়ে রওনা হয়ে গেল। বৃদ্ধ পিতার খেদমতে ও বাড়ি দেখাশুনার জন্য ছোট ভাই বিনয়ামীন রয়ে গেল। কেন‘আন থেকে মিসরে রাজধানীর দূরত্ব ছিল প্রায় ২৫০ মাইল। যথা সময়ে দশ ভাই মিসরে উপস্থিত হল। তারা যখন ইউসুফ (عليه السلام) এর নিকট প্রবেশ করল তখন ইউসুফ (عليه السلام) তাদেরকে দেখে চিনে ফেলেন কিন্তু তারা চিনতে পারেনি।
ইউসুফ (عليه السلام) এর কৌশল অবলম্বন ও বিনয়ামীনের মিসর আগমন:
সুদ্দী ও অন্যান্যদের বরাতে ইমাম কুরতুবী ও ইবনু কাসীর বর্ণনা করেন যে, দশ ভাই দরবারে পৌঁছলে তাদেরকে প্রাসাদের ভেতরে ডেকে নিয়ে মেহমানদারী করালেন এবং দোভাষীর মাধ্যমে এমনভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন যেমন অচেনা লোকদের করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া এবং পিতা ইয়া‘কূব ও ছোটভাই বিনয়ামীনের বর্তমান অবস্থা জেনে নেয়া। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ভিন্নভাষী এবং ভিনদেশী। কিভাবে বুঝব যে, তোমরা শত্র“র গুপ্তচর নও? তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আমরা গুপ্তচর নই। আমরা আল্লাহর নাবী ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর সন্তান। তিনি কেন‘আনে বসবাস করেন। অভাবের তাড়নায় তাঁর নির্দেশে সুদূর পথ অতিক্রম করে আপনার কাছে এসেছি আপনার সুনাম-সুখ্যাতি শুনে। যদি আপনি আমাদেরকে সন্দেহ বশে গ্রেফতার করেন অথবা শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন তাহলে আমাদের অতিবৃদ্ধ পিতা-মাতা ও পরিবার না খেয়ে মারা যাবে। (তাফসীর কুরতুবী, ইবনু কাসীর) এ কথা শুনে ইউসুফ (عليه السلام) এর হৃদয় উথলে উঠল এবং অতি কষ্টে তা বুকে চাপা রেখে তাদের পিতার অন্য কোন সন্তান আছে কি না জিজ্ঞেস করলেন। তারা জবাবে বলল, আমরা ১২ ভাই ছিলাম। আমরা দশ ভাই এখানে এসেছি আর বৈমাত্রেয় দু‘ভাই তাদের একজনকে বাঘে ফেয়ে ফেলেছে এবং অপরজনকে সান্ত্বনাস্বরূপ আমাদের পিতা তাঁর কাছে রাখেন।
তখন ইউসুফ (عليه السلام) তাদের সেই ভাইকে আগামী সফরে নিয়ে আসার উৎসাহ দিয়ে বললেন, দেখ না! আমি মাপে পূর্ণ করে দেই এবং উত্তম অতিথিপরায়ণ। তারপর ভয় দেখিয়ে বললেন: এমনকি যদি না নিয়ে আসো তাহলে আগামীতে তোমাদেরকে কোন খাদ্য দেয়া হবে না। তারা ইউসুফ (عليه السلام) এর কথামত তাদের এগারতম ভাইকে নিয়ে আসতে রাজি হল এবং বলল: আমরা এ ব্যাপারে আমাদের পিতাকে উদ্বুদ্ধ করব। তারা যাতে পুনরায় আসে সেজন্য ইউসুফ (عليه السلام) তাঁর কর্মচারীদেরকে বললেন, তাঁর ভাইদের দেয়া পণ্যমূল্য তাদের মালপত্রের মধ্যে তাদের অজান্তে রেখে দাও। এটা তাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলেন এবং আগামীতে আসার জন্য পুঁজি না থাকলে যেন এ পুঁজি নিয়ে আসতে পারে, এজন্য এরূপ করেছেন। তারা বাড়িতে এসে পিতাকে বলল: আগামী দিনের খাদ্য বিনইয়ামীনকে নিয়ে যাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। আগামী সফরে তাকে নিতে পারলে খাদ্য দেবে, অন্যথায় খাদ্য দেবে না। তখন ইয়া‘কূব (عليه السلام) বললেন: ইতোপূর্বে তো ইউসুফের ব্যাপারে এরূপ কথা বলেছিলে, তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে, এতবড় শক্তিশালী দল থাকতে কিভাবে বাঘে খেয়ে ফেলবে? তোমাদের কথায় বিশ্বাস করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, সেরূপ কি আবারো তোমাদের প্রতি বিশ্বাস করব? সুতরাং তোমরা তাকে সংরক্ষণ করার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ তার ওপর ভরসা করতে পারছিনা। আমি আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করছি, তিনি সর্বোত্তম সংরক্ষণকারী।
অতঃপর তারা তাদের মালপত্র খুলে দেখল যে, মালপত্রের মধ্যে তাদের পণ্যমূল্য ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, এ দেখে তারা তাদের ভাইকে নিয়ে যাবার জন্য পিতার কাছে খুব কাকুতি-মিনতি করে বলল: হে আমাদের পিতা! এর চেয়ে আর কী আশা করতে পারি; তারা আমাদের সাথে সদাচরণ করেছে, মেহমানদারী করেছে, এমনকি আমাদের পুঁজিও ফেরত দিয়ে দিয়েছে। অতএব বিনইয়ামীনকে আমাদের সাথে দিন, আমরা এক উট বেশি খাদ্য নিয়ে আসব। এক উটের বেশির কথা বলার কারণ হল প্রত্যেককে এক উট পরিমাণ শস্য দেয়া হতো, এর বেশি দেয়া হতো না।
ইয়া‘কূব (عليه السلام) তাদের কাকুতি মিনতি ও অবস্থার প্রেক্ষাপট বুঝে বিনইয়ামীনকে তাদের সাথে দিতে সম্মত হলেন। তবে শর্ত করে দিলেন, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার নামে অঙ্গীকার করবে যে, অবশ্যই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তবে যদি এমন পরিস্থিতির শিকার হও যে, সকলকে আটক করে নেয়া হয়, বা এমন হয়ে যাও যা থেকে নিষ্কৃতির কোন পথ নেই তাহলে ভিন্ন কথা, ওযর গ্রহণযোগ্য হবে। মিসরে প্রবেশের পূর্বে কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন, তোমরা একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। কারণ তারা সবাই ছিল সুশ্রী ও সুঠাম দেহের অধিকারী, যার ফলে এক সাথে প্রবেশ করলে তাদের ওপর মানুষের বদনজর লাগতে পারে। সুতরাং তিনি তাদেরকে বদনজর থেকে রক্ষার পরামর্শ দিয়ে এ কথা বলেছিলেন। বদনজর লাগা সত্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, العَيْنُ حَقٌّ বদনজর লাগা সত্য। (সহীহ বুখারী হা: ৫৭৪০, সহীহ মুসলিম হা: ২১৮৭)
আমাদের দেশে বদনজর থেকে বাঁচার জন্য লোকেরা শিশুদের বাম কপালে কাল টিপ দেয়, ফসলে যাতে বদনজর না লাগে সেজন্য ভাঙ্গা কালো পাতিলে সাদা গোলাকার দাগ দিয়ে লটকিয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এসকল উপায়ে বদনজর থেকে বাঁচা যায় না বরং এটা করা শির্ক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদনজর থেকে বাঁচার জন্য উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন। যেমন
হাদীসে এসেছে, যখন তোমাদের কোন কিছু ভাল লাগে তখন বলবে: بَارَكَ اللّٰهُ (মিশকাত হা: ১২৮৬, সহীহ)
অনুরূপ
مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ
বলা যায়। (সূরা কাহ্ফ ১৮:৩৯)
যার পক্ষ থেকে নজর লেগেছে তার গোসলের পানি দিয়ে যার গায়ে নজর লেগেছে তার শরীরে ঢেলে দেবে। অনুরূপ নজর লাগলে সূরা নাস ও ফালাক পড়ে ঝাড়-ফুঁক করা যায়।
এসব দিকনির্দেশনার কথা বলে ইয়া‘কূব (عليه السلام) আল্লাহ তা‘আলার ফায়সালার দিকে ফিরে গেলেন এবং তাঁর উপরেই নির্ভর করলেন। কারণ তিনি যে ফায়সালা ও নির্দেশ দেন তা-ই হয়, তাঁর নির্দেশের ব্যতিক্রম কিছু হবার সুযোগ নেই। সবাই তাদের পিতার নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। কিন্তু এরপরেও আল্লাহ তা‘আলার পূর্ব নির্ধারিত তাকদীর কার্যকর হয়ে গেল। বিনয়ামীন চুরির মিথ্যা অপবাদে গ্রেফতার হয়ে যায়। যা ছিল ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর জন্য দ্বিতীয়বার সবচেয়ে বড় আঘাত। অতএব পিতার নির্দেশ পালন করলেও তারা আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীরকে এড়াতে পারেনি। আর সে তাকদীরের ফলেই ইয়া‘কূব (عليه السلام) তার হারানো দু’সন্তানকে একত্রে ফিরে পান। এতে এটা প্রমাণিত হয় না যে, মানুষের কৌশল অবলম্বন করার কারণে আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত ভাগ্যকে রদ করা সম্ভব। এটা ছিল ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর একটা তদবীর মাত্র। তিনি যে কৌশল অবলম্বন করলেন এটাও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শেখানো ছিল, তিনি নিজের থেকে কিছু বলেননি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের বদ নজর লাগা সত্য, তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
২. মানুষের কোন কাজের কারণে আল্লাহ তা‘আলার হুকুম রহিত হবে না। যা সিদ্ধান্ত হয়ে যায় তা হবেই, তবে অমঙ্গল হতে বাঁচার এবং মঙ্গল লাভের চেষ্টা করতে হবে।
৩. মানুষ অসহায়, নিরূপায় ও বাধ্য হয়ে কারো কোন ক্ষতি করে ফেললে তাকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। যেমন ইয়া‘কূব (عليه السلام) ছেলেদেরকে বলেছিলেন যদি তোমরা অসহায় হয়ে পড় তাহলে সে কথা ভিন্ন।
৪. বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীয-কবজ ও শির্কী চিকিৎসা গ্রহণ করা হারাম, বরং শরীয়তসম্মত অনেক ব্যবস্থা রয়েছে; তা গ্রহণ করা উচিত।
৫. সত্য বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত হবেই যদিও দেরীত হয়, যেমন ইউসুফ (عليه السلام) প্রতিষ্ঠিত হলেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings