Surah Yusuf Tafseer
Tafseer of Yusuf : 38
Saheeh International
And I have followed the religion of my fathers, Abraham, Isaac and Jacob. And it was not for us to associate anything with Allah . That is from the favor of Allah upon us and upon the people, but most of the people are not grateful.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩৬-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে ইউসুফ (عليه السلام)-কে কারারুদ্ধ করার পর যে সব ঘটনা ঘটেছে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই উল্লেখ করেছেন, তিনি ইউসুফ (عليه السلام) কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে সাথে ইবাদত ও আচরণ, পরহেযগারী ও সচ্চরিত্রতার দিক থেকে জেলখানার অন্যান্য বন্দীদের চেয়ে স্বতন্ত্র ছিলেন।
ইউসুফ (عليه السلام) এর সাথে আরো দু’জন যুবককেও জেলখানায় বন্দী করা হল। কাতাদাহ বলেন: তাদের একজন ছিল যে বাদশাকে সরবত পান করাতো এবং অন্যজন ছিল রুটি প্রস্তুতকারী (বাবুর্চি)। তারা বাদশাকে বিষযুক্ত খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল। তাই তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হয়। তখনও মামলার তদন্ত চলছিল এবং চূড়ান্ত রায় বাকী ছিল। তারা জেলে এসে ইউসুফ (عليه السلام) এর সততা, বিশ্বস্ততা, পরপকারী ও স্বপ্ন ব্যাখ্যা দানের যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পারে। উক্ত বন্দীদ্বয় যখন আলাদা আলাদা স্বপ্ন দেখল, তখন তারা ইউসুফ (عليه السلام) এর নিকট এল এবং বলল: আমরা আপনাকে সৎকর্মপরায়ণ দেখছি, সুতরাং আপনি আমাদের স্বপ্নের তাৎপর্য বলে দিন। তাদের একজন বলল: আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি (আঙ্গুর) নিংড়ে মদ তৈরি করছি। আর অন্যজন বলল যে, আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার মাথায় রুটি বহন করছি আর পাখি তা থেকে খাচ্ছে। তাদের স্বপ্নের কথা শুনে ইউসুফ (عليه السلام) বললেন: তোমাদের কাছে খাবার আসার আগেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দেব। তবে আমি যে ব্যাখ্যা করব তা কোন জ্যোতিষী বা গণকের মত ধারণা নয় যে, সঠিক ও ভুল উভয়টার সম্ভাবনা থাকতে পারে। বরং আমার ব্যাখ্যা সুদৃঢ় জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে হবে যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাকে প্রদান করা হয়েছে। এতে ভুলের কোন অবকাশ নেই। তারপর তিনি বলেন: আমি স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা করি তা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন কারণ, আমি তাদের পথে চলি না যারা আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে বিশ্বাসী নয়। বরং আমি অনুসরণ করি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর দীন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করি না, তাঁকে একক বলে জানি ও ইবাদত করি। এটাই আমাদের পিতৃপুরুষের দীন। এখানে পিতামহ-প্রপিতামহকেও পিতা বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ তাঁরাও পিতা। আরবিতে দাদাকেও পিতা বলা হয়।
নিজে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের কথা প্রকাশ করার পর দু’ বন্দী সঙ্গীকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন, যে সকল মা‘বূদ সত্তা, গুণ ও সংখ্যার দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন, এক মা‘বূদ অপর মা‘বূদ হতে সকল দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, তারা কারো কোন উপকার-ক্ষতি কিছুই করতে পারে না, এসব গাছের, পাথরের ও অন্যান্য মা‘বূদের ইবাদত করা উত্তম, না যিনি সত্তা, গুণ, সংখ্যা ও সর্বদিক দিয়ে একক অদ্বিতীয় পরাক্রমশালী সেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উত্তম? অবশ্যই এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত উত্তম। কারণ তোমরা যে সকল মা‘বূদের ইবাদত কর, প্রকৃতপক্ষে তারা মা‘বূদ নয়, তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা বিভিন্ন নাম দিয়ে এদেরকে মা‘বূদ বানিয়েছ। যেমন বর্তমানে খাজা গরীবে নেওয়াজ, গাউসুল আযম, পীরানে পীর দস্তগীর, খাজাবাবা ইত্যাদি। তাছাড়া এরা যে মা‘বূদ এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা প্রমাণস্বরূপ কোন কিতাব নাযিল করেননি এবং রাসূলও প্রেরণ করেননি। সুতরাং এক আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইবাদতের হকদার। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের হকদার হতে পারে না। তাই বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনিই আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন, তিনিই কোন বিধান শরীয়ত সিদ্ধ করতে পারেন, তাঁর বিধান সর্বদা কার্যকর থাকবে। তিনি সকলকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই সঠিক দীন, যে দীনের দিকে তোমাদেরকে আমি দাওয়াত দিচ্ছি। এতদসত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত সত্য না জানার কারণে শির্কে লিপ্ত হয়। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّٰهِ إِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ )
“অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্ত্বেও মুশরিক।” (সূরা ইউসুফ ১২:১০৬)
অতঃপর তিনি তাদেরকে তাদের স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা বলে দিলেন। যে ব্যক্তি স্বপ্নে নিজেকে আঙ্গুরের জুস তৈরি করতে দেখেছিল সে জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে এবং পুনরায় সে তার মনিবকে সরাব পান করাবে। আর দ্বিতীয়জন যে স্বপ্ন দেখেছে নিজ মাথার ওপর রুটি বহন করছে তার সঠিক ব্যাখ্যা হল, সে শূলবিদ্ধ হবে অতঃপর পাখি তার মাথার মগজ খাবে। তিনি একথাও বলে দিলেন যে, তোমাদের এ স্বপ্ন বাস্তবে ঘটবে। যেহেতু এ স্বপ্নের তা‘বীর বা ব্যাখ্যা করা হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে বলেন, কোন ব্যক্তি যখন স্বপ্ন দেখে তখন তা তার ওপর লটকানো থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা না হয়। যখনই তা ব্যাখ্যা করা হয় তখনই তা সংঘটিত হয়। (আবূ দাঊদ হা: ৫০২০, ইবনু মাজাহ হা: ৩৯১৪, সহীহ) সুতরাং তোমাদের দু‘জনের ওপর এ স্বপ্ন সংঘটিত হবেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের সকল প্রকার ইবাদতের একমাত্র হকদার হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
২. বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই একমাত্র তাঁর বিধান মেনে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী জীবনের সকল ক্ষেত্রে চলতে হবে।
২. পিতা শব্দ ব্যবহার করে দাদা উদ্দেশ্য নেয়া জায়েয। যেমন বলা হয়েছে, اباؤكم এখানে পিতা দ্বারা বাপ-দাদা সকলেই উদ্দেশ্য।
৩. যখন কোন স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা হয়ে যায় তখন সে স্বপ্নের উভয় সম্ভাবনার সুযোগ থাকে না। বরং ভাল-মন্দের একটি ফায়সালা হয়ে যায়।
৪. বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করা ও সেজন্য চেষ্টা করা আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসার পরিপন্থি নয়। বরং বিপদ থেকে মুক্তির জন্য বৈধ মাধ্যম গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।
৫. শির্কের অসারতা হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়ে মুশরিককে প্রথমেই কালেমা শাহাদাতের দিকে আহ্বান করা আবশ্যক।
৬. প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শ্রোতার মস্তিষ্ক যাচাই করে দাওয়াত দেয়া একটি উত্তম পদ্ধতি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings