Surah Yusuf Tafseer
Tafseer of Yusuf : 3
Saheeh International
We relate to you, [O Muhammad], the best of stories in what We have revealed to you of this Qur'an although you were, before it, among the unaware.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
কোন সূরার নামকরণ করা হয় সে সূরায় উল্লিখিত শব্দ থেকে বা সূরার মূল আলোচ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে অথবা সূরায় বর্ণিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অত্র সূরার মূল আলোচ্য বিষয় ও ঘটনা ইউসুফ (عليه السلام)। তাই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা যথার্থ হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ আরয করলেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি আমাদের কাছে কোন কাহিনী বা ঘটনা বর্ণনা করতেন তবে খুবই ভাল হত। তখন উক্ত সূরার ৩ নং আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, কিছুকাল কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সামনে আয়াতসমূহ পাঠ করলেন। তারা বলল: ‘যদি আমাদের সামনে কোন ঘটনার বর্ণনা দিতেন!’ তখন আল্লাহ তা‘আলা
(الر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ....لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ)
পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। (ইবনু কাসীর ৪/৩৭৬, তাফসীর তাবারী ১২/৯০, আসবাবুন নুযূল পৃ. ২২৬, মুসতাদরেক হাকেম ২/৩৪৫, সনদ সহীহ)
সত্য ও শেষ নাবী জেনেও কপট ইয়াহূদীরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পদে পদে কষ্ট দিত এবং বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার চেষ্টা করত। তাদের কাজই ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা এবং তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা। এ সময় মক্কায় কোন আহলে কিতাব বসবাস করত না এবং মক্কার লোকেরা ইউসুফ (عليه السلام) বা অন্য নাবীদের সম্পর্কে কিছু জানতও না। ফলে মদীনার কুচক্রী ইয়াহূদীদের একটি দল মক্কায় এসে একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করল যে, বলুন দেখি, কোন নাবী শামে ছিলেন। অতঃপর তার ছেলেকে সেখান থেকে মিসরে বহিষ্কার করা হয়। তাতে ঐ নাবী কেঁদে অন্ধ হয়ে যান? (এটি বানোয়াট কথা। কেননা কেবল কেঁদে কারো চোখ অন্ধ হয় না এবং এটি নাবীদের মর্যাদার খেলাফ)। একথার জবাবে অতঃপর সূরা ইউসুফ সম্পূর্ণ একত্রে নাযিল হয়। (কুরতুবী, ইবনু জারীর হা: ১৮৭৮৬)
১-৩ নং আয়াতের তাফসীর:
الر - (আলিফ-লাম-রা) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ সম্পর্কে পূর্বে সূরা বাক্বারার প্রথম আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। এসব অক্ষরের প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এ কিতাবের (কুরআনের) আয়াতগুলোর অর্থ, ব্যাখ্যা, হালাল-হারাম, দণ্ডবিধি ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট। এতে কোন অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থবোধক কিছু নেই।
আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। তার কারণ সাথে সাথে বলে দিয়েছেন, তা হল যাতে মানুষ বুঝতে পারে। আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করার উদ্দেশ্যই হল, মানুষকে হিদায়াত ও সঠিক পথ-প্রদর্শন করা। আর উক্ত উদ্দেশ্য তখনই অর্জন হবে, যখন সেই গ্রন্থ এমন ভাষায় হবে, যে ভাষা সহজে সকলের বোধগম্য হয়। এ জন্যই প্রত্যেক আসমানী গ্রন্থ সে জাতির ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে যে জাতির হিদায়াতের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীম যেহেতু সর্বপ্রথম আরববাসীদেরকে লক্ষ্য করে অবতীর্ণ করা হয়েছে সেহেতু তা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাছাড়া আরবি ভাষা সাহিত্য-শৈলী, অলংকার, অলৌকিকতা ও অর্থ প্রকাশের দিক থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। এ ভাষায় নিয়ম ও গঠন পদ্ধতি অপরিবর্তনীয়। এ ভাষা সকলেই সহজে বুঝতে পারে এবং অল্প শব্দে অনেক অর্থ প্রকাশ করে থাকে। তাছাড়াও অন্যতম একটি কারণ হল ইউসুফ (عليه السلام) এর কাহিনী যারা জানতে চেয়েছিল তারা ছিল আরবীয় ইয়াহূদী এবং কুরাইশ নেতৃবৃন্দ। তাই তাদের বোধগম্য হিসেবে আরবি ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন ভাষাগর্বী আরবরা কুরআনের অপূর্ব ভাষাশৈলীর কাছে হার মেনেছে, অন্যদিকে তেমনি কিতাবধারী ইয়াহূদী-খ্রিস্টানরা কুরআনের বিষয়বস্তু ও বক্তব্যসমূহের সত্যতা ও সারবত্তা উপলদ্ধি করে নিশ্চুপ হয়েছে।
সুন্দরতম কাহিনী:
প্রথমত: নাবীগণের মধ্যে ইউসুফ (عليه السلام) হলেন একমাত্র নাবী, যার সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত একটি সূরায় ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। সূরা ইউসুফের ১১১টি আয়াতের মধ্যে ৩-১০১ নং আয়াত পর্যন্ত ইউসুফ (عليه السلام)-এর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইউসুফ (عليه السلام) সম্পর্কে বলেছেন,
الْكَرِيمُ ابْنُ الْكَرِيمِ ابْنِ الْكَرِيمِ ابْنِ الْكَرِيمِ يُوسُفُ بْنُ يَعْقُوبَ بْنِ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِمْ
‘নিশ্চয়ই মর্যাদাবানের পুত্র মর্যাদাবান, তাঁর পুত্র মর্যাদাবান, তাঁর পুত্র মর্যাদাবান। তাঁরা হলেন ইবরাহীমের পুত্র ইসহাক, তাঁর পুত্র ইয়া‘কূব ও তাঁর পুত্র ইউসুফ।’ (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৮২) আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উত্তম ঘটনা শুনাবেন বলে ইউসুফ (عليه السلام) এর কাহিনী বর্ণনা শুরু করেছেন। উক্ত নাবীর ঘটনাবলী একত্রে সাজিয়ে একটি সূরাতে সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে বিধায় সম্ভবতঃ সে কারণে এটিকে (اَحْسَنَ الْقَصَصِ) ‘উত্তম কাহিনী’ বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: এর মধ্যে অতীত ইতিহাসের বাস্তব বর্ণনা এবং হিংসা ও শত্র“তার পরিণতি, আল্লাহ তা‘আলার সাহায্যের আজব পদ্ধতি, মন্দ-প্রবণ মনের পাপাচারের কুফল এবং মানুষের বিভিন্ন অবস্থার সুন্দর বর্ণনা ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: অন্যান্য নাবীদের কাহিনীতে প্রধানতঃ উম্মতের অবাধ্যতা ও পরিণামে তাদের ওপর আপতিত গযবের কাহিনী এবং অন্যান্য উপদেশ ও হেকমতসমূহ প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু ইউসুফ (عليه السلام) এর কাহিনীতে রয়েছে দুনিয়ার তিক্ত বাস্তবতা, অপরাধমুক্ত জীবন পরিচালনা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় আস্থার এক অতুলনীয় অনুপম উদ্দীপনা।
আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব ঘটনার কিছুই জানতেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ওয়াহীর মাধ্যমে এসব ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন। যা প্রমাণ করে যে, কুরআন কোন মানব রচিত গ্রন্থ নয় বরং এটা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত কিতাব। আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন না, এ সম্পর্কে অত্র সূরার শেষের দিকে আলোচনা রয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করার অন্যতম হেকমত হল সহজে বুঝা।
২. ইউসুফ (عليه السلام) এর কাহিনীকে কুরআনে উত্তম কাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings