Surah Yusuf Tafseer
Tafseer of Yusuf : 22
Saheeh International
And when Joseph reached maturity, We gave him judgment and knowledge. And thus We reward the doers of good.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:
সিরিয়া থেকে মিসরে যাওয়ার পথে একটি ব্যবসায়ী কাফেলা পথ ভুল করে জঙ্গলের মধ্যে উক্ত পরিত্যক্ত কূপের নিকটে এসে তাঁবু ফেলে। (কুরতুবী, আল বিদায়াহ ১/১৮৯) তারা পানির সন্ধানে কূপে বালতি নিক্ষেপ করল। وَارِدٌ বলা হয় কাফেলার সে ব্যক্তিদেরকে যারা যাত্রীদের পানি ইত্যাদি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে কাফেলার আগে আগে চলে। বালতির রশি ধরে ইউসুফ (عليه السلام) উপরে উঠে এলেন। কাফেলার সবাই এরূপ এক সুদর্শন বালক দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠল যে, কী সুখবর! এ যে এক গোলাম বা সুদর্শন বালক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজের রাতে ইউসুফ (عليه السلام) কে দেখে বলেছিলেন:
قَدْ اُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ
তাঁকে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৪৯)
বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও সবকিছুই ছিল আল্লাহর পূর্ব পরিকল্পিত। ইউসুফ (عليه السلام) কে উদ্ধার করার জন্যই আল্লাহ উক্ত কাফেলাকে তারেদ ভুলক্রমে এখানে এনেছেন। আবূ বকর ইবনু আইয়াশ বলেন: ইউসুফ (عليه السلام) তিনদিন কূপের মধ্যে ছিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
بِضَاعَةً অর্থ বাণিজ্যিক পণ্য, وَأَسَرُّوْهُ অর্থ তারা তাকে লুকিয়ে ফেলল, অর্থাৎ বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে ইউসুফ (عليه السلام) কে তারা লুকিয়ে ফেলল। কিন্তু কারা লুকিয়ে ফেলল? এ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায় (১) মুজাহিদ, সুদ্দী ও ইবনু জারীর বলেন, পানি সংগ্রহকারীরা লুকিয়ে রেখেছিল যাতে কাফেলার সবাই জানতে না পারে, কারণ জানতে পারলে সবাই শরীক দাবী করবে। কাফেলার লোক জিজ্ঞেস করলে বলব: কূপের মালিক আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে যাতে মিসরে নিয়ে বিক্রি করে দিই। (২) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক লুকিয়ে রেখেছিল আর ইউসুফ (عليه السلام) নিজেও তার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন এ ভয়ে যে, হয়তো তাকে হত্যা করে ফেলবে। ইমাম শাওকানী বলেন: উত্তম কথা হল কাফেলার লোকেরা গোপন রেখেছিল যাতে স্বজনরা এসে খোঁজাখুঁজি না করে। কারণ যেহেতু কূপে পড়েছিল সেহেতু নিশ্চয়ই এ এলাকার হবে। সুতরাং তারা তাঁকে পেয়ে সাথে সাথে গোপন করে নিল যাতে কাফেলার সমস্ত লোক শরীক দাবী করে না বসে অথবা তাঁর আত্মীয়-স্বজন খবর পেয়ে যেন তাঁকে ফিরিয়ে নিতে না আসে।
ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা কাফেলার কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে বলল: ছেলেটি আমাদের পলাতক গোলাম। তোমরা ওকে আমাদের কাছ থেকে কিনে নিতে পার। কাফেলা নামে মাত্র কয়েকটি দিরহাম দিয়ে সস্তা মূল্যে ইউসুফকে কিনে নিল। যেহেতু ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা বলেছে এটা আমাদের পালিয়ে আসা গোলাম, তাই কাফেলা কিনার পর তাদের থেকে একটি লিখিত নেয় যাতে করে কেউ দাবী না করতে পারে। এর দ্বারা ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইদের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। এক যাতে ইউসুফ তার বাপ-ভাইদের নাম করে পুনরায় বাড়ি ফিরে আসার সুযোগ না পায়। দুই যাতে ইউসুফ দেশান্তরী হয়ে যায় ও অন্যের ক্রীতদাস হয়ে জীবন যাপন করে। কত নিষ্ঠুর হলে ভাইয়েরা ভায়ের প্রতি এরূপ আচরণ করতে পারে, কল্পনা করা যায় কি!
মিসরের অর্থমন্ত্রীর গৃহে ইউসুফ (عليه السلام):
ইউসুফ (عليه السلام) কে তার ভাইদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে নিয়ে ব্যবসারী কাফেলা তাকে বিক্রির জন্য মিসরের বাজারে উপস্থিত করল। বালক ইউসুফের রূপ-সৌন্দর্য দেখে বিত্তশালীরা হাটে রীতিমত দামের প্রতিযোগিতা শুরু করল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এ মর্যাদাবান ব্যক্তিকে মর্যাদার স্থানে সমুন্নত করবেন। তাই ইউসুফের প্রতি মিসরের অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিপাত করালেন। সকল খরিদদারকে ডিঙিয়ে মিসরের তৎকালীন অর্থ ও রাজস্বমন্ত্রী ক্বিৎফীর (قطفير) তাকে বহু মূল্য দিয়ে খরিদ করে নিলেন। ক্বিৎফীর ছিলেন নিঃসন্তান।
মিসরের অর্থমন্ত্রীর উপাধি ছিল ‘আযীয’ বা ‘আযীযে মিসর’। ইউসুফকে ক্রয় করে এনে তিনি তাকে স্বীয় স্ত্রীর হাতে অর্পণ করলেন এবং বললেন, একে উত্তমভাবে লালন-পালন কর। এর জন্য উত্তম থাকার উত্তম ব্যবস্থা কর। ভবিষ্যতে আমাদের কল্যাণে আসতে পারে অথবা আমরা সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে নেব। যেহেতু তাদের কোন সন্তান ছিল না। সে সময়ে মিসরের বাদশা ছিল রাইয়ান বিন অলীদ এবং আযীযে মিসর (মিসরের মন্ত্রী) যিনি ইউসুফ (عليه السلام) কে ক্রয় করেন তার স্ত্রীর নাম কেউ বলে রাঈল, আবার কেউ বলে যুলাইখা। তবে যুলাইখা নামেই প্রসিদ্ধ। রাজ প্রাসাদে ইউসুফ (عليه السلام) এর মিসরীয় জীবন শুরু হল।
এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা ইউসুফ (عليه السلام)-কে মিসরের ভূখণ্ডে একটি উৎকৃষ্ট বাসস্থান প্রদান করলেন, যেমন জালিম ভাই ও কূপ থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই তাঁর কার্য সম্পাদন করলেন এবং তাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিলেন। অতঃপর যখন তিনি পূর্ণ বয়সে উপনীত হলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে নবুওয়াত দান করলেন এবং তাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিলেন। সৎকর্মপরায়ণদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাখে আল্লাহ তা‘আলা মারে কে? ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা তাঁকে মারার চেষ্টা করলেও আল্লাহ তা‘আলা রাখবেন বিধায় মারা সম্ভব হয়নি।
২. ইউসুফ (عليه السلام) কে পৃথিবীর মানুষের অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে।
৩. যারা আল্লাহ পথে অবিচল থাকে আল্লাহ এভাবেই তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিয়ে থাকেন।
৪. যে যুবক আল্লাহর পথে জীবনকে পরিচালনা করে আল্লাহ তাকে ইলম ও হিকমত দান করেন।
৫. স্বাধীন ব্যক্তিকে ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings