Surah Yusuf Tafseer
Tafseer of Yusuf : 100
Saheeh International
And he raised his parents upon the throne, and they bowed to him in prostration. And he said, "O my father, this is the explanation of my vision of before. My Lord has made it reality. And He was certainly good to me when He took me out of prison and brought you [here] from bedouin life after Satan had induced [estrangement] between me and my brothers. Indeed, my Lord is Subtle in what He wills. Indeed, it is He who is the Knowing, the Wise.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮৮-১০১ নং আয়াতের তাফসী:
অতঃপর তৃতীয় দফায় তারা তাদের পিতার নির্দেশক্রমে মিসরে আগমন করল। আগমন করে ইউসুফ (عليه السلام) কে তাদের দুরবস্থার কথা অবগত করণার্থে বলল: হে আযীয, আমাদের খাদ্যাভাবে আমাদের পরিবার বিপন্ন হয়ে গেছে, তাছাড়া আমরা যে অর্থ কড়ি নিয়ে এসেছি তা অতি সামান্য, সুতরাং আমাদের অর্থাভাবের কারণে মালামাল কম না দিয়ে পূর্ণমাত্রায় দেবেন এবং আরো কিছু বেশি দেবেন। কেউ কেউ বলেছেন, (وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَا) অর্থাৎ বিনয়ামীনকে আমাদের সাথে যেতে দিয়ে অনুগ্রহ করুন। যখন তারা দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরল, এবং পিতার বার্ধক্য, দুর্বলতা ও পুত্র বিচ্ছেদের আঘাতের কথা বর্ণনা করল তখন ইউসুফ (عليه السلام) এর হৃদয় বিগলিত হয়ে গেল। অশ্র“সিক্ত ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বললেন: তোমরা ইউসুফ ও তাঁর সহোদর ভাই-এর সাথে যে ব্যবহার করেছিলে তা কি তোমাদের স্মরণ আছে? তিনি ভাইদের অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার সাথে সাথে উদারতা দেখিয়ে বললেন, তোমরা তখন অজ্ঞ ছিলে। মূলত আল্লাহ তা‘আলার পাপী বান্দারা অজ্ঞই বটে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ثُمَّ اِنَّ رَبَّکَ لِلَّذِیْنَ عَمِلُوا السُّوْ۬ئَ بِجَھَالَةٍ ثُمَّ تَابُوْا مِنْۭ بَعْدِ ذٰلِکَ وَاَصْلَحُوْٓا اِنَّ رَبَّکَ مِنْۭ بَعْدِھَا لَغَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ)
“যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে তারা পরে তাওবাহ করে ও নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় তাদের জন্য তোমার প্রতিপালক অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা নাহল ১৬:১১৯)
ইউসুফ (عليه السلام) এর মুখ থেকে নিজের বাল্যকালের সকল ঘটনা তুলে ধরলে তারা ইউসুফ (عليه السلام)-কে চিনে ফেলে এবং বলল যে, তুমি কি তাহলে ইউসুফ? উত্তরে তিনি তাঁর পরিচয় প্রকাশ করলেন। সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ, ধৈর্য ও সংযমের শুভ পরিণামের কথা বর্ণনা করে বললেন: তোমরা আমাকে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্রের কোন প্রকার ত্র“টি করোনি, কিন্তু এটা আল্লাহ তা‘আলার দয়া যে, তিনি আমাকে শুধু কূপ থেকে পরিত্রাণ দেননি বরং মিসরের রাজত্বও দান করেছেন। তখন ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা সকলেই তাদের ভুল স্বীকার করল। ইউসুফও (عليه السلام) তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছেও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, আর বললেন: আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, কোন নিন্দা ও ভর্ৎসনা করা হবে না। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার কাফির ও যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এমনকি তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল তাদেরকে একথাই বলে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
তাদেরকে ইউসুফ (عليه السلام) একটি জামা দিয়ে বললেন: এটা নিয়ে যাও, এটা আমার পিতার মুখমণ্ডলে রাখলেই চোখের জ্যোতি ফিরে আসবে এবং পরিবারের সকলকে মিসরে দাওয়াত দিলেন। এ জামা আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام) কে দিয়েছিলেন যখন নমরুদ তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করে। ইবরাহীম (عليه السلام) ইসহাককে প্রদান করে, তিনি ইয়া‘কূব (عليه السلام) কে প্রদান করেন। ইয়া‘কূব (عليه السلام) ইউসুফ (عليه السلام) কে পড়িয়ে দেন যাতে কোন প্রকার বদনজর না লাগে। (কুরতুবী) উক্ত জামা নিয়ে মিসর থেকে কাফেলা রওনা হল এবং ওদিকে আল্লাহ তা‘আলা র পক্ষ থেকে ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর কাছে মু‘জিযাহস্বরূপ ইউসুফ (عليه السلام) এর সুগন্ধি আসতে লাগল। তাই তিনি বললেন: আমি ইউসুফের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। তখন পরিবারের লোকেরা বলল: আপনি এখনো সে পুরাতন ভ্রষ্টতার মাঝেই আছেন। অর্থাৎ ইউসুফ (عليه السلام) কে হারিয়ে ইয়া‘কূব (عليه السلام) মাঝে মাঝেই এরূপ কথা বলতেন যে, আমার মনে হয় ইউসুফ (عليه السلام) বেঁচে আছে, আমি তার সুঘ্রাণ পাচ্ছি।
অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা জামাটি নিয়ে এসে ইয়া‘কূব (عليه السلام) এর মুখে রাখল আল্লাহ তা‘আলার রহমতে চোখের দৃষ্টি ফিরে এল। ইয়া‘কূব (عليه السلام) বললেন: ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আল্লাহর নিকট হতে যা জানি তোমরা তা জান না?’ অর্থাৎ আমি ওয়াহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইউসুফ (عليه السلام) বেঁচে আছে, তোমাদের কাছে তো ওয়াহী আসে না তাই তোমরা আমার মত জানো না। তখন ইউসুফ (عليه السلام) এর ভাইয়েরা পিতার নিকটও নিজেদের অপরাধ স্বীকার করল এবং তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আবেদন করল। ইয়া‘কূব (عليه السلام) অচিরেই ক্ষমা প্রার্থনা করবেন বলে ওয়াদা দিলেন। উদ্দেশ্য হল রাতের শেষ প্রহরে যখন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন, সে সময়টি দু‘আ কবূলের সময়। তাছাড়া এত বড় অপরাধ করেছে সে জন্য চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থনা না করে অচিরেই ক্ষমা প্রার্থনা করবেন বলে ওয়াদা দিয়েছেন।
অতঃপর তিনি তাঁর ছেলেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তারা সকলে ইউসুফ (عليه السلام)-এর উদ্দেশ্যে মিসরে রওনা করলেন, ইউসুফ (عليه السلام) শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে শান্তির অভিবাদন জানিয়ে নিজের কাছে স্থান দিলেন। এমনকি তিনি তাঁর পিতা-মাতাকে রাজার যে আসন সেখানে বসালেন এবং পিতা-মাতা ও সব ভাই ইউসুফ (عليه السلام) এর সম্মানার্থে সিজদায় পড়ে গেলেন।
এখানে সিজদা করা দ্বারা এমনটি মনে করা যাবে না যে, যেহেতু ইউসুফ (عليه السلام) কে তাঁর ভাইয়েরা সিজদা করেছে সেহেতু মানুষকে সিজদা করা যাবে। অতএব কোন মাজারে বা কবরে সিজদা করা কিংবা উচ্চ মর্যাদাস¤পন্ন কোন ব্যক্তিকে সম্মানার্থে সিজদা করা বৈধ। না, এরূপ বৈধ হবে না। কারণ এই সম্মানসূচক সিজদা ইয়া‘কূব (عليه السلام)-এর শরীয়তে বৈধ ছিল কিন্তু শরীয়তে মুহাম্মাদীতে তা হারাম করে দেয়া হয়েছে।
মুআয বিন যাবাল (রাঃ) শাম থেকে ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সিজদা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন একি মুআয! মুআয (রাঃ) বললেন: আমি শামে গিয়ে দেখলাম, সে দেশের লোকজন তাদের যাজক ও পাদ্রীদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে চাইলাম যে, আমরাও আপনাকে সিজদা করব। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খবরদার! তা করো না। কারণ আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করতে আদেশ করতাম তাহলে মহিলাদেরকে বলতাম, তোমরা তোমাদের স্বামীদেরকে সিজদা কর। (ইবনু মাযাহ হা: ১৮৫৩, ইবনু হিববান হা: ৪১৭১, সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ১২০৩) অতএব কোন বস্তু বা ব্যক্তিকে সিজদা করা সম্পূর্ণ শির্ক। সিজদা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّاَنَّ الْمَسٰجِدَ لِلہِ فَلَا تَدْعُوْا مَعَ اللہِ اَحَدًا)
“এবং নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহ (সমস্ত ইবাদত) একমাত্র আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না।” (সূরা জিন ৭২:১৮) এ সিজদাই ছিল ইউসুফ (عليه السلام) এর সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা আল্লাহ তা‘আলা এতদিন পর বাস্তবে পরিণত করেছেন এবং তাদের বিচ্ছিন্নতার পর পুনরায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে একত্রিত করে দিয়েছেন এটা ছিল আল্লাহ তা‘আলা র অনুগ্রহ।
(مِّنَ الْبَدْوِ) মিসরের মত সভ্য এলাকার তুলনায় কেন‘আন একটি মরুভূমির মত এলাকা, তাই তিনি بدو (মরু অঞ্চল) শব্দ ব্যবহার করলেন।
অতঃপর ইউসুফ (عليه السلام) আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করলেন এবং তিনি নিজের জন্য দু‘আ করলেন যাতে তিনি মুসলিম থাকা অবস্থায় ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন এবং তাকে যেন আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা অপরাধ করে তারা মূলত অজ্ঞতাবশতই করে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও হয় কিন্তু তা খুবই বিরল।
২. কেউ মন্দ ব্যবহার করলেও তাঁর সাথে যতদূর সম্ভব ভাল ব্যবহার করতে হবে। যেমন ইউসুফ (عليه السلام) তাঁর ভাইদের ব্যাপারে করেছিলেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন ফেরেশতা, জিন, ইনসান ও বস্তুকে সিজদা করা ইসলামী শরীয়তে জায়েয নেই, বরং বড় শির্ক।
৪. নিজের জন্য দু‘আ করা উচিত যাতে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করতে পারে ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings