Surah Hud Tafseer
Tafseer of Hud : 72
Saheeh International
She said, "Woe to me! Shall I give birth while I am an old woman and this, my husband, is an old man? Indeed, this is an amazing thing!"
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৬৯-৮৩ নং আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়::
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام)-কে সন্তানের সুসংবাদ দান এবং লূত (عليه السلام) ও তাঁর সম্প্রদায়ের অপকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা প্রেরণ করলেন লূত (عليه السلام)-এর অবাধ্য সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য। ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করার যাত্রা পথে ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নিকট উঠে গেলেন তাঁকে সু-সংবাদ দেয়ার জন্য। এ সুসংবাদটা ছিল পুত্র ইসহাক ও ইয়াকুবের সুসংবাদ। যেমন অত্র সূরার ৭১ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। ইবরাহীম (عليه السلام) জানতেন না এরা ফেরেশতা। তারা (ফেরেশতারা) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নিকট গিয়ে সালাম দিলেন এবং ইবরাহীম (عليه السلام)ও তাদের সালামের উত্তর দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইবরাহীম (عليه السلام) তাদের জন্য একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসলেন। এতে বুঝা যায় ইবরাহীম (عليه السلام) বড়ই মেহমানপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি তাদেরকে মানুষ মনে করে এ আয়োজন করেছিলেন। যদি জানতেন এরা আল্লাহ তা‘আলার ফেরেশতা তাহলে তিনি এ ব্যবস্থা করতেন না। এখান থেকেও বুঝা যাচ্ছে নাবীরা গায়েব জানেন না। আরো বুঝা যায় মেহমানের যথাসম্ভব সম্মান করা উচিত। মেহমানের কদর করাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। যখন ইবরাহীম (عليه السلام) খাবারের আয়োজন করার পর দেখলেন যে, তারা (ফেরেশতারা) সে দিকে হাত দিচ্ছে না অর্থাৎ সেখান থেকে তারা (ফেরেশতারা) খাচ্ছে না, তখন ইবরাহীম (عليه السلام) তাদেরকে ভয় পাচ্ছিলেন। বলা হয় তাদের নিকট এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, কারো বাড়িতে আগত মেহমান যদি মেহমানি গ্রহণ না করে তাহলে বুঝা যাবে যে, আগত মেহমান কোন ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি। সূরা যারিয়ার ২৬-২৭ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে তাদের নিকট খাবার দেয়ার পর যখন দেখছেন তারা খাচ্ছে না, তখন তিনি বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন? সূরা হিজরের ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে আমরা আপনাদের আগমনে শংকিত। এমতাবস্থায় ফেরেশতারা ইবরাহীম (عليه السلام) কে অভয় দিয়ে বললেন: আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আল্লাহ তা‘আলার ফেরেশতা, আমরা অভিশপ্ত সম্প্রদায় লূত (عليه السلام)-এর জাতিকে শাস্তি দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি। তখন সারা (আলাইহাস সালাম) তথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি এই অভিশপ্ত জাতির ধ্বংসের কথা শুনে হাসলেন। কেউ কেউ বলেন, তাকে যে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের সু-সংবাদ দেয়া হয়েছে এজন্য তিনি হাসলেন।
ফেরেশতারা ইবরাহীম (عليه السلام)-এর স্ত্রী সারাকে পুত্র ইসহাক (عليه السلام)-এর সুসংবাদ দিলেন, এবং ইসহাকের ঘরে ইয়াকুব হবে এ সুসংবাদও দিলেন। তখন সারা (عليه السلام) বললেন যে, আমি এবং আমার স্বামী আমরা তো উভয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন সন্তান প্রসব করা তো একটা আশ্চর্যজনক বিষয়। আর এটাতো অসম্ভব বিষয়; যা পৃথিবীর বুকে বিরল। সূরা যারিয়াতের ২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে সারা বলল: আমি বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা। তাদের কথার জবাবে ফেরেশতারা বলল, আপনারা কি আল্লাহ তা‘আলার কাজের ব্যাপারে বিস্ময়বোধ করছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট এটা কোনই কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি শুধু বলেন, হও তাই হয়ে যায়। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّمَآ أَمْرُه۫ٓ إِذَآ أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَّقُوْلَ لَه۫ كُنْ فَيَكُوْنُ)
“বস্তুতঃ তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন, তখন তিনি তাকে বলেনঃ “হও”, অমনি তা হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসীন৩৬:৮২) সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার কাজে আশ্চর্য হওয়ার কোনই কারণ নেই।
(أَهْلَ الْبَيْتِ) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর স্ত্রীকে এখানে ফেরেশতারা আহলে বাইত বলে সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্য বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে ১. স্ত্রী সর্বপ্রথম আহলে বাইতের অন্তর্ভ্ক্তু। ২. আহলে বাইতের জন্য বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করা ঠিক। যেমন সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পবিত্র স্ত্রীগণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন।
মেহমানরূপে আগত ফেরেশ্তাদের পরিচয় পাওয়ার পর ইবরাহীম (عليه السلام)-এর ভয় কেটে গেল। ভয় কেটে যাওয়ার পর ফেরেশতাদের সাথে লূত (عليه السلام)-এর সম্প্রদায়ের ধ্বংস সম্পর্কে কথা কাটাকাটি করতে লাগলেন এবং বললেন যে, আপনারা যে সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন সেখানে তো আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নাবী লূত (عليه السلام) রয়েছেন, এর উত্তরে ফেরেশতারা যা বললেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قَالَ إِنَّ فِيْهَا لُوْطًا ط قَالُوْا نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَنْ فِيْهَا ز لَنُنَجِّيَنَّه۫ وَأَهْلَه۫ٓ إِلَّا امْرَأَتَه۫ ز كَانَتْ مِنَ الْغٰبِرِيْنَ)
“ইবরাহীম বলল: ‘এ জনপদে তো লূত রয়েছে।’ তারা বলল: ‘সেথায় কারা আছে, তা আমরা ভাল করেই জানি, আমরা লূতকে ও তার পরিজনদেরকে অবশ্যই রক্ষা করব, তার স্ত্রীকে ছাড়া; সে তো পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’’ (সূরা আনকাবুত ২৯:৩২)
ইবরাহীম (عليه السلام)-এর এরূপ কথা বলার কারণ ছিল যে, তিনি ছিলেন নরম হৃদয়ের অধিকারী যার ফলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের ধ্বংসটা সহ্য করতে পারছিলেন না।
তখন ফেরেশতারা ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কথা শুনে বললেন: এখন এসব কথা বলে কোন লাভ নেই। কারণ তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তাদের ওপর এমন শাস্তি আসছে যে, সে শাস্তি ফিরাবার মত কেউ নেই। অতএব এখন আর তর্ক-বিতর্ক করে কোন লাভ নেই।
অতঃপর যখন ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর নিকট উপস্থিত হল তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তায় মগ্ন হলেন, আর তাঁর হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং বললেন যে, আজকের দিনটি বড়ই কঠিন। কারণ তাঁর সম্প্রদায় যখনই কোন সুন্দর-সুদর্শন যুবককে দেখত তখনই তারা তার সাথে অপকর্মে লিপ্ত হতে চাইত। আর এ ফেরেশতারা সুদর্শন যুবকের বেশ ধরে আগমন করেছেন। তিনিও জানতেন যে, আগত যুবকেরা মানুষ নয় বরং ফেরেশতা। যার ফলে তিনি তাদের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা (এসব সুদর্শন যুবকদের) ফেরেশতাদের আগমনের কথা জানতে পারল তখন তারা তাদের সাথে অপকর্ম করার জন্য আনন্দে আত্মহারা হয়ে দ্রুত ছুটে আসল। আর তাদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল। যাতে তাদের (ফেরেশতা) সাথে তাদের মন্দ কামনা চরিতার্থ করতে পারে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ رَاوَدُوْھُ عَنْ ضَیْفِھ۪ فَطَمَسْنَآ اَعْیُنَھُمْ فَذُوْقُوْا عَذَابِیْ وَنُذُرِ)
“তারা মেহমানদের জন্য লূতকে ফুসলিয়েছিল, তখন আমি তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম (এবং বললামঃ) আস্বাদন কর আমার আযাব এবং সতর্কবাণীর পরিণাম!” (সূরা কমার ৫৪:৩৭) তখন লূত (عليه السلام) তাদের এ অবস্থা দেখে বললেন যে, যদি তোমাদের উদ্দেশ্য যৌন চাহিদা পূরণ করাই হয়ে থাকে তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে তাদেরকে নিয়ে যাও এবং বিবাহের মাধ্যমে তাদের সাথে যৌন চাহিদা পূরণ কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর হবে।
কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেছেন: লূত (عليه السلام) আমার কন্যা বলতে সমগ্র মহিলাদেরকে বুঝিয়েছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর আর আমাকে আমার মেহমানের সম্মুখে অপমানিত কর না। লূত (عليه السلام)-এর কথার উত্তরে তারা বলল যে, আমাদের মহিলাদের কোনই প্রয়োজন নেই আর আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনি ভাল করেই জানেন। তাদের এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, বৈধ ও স্বাভাবিক নিয়মকে তারা অস্বীকার করে দিল এবং অস্বাভাবিক কর্ম ও নির্লজ্জতার ওপর অটল থাকল। তাদের এ পরিস্থিতি দেখে লূত (عليه السلام) আফসোস করে বললেন যে, যদি আমার তোমাদের ওপর কোন প্রভাব থাকত তাহলে আজ আমাকে মেহমানদের জন্য এই অস্থিরতার শিকার ও অপমানিত হতে হত না। বরং আমি তোমাদেরকে প্রতিহত করতাম।
ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা স্বচক্ষে দেখার পর বলল: হে লূত (عليه السلام)! আপনি নিশ্চিত থাকুন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত ফেরেশতা তারা আমাদের কাছে আসবে তো দূরের কথা আপনার কাছেও পৌঁছতে পারবে না। আপনি রাত্রের কিছু অংশ বাকি থাকতে আপনার স্ত্রী ব্যতীত পরিবারের সকলকে নিয়ে এই এলাকা থেকে চলে যান। তবে শর্ত হল পিছনের দিকে ফিরে তাকাবেন না। এরূপ নির্দেশ সূরা হিজরের ৬৫ নং আয়াতের উল্লেখ রয়েছে। পিছনের দিকে তাকাতে নিষেধের কারণ হল কেউ আযাব প্রত্যক্ষ করতে চাইলে তাকেও আযাব গ্রাস করে নিত। প্রত্যুষকালেই এই গ্রামকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক সেই জনপদকে ভোরবেলায় উল্টিয়ে দেয়া হয় এবং তাদের ওপর ক্রমাগতভাবে পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয় এবং তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এটাই ছিল লূত (عليه السلام)-এর সম্প্রদায়ের করুণ পরিণতি। লূত (عليه السلام)-এর জাতির বসতি ছিল জর্ডান ও ইসরাঈলের মধ্যবর্তী মৃতসাগরের নিকট, বাইবেলে যার নাম সুডুম। সুতরাং মক্কার এই সমস্ত কাফির-মুশরিকরাও তাদের থেকে দূরে নয়। তাদের অবস্থাও এরূপ হতে পারে। অতএব তারা যেন আগে থেকেই সাবধান হয়ে যায় এবং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবীরা গায়েব জানেন না। যদি জানতেন তাহলে ইবরাহীম (عليه السلام) ফেরেশতাদের জন্য ভূনা গোশত নিয়ে আসতেন না এবং লূত (عليه السلام)ও মেহমানদের জন্য চিন্তিত হতেন না।
২. পুরুষের সাথে পুরুষের যৌন চাহিদা নিবারণ করা হারাম।
৩. ইবরাহীম (عليه السلام)-এর আতিথেয়তা সম্পর্কে জানতে পারলাম আর এও জানতে পারলাম যে, তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ওয়ালা ব্যক্তি।
৪. লূত (عليه السلام)-এর জাতির পাপাচার ও তাদের ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings