Surah Hud Tafseer
Tafseer of Hud : 66
Saheeh International
So when Our command came, We saved Salih and those who believed with him, by mercy from Us, and [saved them] from the disgrace of that day. Indeed, it is your Lord who is the Powerful, the Exalted in Might.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৬১-৬৮ নং আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়::
এ আয়াতগুলোতে সালেহ (عليه السلام) ও তাঁর সম্প্রদায় সামূদ জাতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে সালেহ (عليه السلام) সামূদ জাতির নিকট নাবী হিসেবে প্রেরিত হন। (তারীখুল আম্বিয়া ১/৪৯) ‘আদ ও সামূদ জাতি একই দাদা ‘ইরাম’ এর দুটি বংশধারার নাম। সামূদ জাতি আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজর’ যা সিরিয়ার অর্ন্তভুক্ত। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়। ‘আদ জাতির ধ্বংসের পর সামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারশর্দী ছিল। (সূরা শু‘আরা ২৬:১৯) সমতল ভূমিতে বিশালাকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানারূপ প্রকোষ্ট নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান। এগুলোর গায়ে ইরামী ও সামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। এ এলাকাটি এখানো পরিত্যক্ত, তথায় কেউ বসবাস করে না।
আল্লাহ তা‘আলা সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহ (عليه السلام)-কে নাবী হিসেবে প্রেরণ করলেন। এখানে ভাই বলতে বংশীয় ভাই উদ্দেশ্য। (তাফসীর সা‘দী) তিনি অন্যান্য নাবীদের মত প্রথমে তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের দিকেই আহ্বান করেন এবং বলেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সঠিক মা‘বূদ নেই সুতরাং তোমরা তাঁরই উপাসনা কর। সালেহ (عليه السلام) বললেন, তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) সেই উপাস্য বা সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং পরবর্তীতে তোমাদেরকে তাতে আবাদ করিয়েছেন। এর দু‘টো অর্থ হতে পারে (১) আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام) কে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সকল মানুষ আদম (عليه السلام)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং সকল মানুষ মাটির সৃষ্টি। (২) অথবা অর্থ এই রকম হতে পারে যে, তোমরা যা কিছু ভক্ষণ করছ, তা মাটি থেকেই উৎপন্ন হয় এবং সেই খাবার দ্বারা সেই বীর্য তৈরি হয় যা মায়ের গর্ভাশয়ে গিয়ে মানুষ সৃষ্টির উপাদন হয়।
সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমরা যে অপরাধ করেছ তা ছেড়ে দিয়ে তাঁর নিকট তাওবাহ কর। তিনি তোমাদের নিকটেই রয়েছেন এবং তোমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ ط أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ)
“আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয় আমি নিকটে; কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে ডাকে তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি।” (সূরা বাক্বারা ২:১৮৬)
তখন তারা সালেহ (عليه السلام)-কে বলল: তুমি আমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি যে, আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। অর্থাৎ যেহেতু নাবীরা সচ্চরিত্রবান, আমানতদার ও উত্তম আখলাকের হয়ে থাকে যেমন আমাদের নাবী ছিলেন; তাই তারা সালেহ (عليه السلام)-এর কাছে ভাল কিছু আশা করেছিল। ভাল আশা বলতে তাদের মুআফেক হবে, তাদের মা‘বূদদেরকে গালিগালাজ করবে না ইত্যাদি। আর তুমি কিনা আমাদেরকে আমাদের উপাস্যের ইবাদত করতে নিষেধ করছ। অথচ ইতোপূর্বে এদের ইবাদত করেছে আমাদের পূর্বপুরুষেরা। সুতরাং তারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি সন্দেহ পোষণ করল এবং সত্য দীনের আনুগত্য করতে অমান্য করল।
তখন সালেহ (عليه السلام) তাদের এ কথার জবাবে বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে সত্য প্রমাণ নিয়ে আসি এবং আমি যদি হকের ওপর থাকি তাহলেও কি তোমরা আমার কথা মানবে না? তবুও কি তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে না? عَلٰي بَيِّنَةٍ বলতে ঈমান ও ইয়াকিন যা আল্লাহ তা‘আলা নাবীদেরকে দান করেন আর রহমত বলতে নবুওয়াতকে বুঝানো হয়েছে। আর যদি এই সমস্ত প্রমাণ আমার নিকট থাকাবস্থায় আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে দাওয়াত না দিই এবং তোমাদের দাবী অনুপাতে দাওয়াতী কাজ ছেড়ে দিই, তাহলে এ কারণে তখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? যদি আমি এমনটিই করি তাহলে তোমরা আমার কোনই উপকার করতে পারবে না; বরং তোমাদের দ্বারা আমার ক্ষতিই বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমি আল্লাহ তা‘আলার পথে আহ্বান করেই যাব।
সালেহ (عليه السلام) তাদের দাবী অনুপাতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিদর্শনস্বরূপ একটি উটনী এনে দিলেন এবং বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! এই হল আল্লাহ তা‘আলার উটনী একে কোন প্রকার কষ্ট দিও না। একে জমিনে চরে খেতে দাও। যদি তাকে মন্দ উদ্দেশ্যে স্পর্শ কর তাহলে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি পাকড়াও করবে। এটা ছিল আল্লাহ তা‘আলার মু‘জিযাহ স্বরূপ তাদের প্রতি নিদর্শন। যা আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য পাহাড় থেকে বের করেছিলেন। কিন্তু এই হতভাগারা এত সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখার পরও এই উটনীর পা কেটে দিয়ে হত্যা করে ফেলল।
তাদের এই সীমালঙ্ঘন করার কারণে তাদেরকে পৃথিবীতে তিনদিনের সময় দেয়া হয়েছিল যে, তোমাদেরকে তিন দিন পর আল্লাহ তা‘আলা আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। সেই কথা অনুপাতে চতুর্থদিন তাদের নিকট শাস্তি এসে গেল। সেখানে সালেহ (عليه السلام) এবং তাঁর অনুসারীরা ব্যতীত সকলকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছিল এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جٰثِمِيْنَ)
“সুতরাং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প এসে গ্রাস করে নিলো, ফলে তারা তাদের নিজেদের গৃহের মধ্যেই (মৃত অবস্থায়) উপুড় (অধোমুখী) হয়ে পড়ে রইল।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৭৮)
তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল যে, মনে হয় যেন তারা সেখানে তাদের গৃহে কোনদিন বসবাস করেনি। এ সামুদ জাতিরা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করার কারণে তাদেরকে এভাবে ধ্বংস করা হল সুতরাং তাদের পরিণতি কতই না খারাপ। আরো বিস্তারিত সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অন্যান্য জাতির মত সামুদ জাতিরাও তাদের নাবীকে অমান্য করেছিল।
২. সকল জাতির নাবীরাই সচ্চরিত্রবান ও সমাজের ভাল লোক ছিলেন।
৩. সামূদ জাতিকে প্রচণ্ড গর্জন দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।
৪. সত্যের পথ জানা ও চেনার পর তা প্রকৃত মুসলিম বর্জন করতে পারে না যেমন নাবীরা করেননি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings