Surah Al Ikhlas Tafseer
Tafseer of Al-Ikhlas : 1
Saheeh International
Say, "He is Allah, [who is] One,
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ:
পবিত্র কুরআনুল কারীমের মাত্র দুটি সূরা যে সূরা দুটির নামকরণ সূরায় উল্লিখিত শব্দ বা সূরায় বর্ণিত ঘটনা থেকে করা হয়নি। বরং নামকরণ করা হয়েছে সূরার মুখ্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। একটি হলো সূরা ফাতিহা আর দ্বিতীয়টি হলো সূরা ইখলাস। অত্র সূরায় একজন সত্যিকার মা‘বূদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
الإخلَاص শব্দের অর্থ : একনিষ্ঠভাবে কোন কিছু করা। যেমন বলা হয় : أخلص لله عمله সে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্যই তার আমলকে সম্পাদন করেছে। সূরাতে যেহেতু আল্লাহ তা‘আলার পরিচয় ও তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাই إخلَاص নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ফযীলত:
সূরাটি আকারে ছোট হলেও ফযীলতের দিক দিয়ে অনেক বড়। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের বললেন : তোমাদের কেউ কি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে অপারগ হবে? এটা তাদের জন্য কষ্ট কর হয়ে গেল। তারা বলল : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)! আমাদের কে এরূপ করতে সক্ষম হবে? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন : (قُلْ هُوَ اللّٰهُ أَحَدٌ) সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৫)
অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়লে যে নেকী হবে সেই নেকী এ সূরা পাঠ করলে পাওয়া যাবে। এভাবে এ সূরাটি তিনবার পড়লে সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার নেকী পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। কারণ পবিত্র কুরআনে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তাওহীদ, আহকাম ও নসীহত। সূরা ইখলাসে তাওহীদ পূর্ণভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য, এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। (ইবনু কাসীর)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাঃ) এক সাহাবীকে একদল বাহিনীর নেতা বানিয়ে প্রেরণ করলেন। সেই লোক বাহিনীর ইমামতি করে যখন সালাত আদায় করতেন তখন প্রত্যেক রাকাতেই সূরা ইখলাস দ্বারা কেরাত শেষ করতেন। সবাই যখন ফিরে আসল এবং নাবী (সাঃ)-কে বিষয়টি বলল তখন নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন সে এরূপ করেছে? তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বললেন : আমি এ সূরা পড়তে ভালবাসি। কেননা এতে দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলি রয়েছে। নাবী (সাঃ) বললেন : তাকে বলে দাও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালবাসেন। (সহীহ বুখারী হা. ৭৩৭৫)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আগমন করলেন এবং বললেন : আমি এ সূরাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : এ সূরাকে ভালবাসার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (আহমাদ ৩/১৪১, সনদ সহীহ।)
আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে মাসজিদে প্রবেশ করেন। এমন সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছিল আর দু‘আ করে বলছিল।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কামনা করছি ঐ বাক্যসমূহের মাধ্যমে যে, নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই। তুমি একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এ ব্যক্তি ইসমে আযমের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে চেয়েছে। এ নামে চাইলে তিনি দেন আর এ নামে ডাকলে তিনি ডাকে সাড়া দেন। (আবূ দাঊদ হা. ১৪৯৪, তিরমিযী হা. ৩৪৭৫, ইবনু মাযাহ হা. ৩৮৫৮, সনদ সহীহ)
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) প্রত্যেক রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দু হাত একত্রিত করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। তারপর যথাসম্ভব দু হাত দিয়ে শরীর মাসাহ করতেন। তিনি প্রথমে মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৭)
শানে নুযূল:
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : এক গ্রাম্য ব্যক্তি নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল : তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর। তখন এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (বায়হাকী ৭/১৪৬, হাসান।)
উবাই বিন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, মুশরিকরা নাবী (সাঃ)-কে বলল : হে মুহাম্মাদ তোমার রবের বংশ তালিকা বর্ণনা কর। তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক জিনিস যা জন্ম নেয় তা অবশ্যই মারা যাবে এবং যে জিনিস মারা যাবে পরবর্তী বংশধর তার ওয়ারিশ হবে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা মারা যাবেন না এবং তাঁর ওয়ারিশও কেউ হবে না।
তাফসীর:
একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য এ সূরাতে আলোচনা করা হয়েছে। এ চারটি বৈশিষ্ট্য যে মা‘বূদের মাঝে পাওয়া যাবে তিনিই একমাত্র যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার হকদার। এ চারটি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো বা কোন কিছুর মাঝে পাওয়া যায় না। তাই সব বাতিল মা‘বূদ বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উচিত।
প্রথম বৈশিষ্ট্য:
যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তার প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে তিনি একক হবেন তার কোন অংশীদার থাকবে না। এ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর নেই। তাই এখানে আল্লাহ তা‘আলা أَحَد শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার কোন দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় সবই মানুষের বানানো ও মস্তিস্কপ্রসূত চিন্তা-চেতনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اِلَّآ اَسْمَا۬ئً سَمَّیْتُمُوْھَآ اَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُکُمْ مَّآ اَنْزَلَ اللہُ بِھَا مِنْ سُلْطٰنٍﺚ اِنِ الْحُکْمُ اِلَّا لِلہِﺚ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْٓا اِلَّآ اِیَّاھُﺚ ذٰلِکَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَلٰکِنَّ اَکْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ)
‘‘তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলো নামের ‘ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ; এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এটাই সঠিক দীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।’’ (সূরা ইউসুফ ১২: ৪০)
এ থেকে আরো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার শানে উপযোগী নয় এমন নামে তাঁকে অভিহিত করা যাবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলাকে একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত নামেই অভিহিত করতে হবে।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য:
الصَّمَدُ অর্থাৎ যে মা‘বূদের ইবাদত করা হবে তিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী হবেন না। তিনি কোন খাবার, পানীয় ও নিজ প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ হতে মুক্ত হবেন। মোট কথা যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এ আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন : الصَّمَدُ সামাদ হলেন তিনি যার মাঝে কোন শূন্যতা নেই। (ইবনু জারীর /২২২) এ বৈশিষ্ট্যটিও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার হকদার।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য:
(لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ)
একজন সত্যিকার মা‘বূদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কাউকে জন্ম দেন না। অর্থাৎ তার কোন স্ত্রী-সন্তান নেই। এটাও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ ط أَنّٰي يَكُوْنُ لَه۫ وَلَدٌ وَّلَمْ تَكُنْ لَّه۫ صَاحِبَةٌ ط وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ج وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ)
“তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিরূপে? অথচ তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আন‘আম ৬: ১০১)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمٰنُ وَلَدًاﮧﺚ لَقَدْ جِئْتُمْ شَیْئًا اِدًّاﮨﺫ تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرْنَ مِنْھُ وَتَنْشَقُّ الْاَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ ھَدًّاﮩﺫ اَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمٰنِ وَلَدًاﮪﺆ وَمَا یَنْۭبَغِیْ لِلرَّحْمٰنِ اَنْ یَّتَّخِذَ وَلَدًاﮫﺚ اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ اِلَّآ اٰتِی الرَّحْمٰنِ عَبْدًاﮬﺚ)
“তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ; যাতে আকাশসমূহ বিদীর্ণ হবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য শোভনীয় নয়! আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৮৮-৯৩)
মূলত: কথা হচ্ছে যে, একজন সত্যিকার মা‘বূদকে কেউ জন্ম দিতে পারে না এবং বানাতেও পারে না।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আদম সন্তান আমাকে অবিশ্বাস করে অথচ এটা তার জন্য সমীচীন নয়। সে আমাকে গালি দেয় অথচ এটাও তার জন্য সমীচীন নয়। আমাকে অবিশ্বাস করার অর্থ হলো সে বলে : আমাকে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় সৃষ্টি করতে পারবেন না। যেমন আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা প্রথমবার সৃষ্টি করার চেয়ে কি অধিক সহজ নয়? আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ হলো : সে বলে : আমার নাকি সন্তান আছে, অথচ আমি একক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, আমার কোন সন্তান নেই, আমাকে কেউ জন্ম দেয়নি এবং আমার সমকক্ষ ও সমতুল্য কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭৪, সহীহ মুসলিম হা. ২০৭৮)
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য:
একজন সত্যিকার মা‘বূদের সত্ত্বা, গুণাবলী ও কাজকর্ম অন্য কোনো কিছুরই সমতুল্য ও সমকক্ষ হবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরা ৪২: ১১)
এ চারটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, তাই আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র সমস্ত মাখলুকের ইবাদত পাওয়ার যোগ্য; অন্য কোন মূর্তি, দেব-দেবী ইত্যাদি নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সূরার ফযীলত অনেক। যেমন : নেকীর দিক দিয়ে এ সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
২. যারা প্রকৃতপক্ষে এ সূরাকে ভালবেসে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে ও তাঁর ওপর ভরসা রাখবে আল্লাহ তা‘আলাও তাঁকে ভালবেসে জান্নাত দেবেন।
৩. একজন সত্যিকার মা‘বূদের চারটি বৈশিষ্ট্য যা অত্র সূরায় উল্লেখিত হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। কারণ উপরোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য কেবল তাঁর মাঝেই আছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings