Surah At Tawbah Tafseer
Tafseer of At-Tawbah : 1
Saheeh International
[This is a declaration of] disassociation, from Allah and His Messenger, to those with whom you had made a treaty among the polytheists.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
মুফাসসিরগণ এ সূরাটির একাধিক নাম বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে দু’টি নাম প্রসিদ্ধ:
১. তাওবাহ: এ সূরাতে কয়েকজন সাহাবীর তাওবাহ কবূলের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, তাই একে তাওবাহ বলা হয়।
২. বারাআহ: একে বারাআহ বলা হয় এজন্য যে, এতে মুশরিকদের সাথে মুসলিমদের সাধারণভাবে বারাআহ বা সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে এবং সূরার প্রথম শব্দটিও বারাআহ।
এটা কুরআন মাজীদের একমাত্র সূরা যার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ নেই। এ ব্যাপারে ইমাম কুরতুবী (রাঃ) পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মেধ্যে:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি উসমান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী কারণে সূরা আনফালকে সূরা বারাআহর সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন? (অথচ সূরা আনফাল مثاني তথা একশত এর কম আয়াতবিশিষ্ট সূরা আর বারাআহ একশত এর বেশি আয়াতবিশিষ্ট সূরা) এবং উভয়ের মাঝে বিসমিল্লাহ লেখেননি, অনুরূপ এটাকে সাতটি দীর্ঘ সূরার মধ্যে শামিল করেছেন। উসমান (রাঃ) বলেন: কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর অনেক আয়াতবিশিষ্ট কয়েকটি সূরা অবতীর্ণ হত। যখন আয়াত অবতীর্ণ হত তখন তিনি লেখকদের কাউকে ডেকে বলতেন: এ আয়াতটি উমুক সূরার মধ্যে রেখে দাও যার মধ্যে এরূপ এরূপ বর্ণনা রয়েছে। সূরা আনফাল মদীনায় অবতীর্ণ সূরাগুলোর মধ্যে প্রথম দিকের অন্যতম একটি, আর সূরা বারাআহ সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। উভয় সূরার ঘটনা সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই আমি মনে করেছি সূরা বারাআহ আনফালের অন্তর্ভুক্ত। আর এ অবস্থাতেই নাবী (সাঃ) মারা গেলেন কিন্তু এ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করে যাননি। এ কারণে আমি দুটি সূরাকে মিলিয়ে দিয়েছি; মাঝে বিসমিল্লাহ লেখিনি। আর এটাকে সাতটি দীর্ঘ সূরার মধ্যে শামিল করে দিয়েছি। (তিরমিযী হা: ৩০৮৬, আবূ দাঊদ হা: ৭৮৬, হাকিম: ২/৩৩০, ইমাম হাকিম বলেন: সনদ সহীহ)
ইমাম ইবনু কাসীর (রাঃ) বলেন: এ সূরার প্রথম অংশ ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন নাবী (সাঃ) তাবূকের যুদ্ধ হতে ফিরে আসছিলেন। তখন হাজ্জের মওসুম ছিল। মুশরিকরা নিজেদের অভ্যাস মত হাজ্জ করতে এসে উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের সাথে মিলিত হতে অপছন্দ করতেন, তাই আবূ বাকর (রাঃ)-কে ঐ বছর হাজ্জের ইমাম বানিয়ে মক্কা অভিমুখে প্রেরণ করেন। মানুষকে হাজ্জের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয়ার এবং মুশরিকদের মাঝে এ ঘোষণা দেয়ার জন্য যে, এ বছরের পর থেকে কোন মুশরিক হাজ্জ করতে পারবে না। তখন তিনি জনগণের মাঝে সূরা বারাআহ তেলাওয়াত করে শুনালেন। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সাহাবী বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন:
أَخِرُ سُوْرَةٍ نَزَلَتْ بَرَاءَةٌ
সূরা বারাআহ সর্বশেষ অবতীর্ণ হওয়া সূরা। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৫৪) যখন সূরা তাওবাহ নাযিল হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে চারটি নির্দেশ দিয়ে মক্কায় প্রেরণ করলেন।
১. কেউ উলঙ্গ অবস্থায় কাবা তাওয়াফ করতে পারবে না।
২. এ বছরের পর কোন মুশরিক বাইতুল্লাহর নিকটে আসতে পারবে না।
৩. কোন ব্যক্তি ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাঝে যদি কোন অঙ্গীকার থাকে তাহলে তা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।
৪. মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে এটা সেই সকল মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা যাদের সাথে স্থায়ী অথবা চার মাসের কম অথবা চার মাসের বেশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি ছিল। এখন মুশরিকদের থেকে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পূর্ণ মুক্ত। অতএব হে মুশরিকরা! তোমরা চার মাস (শাওয়াল, যুলকাদা, যুলহাজ্জ ও মুহাররাম) যেথায় ইচ্ছা ঘুরে বেড়াও তাতে মুসলিমদের থেকে পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। চার মাস পর কোন অঙ্গীকার থাকবে না, কোন প্রতিশ্র“তিও থাকবে না।
(يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ)
‘মহান হাজ্জের দিবসে’ মহান হাজ্জের দিন বলতে দশই যিলহাজ্জকে বুঝানো হয়েছে। এ দিনে মিনাতে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা শুনানো হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৫৫, সহীহ মুসলিম হা: ৯৮২, তিরমিযী হা: ৯৫৭)
দশই যিলহাজ্জকে বড় হাজ্জের দিন বলার কারণ হল, এ দিনে হাজ্জের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পন্ন করা হয়। মানুষের মাঝে প্রচলন আছে যে, জুমুআর দিন আরাফা হলে ঐ হাজ্জকে বড় হাজ্জ বা হাজ্জে আকবার বলা হয়, এরূপ কথা ভিত্তিহীন। মূলত বড় হাজ্জ দ্বারা হাজ্জকে বুঝানো হয়েছে, যেহেতু উমরাকে ছোট হাজ্জ বলা হয়।
(إِلا الَّذِينَ عَاهَدْتُمْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ)
‘তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ’ অর্থাৎ পূর্বের বিধান থেকে ঐ সকল মুশরিকরা আলাদা যারা নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ আর তোমাদের সাথে খিয়ানত করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের সহযোগিতাও করেনি। তাহলে তাদের সাথে মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর।
(فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ)
‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে’এখানে হারাম মাস বলতে কোন্ মাসকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে একাধিক মত পাওয়া যায়।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: যে মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। তাহল যুলক্বা‘দাহ, যুলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব। প্রবীণ মুফাসসিরদের মধ্যে ইমাম ইবনু কাসীর (রাঃ)ও এ মত পোষণ করেছেন।
(فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَيْثُ وَجَدْتُّمُوهُمْ)
‘মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা কর’অনেকে এ আয়াতকে ব্যাপক বলেছেন। অর্থাৎ যেখানে পাও সেখানেই মুশরিকদেরকে হত্যা কর। কিন্তু মাসজিদে হারামের সীমানায় হত্যা করা নিষেধ এটাই প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاقْتُلُوْهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوْهُمْ وَأَخْرِجُوْهُمْ مِّنْ حَيْثُ أَخْرَجُوْكُمْ وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ج وَلَا تُقٰتِلُوْهُمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتّٰي يُقَاتِلُوْكُمْ فِيْهِ ج فَإِنْ قٰتَلُوْكُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ ط كَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِيْنَ)
“তাদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তারা তোমাদেরকে যেখান থেকে বহিষ্কৃত করেছে তোমরাও তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দাও, আর হত্যা অপেক্ষা ফেত্না-ফাসাদ (কুফর ও শির্ক) গুরুতর অপরাধ এবং তোমরা তাদের সাথে মাসজিদুল হারামের নিকট যুদ্ধ কর না যে পর্যন্ত না তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ করে; কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ কর। কাফিরদের প্রতিফল এরূপই।” (সূরা বাকারাহ ২:১৯১, ইবনে কাসীর, ৪/১২০)
مَرْصَدٍ শত্রুরা যেখানে থাকে তাকে মারসাদ বা ঘাঁটি বলা হয়। অর্থাৎ শত্রুদের প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক, সুযোগ পেলেই হামলা করবে।
(فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ)
‘অতঃপর তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে..’ অর্থাৎ যদি তারা শির্ক বর্জন করে তাওবাহ করতঃ ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। কেননা তখন তারা তোমাদের দীনী ভাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ ط وَنُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)
“অতঃপর তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনী ভাই; জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শন স্পষ্টরূপে বর্ণনা করি।”(সূরা তাওবাহ ৯:১১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর রাসূল- এ সাক্ষ্য দিয়ে সালাত কায়িম করবে, যাকাত দেবে; নচেৎ আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। (সহীহ বুখারী হা: ২৫)
(وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِيْنَ اسْتَجَارَكَ)
‘মুশরিকদের মধ্যে যদি কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে’অর্থাৎ যে সকল মুশরিকদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্য হতে কেউ যদি নিরাপত্তা চায় তাহলে তাকে এমনভাবে নিরাপত্তা দাও যেন কুরআন শ্রবণ করতে পারে। আশা করা যায়, সে ঈমান আনবে। যদি কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে তাদের বাসস্থানে নিরাপদে পৌঁছে দাও।
সুতরাং যেখানে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল কাফির-মুশরিকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিয়েছেন সেখানে কোন মু’মিনের সম্পর্ক রাখা ঈমানের পরিচায়ক হতে পারে না। এটা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তারা কখনো আমাদের জন্য কল্যাণ চায় না, যদিও বাহ্যিক হিতাকাক্সিক্ষতা প্রকাশ করে। তবে তারা যদি তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দীনী ভাই, তাদের সাথে সম্পর্ক করতে পারবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সাধারণভাবে অমুসলিমদের সাথে কোন মুসলিমের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ইসলামের স্বার্থে মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে চুক্তি করা বৈধ।
২. নির্দিষ্ট মেয়াদে সম্পাদিত চুক্তিগুলো যথাযথভাবে পূর্ণ করা আবশ্যক।
৩. দশই যিলহাজ্জকে হাজ্জে আকবার বলা হয়।
৪. কোন ব্যক্তি তাওবাহ করতঃ সালাত কায়েম করলে, যাকাত প্রদান করলে সে মুসলিম ভাই বলে গণ্য হবে।
৫. কোন মুশরিক নিরাপত্তা চাইলে নিরাপত্তা দেয়া যাবে। তবে এমনভাবে নিরাপত্তা দেয়া উচিত যাতে সে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়, আশা করা যায় এতে সে ইসলাম গ্রহণ করবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings