89:1

وَٱلۡفَجۡرِ١

Saheeh International

By the dawn

Tafsir "Tafsir Fathul Mazid" (Bengali)

নামকরণ: الْفَجْرِ ফজর বলতে ফজরের সময়কে বুঝানো হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْفَجْرِ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। সূরার গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্বের সূরাগুলোতে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। সূরাতে কয়েকটি বিষয় আলোচনা স্থান পেয়েছেন যেমন সূরার শুরুতে কয়েকটি বিষয়ের শপথ করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, কাউকে সম্পদ দেয়া আর না দেয়া, সম্মান-অসম্মানের বিষয় নয় বরং যদি আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ঈমান ও সৎআমলের তাওফীক দান করেন সেটাই প্রকৃত সম্মান। তারপর অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের চারটি মন্দ আচরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, সর্বশেষে আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্দাদের পুরস্কার জান্নাতে সসম্মানে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। ১-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর: সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের শপথ করার পর পূর্ববর্তী কয়েকজন নাবীর জাতির আলোচনা নিয়ে এসেছেন, যারা ঈমান বর্জন করত জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করেছিল ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। الْفَجْرِ ফজর রাতের বিদায় ও দিনের আগমনের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কেউ বলেছেন : এখানে ফজর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো يوم النحر বা যিলহাজ্জের ১০ তারিখের কুরবানী দিনের ফজর। আবার কেউ বলেছেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ফজরের সালাত ইত্যাদি। তবে সঠিক কথা হলো এর দ্বারা প্রতি দিনের সাধারণ ফজরকে বুঝানো হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট দিনের ফজর উদ্দেশ্য নয়। (তাফসীর মুয়াসসার) (وَلَيَالٍ عَشْرٍ) দশ রাত দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে। ১. যিলহাজ্জের প্রথম দশ রাত-দিন। হাদীসে এসেছে, নাবী (সাঃ) বলেন : যিলহাজ্জের প্রথম দশ দিনের কৃত আমলের চেয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক পছন্দনীয় আর কোন আমল নেই। সাহাবীরা বললেন : আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদও না? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদও না, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে তার জান মাল নিয়ে বের হয়ে গেছে আর ফিরে আসতে পারেনি। (সহীহ বুখারী হা. ৯৬৯)২. রমযানের শেষ দশ রাত। এ রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তবে অধিকাংশ আলেমগণ প্রথম মতটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (وَّالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ) এখানে জোড় ও বেজোড় দ্বারা কী উদ্দেশ্য এ নিয়ে অনেক মতামত তাফসীর গ্রন্থে পাওয়া যায়। ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) এ ব্যাপারে সাতটি মত বর্ণনা করেছেন। এ সকল মতামত পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় এর দ্বারা নির্দিষ্ট কোন কিছু বুঝানো হয়নি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জোড় ও বেজোড় সংখ্যা এবং জোড় ও বেজোড় সংখ্যক বস্তু। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)(وَاللَّيْلِ إِذَا يَسْرِ) অর্থাৎ রাত যখন আগত হয় এবং যখন বিদায় নেয়। কেননা يسير শব্দটি আসা ও যাওয়া উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। (قَسَمٌ لِّذِيْ حِجْرٍ) অর্থাৎ পূর্বে উল্লিখিত শপথসমূহ কি জ্ঞানীদের জন্য مقنع বা উপকার নেই। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আছে। (لِّذِيْ حِجْرٍ) অর্থ : لِّذِيْ عقل ولب বা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান। حِجْرٍ শব্দের শাব্দিক অর্থ : বাধা দেয়া, বারণ করা। জ্ঞানীদেরকে حِجْرٍ বলার কারণ হলো : জ্ঞান মানুষকে এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে বা বাধা প্রদান করে যা তার জন্য উপযোগী নয়। এখান থেকেই বলা হয় حجر البيت বা বাইতুল্লাহর প্রতিবন্ধক। কেননা তা তওয়াফকারীদেরকে শামী দেয়ালের সাথে লেপটে থাকা থেকে বাধা দেয়। (ইবনু কাসীর) (أَلَمْ تَرَ كَيْفَ..... الْبِلَادِ) অর্থাৎ যখন আদ জাতি তাদের নিকট প্রেরিত রাসূল হূদ (আঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, তাঁর আনুগত্য বর্জন করল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আযাব দ্বারা গ্রাস করলেন। যেমন সূরা হাক্কাতে আলোচনা করা হয়েছে। (إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ) ارم-‘ইরাম’ একটি গোত্রের নাম। আবার বলা হয় إِرَمَ আদ জাতির পিতামহের নাম। যেমন তাদের বংশ তালিকা হলো ‘আদ বিন আউস বিন ইরাম বিন সাম বিন নূহ। عاد দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রথম আদ বা তাদের সন্তানরা। (ফাতহুল কাদীর) (ذَاتِ الْعِمَادِ) (স্তম্ভ ওয়ালা) বলে তাদের ক্ষমতা, শক্তি, সামর্থ্য ও দৈহিক দীর্ঘতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাছাড়া তারা অট্টালিকা নির্মাণেও খুব দক্ষ কারিগর ছিল। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: তারা সে সময় উঁচু উঁচু প্রাসাদসমূহে বসবাস করত এবং দৈহিক আকৃতি ও বস্তুগত ক্ষমতায় ছিল সে যুগের সেরা শক্তিশালী জাতি। হূদ (আঃ) তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল এবং তারা হঠকারিতা করল ও বাপ-দাদার আমল থেকে ফিরে না আসার দোহাই দিয়ে শির্কের ওপর অটল রইল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। (لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ) অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে তাদের মত শক্তিশালী আর কোন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়নি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَاذْکُرُوْٓا اِذْ جَعَلَکُمْ خُلَفَا۬ئَ مِنْۭ بَعْدِ قَوْمِ نُوْحٍ وَّزَادَکُمْ فِی الْخَلْقِ بَصْۜطَةًﺆ فَاذْکُرُوْٓا اٰلَا۬ئَ اللہِ لَعَلَّکُمْ تُفْلِحُوْنَ) “এবং স্মরণ কর! ‘আল্লাহ তোমাদেরকে নূহের সম্প্রদায়ের পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদের দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট-বলিষ্ঠ করেছেন। সুতরাং তোমরা ‘আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর! হয়ত তোমরা সফলকাম হবে।’ (সূরা আ‘রাফ ৭ : ৬৯) তাই তারা গর্ব করে বলত : (فَأَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوْا فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوْا مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً) “আর ‘আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলত: আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী কে আছে?” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১: ১৫) তাদের অহংকার ও হঠকারীতার শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি প্রবল বায়ু প্রেরণ করলেন। যা আট দিন ও সাত রাত স্থায়ী ছিল এবং সব কিছু সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوْا بِرِيْحٍ صَرْصَرٍ عٰتِيَةٍ سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَّثَمٰنِيَةَ أَيَّامٍ لا حُسُوْمًا فَتَرَي الْقَوْمَ فِيْهَا صَرْعٰي كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ) “আর ‘আদ সম্প্রদায়, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় দ্বারা। যা তিনি তাদের ওপর প্রবাহিত করেছিলেন বিরামহীনভাবে সাত রাত ও আট দিন, তুমি (উপস্থিত থাকলে) সেই সম্প্রদায়কে দেখতে খেজুর কাণ্ডের ন্যায় সেখানে ছিন্ন ভিন্নভাবে পড়ে আছে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯: ৬-৮)এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী সনদবিহীন একটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন যে, আদ এর দুই পুত্র ছিল, একজন শাদ্দাদ ও অপর জন শাদীদ। শাদীদের মৃত্যুর পর শাদ্দাদ রাজত্বের মালিক হয়। সে নয়শ বছর জীবিত ছিল। জান্নাতের কথা শুনে সে আদনের মরুভূমিতে তিনশ বছর ধরে বিশাল শহর নির্মাণ করে ও তাকে জান্নাত নামে নামকরণ করে। সেখানে সোনা-রূপা ও মনি মুক্তা ইত্যাদি দিয়ে বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করে ও বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ রোপণ করে। নির্মাণ শেষ হলে শাদ্দাদ তার দলবল নিয়ে সেখানে পৌঁছার একদিন ও একরাতের পথ বাকী থাকতেই এক ভীষণ আসমানী বজ্রধ্বনি এসে সব ধ্বংস করে দেয়। (তাফসীর কুরতুবী) তবে ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) এ সম্পর্কে বলেন : এসবই ইসরাঈলী বর্ণনা যা তাদের কতক নাস্তিকগণ তৈরি করেছে, এর দ্বারা মূর্খ লোকদের জ্ঞানের পরিধি জানার জন্য। যাতে তারা তাদের সবকিছুকে বিশ্বাস করে নেয়। (ইবনু কাসীর) সুতরাং এসব কাহিনী মিথ্যা বানোয়াট এবং এর উদ্দেশ্য মানুষকে ধোঁকায় নিপতিত করা ছাড়া কিছুই নয়।(وَثَمُوْدَ الَّذِيْنَ جَابُوا الصَّخْرَ) অর্থাৎ সামূদ জাতি যাদের নিকট সালেহ (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল, তারাও যখন নাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতঃ আনুগত্য বর্জন করল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলেন। এরা এতো শক্তিশালী ছিল যে, তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। তারপরেও তারা আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রেহাই পায়নি। এ সম্পর্কে সূরা শুয়ারার ১৪৯ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।(وَفِرْعَوْنَ ذِي الْأَوْتَادِ) অর্থাৎ ফির‘আউনকেও আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করেছেন, যে অনেক সৈন্যের মালিক ছিল এবং বিশাল রাজত্বের অধিপতি ছিল। যখন সে কুফরী এবং নাবী ও ঈমানদারদের হত্যা করার চেষ্টা করে ও জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল তখন সে তার এ বিশাল রাজত্ব ও সৈন্য বাহিনী আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারেনি। صَبَّ অর্থ ঢেলে দেয়া, سَوْطَ অর্থ চাবুক দিয়ে মারা। অর্থাৎ তাদের ওপর আযাব ঢেলে দেয়া হয়েছিল। (إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ) অর্থাৎ যে অপরাধ করে তাকে আল্লাহ তা‘আলা কিছু সময়ের অবকাশ দেন, তারপর কঠিনভাবে পাকড়াও করেন। যুগে যুগে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করেছে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করেছেন। তাদের থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করে সতর্ক হওয়া উচিত। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা যেকোন সৃষ্টির নামে শপথ করতে পারেন; কিন্তু মানুষ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নাম ছাড়া অন্য কোন কিছুর নামে শপথ করতে পারবে না। ২. আল্লাহ তা‘আলা যে জিনিসের শপথ করেন তার গুরুত্ব অপরিসীম। ৩. যিলহাজ্জের প্রথম দশ দিনের ফযীলত জানতে পারলাম। ৪. পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির ঘটনা বর্ণনা করে আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন যে, নাবীদের আনুগত্য বর্জন করলে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করা হবে।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us