Surah At Tariq Tafseer
Tafseer of At-Tariq : 1
Saheeh International
By the sky and the night comer -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও গুরুত্ব:
الطَّارِقِ শব্দের অর্থ রাতে আগমনকারী। সূূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الطَّارِقِ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
খালেদ বিন আবূ জাবাল আল উদওয়ানী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন : তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সাক্বীফের পূর্ব দিকে দেখলেন তিনি (সাঃ) ধনুক বা লাঠির ওপর ভর দিয়ে আছেন। তিনি তাদের নিকট সহযোগিতা চাওয়ার জন্য এসেছিলেন, আমি তাঁর মুখ থেকে সূরা ত্বারিক পাঠ করা শ্রবণ করলাম এবং মুখস্থ করে নিলাম। তখন আমি মুশরিক ছিলাম। অতঃপর মুসলিম হওয়ার পর আমি তা পাঠ করলাম। তারপর সাক্বীফ গোত্রের লোকেরা আমাকে ডেকে বলে : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে কী শুনেছ? আমি তাদের কাছে এ সূরাটি পাঠ করলাম। তখন যেসব কুরাইশ ছিল তারা বলল : আমাদের সাথীর (মুহাম্মাদের) ব্যাপারে আমরা বেশি জানি। যদি আমরা তার কথা সত্য বলে জানতাম তাহলে আমরাই তার আনুগত্য করতাম। (আহমাদ ৩/৩৩৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১৩৬)
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : মুয়ায (রাঃ) মাগরিবের সালাতে সূরা বাক্বারা ও সূরা নিসা দ্বারা ইমামতি করেন। নাবী (সাঃ) বললেন : হে মুয়ায! তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করতে চাও?
(وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا، وَالسَّمَا۬ءِ وَالطَّارِقِ)
ও অনুরূপ সূরাগুলো কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? (সহীহ বুখারী হা. ৭০৫)
১-১৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির শপথ করছেন।
الطَّارِقِ-এর তাফসীর পরের আয়াতে উল্লেখ করে বলেন : النَّجْمُ الثَّاقِبُ বা উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কাতাদাহ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন : তারকাকে طارِق বলে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, তা রাতের বেলা দেখা যায় আর দিনের বেলা গোপন থাকে। এ শব্দটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছেন যিনি সারাদিন বা অনেক দিন বাড়ির বাইরে ছিল হঠাৎ করে রাতে পরিবারের কাছে আগমন করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
(ذَا أَطَالَ أَحَدُكُمُ الغَيْبَةَ فَلاَ يَطْرُقْ أَهْلَهُ لَيْلًا)
যখন তোমাদের কেউ দীর্ঘদিন পরিবার থেকে অনুপস্থিত থাকে তবে সে যেন হঠাৎ করে রাতের বেলায় পরিবারের কাছে প্রবেশ না করে। (সহীহ বুখারী হা. ৫২৪৪)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : আকাশ ও সেখানে যা রাতে আগমন করে। পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা الطَّارِقِ এর ব্যাখ্যা আরো সুস্পষ্টভাবে দিয়েছেন।
الثَّاقِبُ শব্দটি জাতিবাচক নাম। এতে সব উজ্জ্বল তারকা শামিল। (তাফসীর সা‘দী) অর্থাৎ الطَّارِقِ হল উজ্জ্বল তারকা যা রাতের বেলায় আগমন করে ও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হয়।
(إِنْ كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ)
প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন যারা ভাল-মন্দ সব আমল লিপিবদ্ধ করে। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হেফাযতকারী নিযুক্ত রয়েছেন যারা বিপদ আপদ থেকে তাদেরকে হেফাযত করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَه۫ مُعَقِّبٰتٌ مِّنْ ۭبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِه۪ يَحْفَظُوْنَه۫ مِنْ أَمْرِ اللّٰهِ )
“মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী ফেরেশতা থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।” (সূরা রা‘দ ১৩: ১১)
হাদীসেও এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : ফেরেশতাদের দুটি দল তোমাদের কাছে রাতে ও দিনে পালাক্রমে আগমন করে। উভয় দল ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয় এবং একে অপরের দায়িত্ব বদল করে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৫৫, সহীহ মুসলিম হা. ৬৩২)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার সৃষ্টির মূল উপাদান সম্পর্কে চিন্তা করার কথা বলছেন। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে مَّا۬ءٍ دَافِقٍ বা বীর্য থেকে যা মিলনক্রিয়ার চরম উত্তেজনার মুহূর্তে সবেগে নির্গত হয়। এ বীর্য নারীর গর্ভে পৌঁছনোর পর আল্লাহ তা‘আলার আদেশ হলে গর্ভে সন্তান আসে।
(الصُّلْبِ وَالتَّرَآئِبِ)
এখানে صلب মেরুদন্ড বলতে পুরুষের মেরুদন্ড আর ترائب বলতে নারীর দুই স্তনের মধ্যখানকে বুঝানো হয়েছে।
যে আল্লাহ তা‘আলা এরূপ কঠিন জায়গা থেকে পানি নির্গত করে মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই পুনরায় পুনরুত্থানের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করতে সক্ষম।
(تُبْلَي السَّرَآئِرُ) অর্থাৎ সেদিন প্রত্যেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাবে। মানুষ গোপনে যত কর্ম করেছে যত কথা বলেছে কিয়ামতের দিন সব প্রকাশ করে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের পিছনে পতাকা গেড়ে দেয়া হবে এবং ঘোষণা দেয়া হবেÑএ হলো বিশ্বাসঘাতক, অমুকের ছেলে অমুক। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৭৮)
এখানে ‘গোপন বিষয়াদি প্রকাশিত হবে’ বলে মুনাফিক ও চক্রান্তকারীদের মনের মধ্যে লুক্কায়িত কপটতাসমূহ বুঝানো হয়েছে। নইলে বাহ্যিক সালাত, সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদতে সবাই সমান। বকর বিন আব্দুল্লাহ আল-মুনাযী (রহঃ) বলেন : আবূ বকর (রাঃ) অন্যদের থেকে সালাত, সিয়ামে অগ্রগামী নয়। বরং অন্যদের চেয়ে তিনি অগ্রণী হলেন তাঁর হৃদয়ে স্থিত ঈমানের কারণে। (হাকীম, তিরমিযী)
(فَمَا لَه۫ مِنْ قُوَّةٍ)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন মানুষের নিজের কোন ক্ষমতা থাকবে নাÑ যার দ্বারা শাস্তি প্রতিহত করবে এবং অন্য কেউ তাতে সহযোগিতাও করবে না। আল্লাহ তা‘আলা দ্বিতীয়বার শপথ করছেন আকাশের যা
(ذَاتِ الرَّجْعِ)
বা বৃষ্টি বর্ষণকারী। অর্থাৎ আকাশ হতে প্রতি বছর বারবার বৃষ্টি বর্ষণ হয় এবং শপথ করেছেন জমিনের যা
(ذَاتِ الصَّدْعِ)
বা বিদীর্ণ হয়। অর্থাৎ জমিন থেকে ফেটে শস্য উৎপন্ন হয়। শপথ করার পর তার জবাব হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : এ কুরআন অবশ্যই সত্য। কোন ঠাট্টা বা খেল-তামাশার বস্তু নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلاً)
“সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ।” (সূরা আনআম ৬ : ১১৫)
(إِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা সত্যকে অপসারণ করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : আমিও কৌশল করি। অর্থাৎ তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের অপকৌশলকে প্রতিহত করেন। كَيْدًا গোপন কৌশল অবলম্বন করাকে বলা হয়। এ কৌশল মন্দ উদ্দেশ্যে হলে তা নিন্দনীয়। প্রত্যেক যুগের কাফিররা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত করেছে, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللّٰهِ بِأَفْوَاهِهِمْ ط وَاللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِه۪ وَلَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ)
“তারা আল্লাহর নূর তাদের মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” (সূরা সফ ৬১: ৮)
কিন্তু তাদের চক্রান্ত সফল হবে না, আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করবেন।
(فَمَهِّلِ الْكٰفِرِيْنَ)
অর্থাৎ তাদের জন্য তড়িঘড়ি শাস্তি প্রার্থনা করো না বরং তাদেরকে কিছু সময় অবকাশ দাও। رُوَيْدًا শব্দটি قليلا অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এ অবকাশ দেয়াটা আল্লাহ তা‘আলার একটি কৌশল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلٰي عَذَابٍ غَلِيْظٍ)
“আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, পুনরায় তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে।” (সূরা লুকমান ৩১ : ২৪)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِیْنَ کَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُھُمْ مِّنْ حَیْثُ لَا یَعْلَمُوْنَﰅوَاُمْلِیْ لَھُمْﺚ اِنَّ کَیْدِیْ مَتِیْنٌ)
“যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। আমি তাদের অবকাশ দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।” (সূরা আ‘রাফ ৭: ১৮২-৮৩)
অতএব ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু পূর্বেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তারা যতই চক্রান্ত করুক না কেন মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই মুসলিমদের উচিত হবে কাফিরদের শক্তি ও সংখ্যাকে ভয় না করে ইসলামের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।
সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয় শিক্ষা:
১. সূরাটির গুরুত্ব জানতে পারলাম।
২. মানুষ যদি নিজের সৃষ্টি উপাদান নিয়ে চিন্তা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলাকে চিনতে পারবে এবং তাদের জন্য আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা সহজ হবে।
৩. কিয়ামতের দিন কিছুই গোপন থাকবে না, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু উন্মোচন করে দেয়া হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কৌশল করেনে গুণটির প্রমাণ পেলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings