Surah Al Infitar Tafseer
Tafseer of Al-Infitar : 1
Saheeh International
When the sky breaks apart
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও গুরুত্ব:
الانفطار শব্দটি فطر মূল অক্ষর থেকে গঠিত। অর্থ : বিদীর্ণ হওয়া, ফেটে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া। কিয়ামতের পূর্বে আকাশ ফেটে যাবে, তারকারাজি বিক্ষিপ্ত হবে ও সূরায় বর্ণিত অন্যান্য আলামত প্রকাশ পাবে। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الانفطار শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : মুআয বিন জাবাল (রাঃ) ইশার সালাতের ইমামতি করেন এবং তাতে তিনি লম্বা কিরাত পাঠ করেন। (তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো) নাবী (সাঃ) তাকে বললেন : হে মুআয তুমি কি ফিতনা সৃষ্টি করতে চাও?
(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَي)
বা সূরা আলা, وَالضُّحَي সূরা যুহা এবং
(إِذَا السَّمَا۬ءُ انْفَطَرَتْ)
বা সূরা ইনফিতার এগুলো তেলাওয়াত করা থেকে কোথায় ছিলে? (সহীহ বুখারী হা. ৬১০৬) এ ছাড়াও পূর্বের সূরাতে অত্র সূরার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাতে কিয়ামতের কিছু দৃশ্যপট, মানুষের আমল লেখক ফেরেশতাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিয়ামতের দিন সৎকর্মশীল ও অসৎকর্মশীল দুদলে বিভক্ত হবে ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
১-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামত শুরুর প্রাক্কালে আকাশের অবস্থা কেমন হবে তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : انْتَثَرَت অর্থ تساقطت বা তারকারাজি বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়া। فُجِّرَتْ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : একটি অন্যটির মাঝে উদ্বেলিত করবেন। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : লবণাক্ত ও মিষ্টি পানি সব একাকার হয়ে যাবে। ফলে সব সাগর এক সাগরে পরিণত হয়ে যাবে। (ইবনু কাসীর)
بُعْثِرَتْ অর্থাৎ যখন কবর তার মধ্য থেকে মৃত মানুষদের বের করে দেবে, ফলে সবাই হিসাব-নিকাশ ও কর্মের প্রতিদানের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। শুধু কবরস্থ মানুষই আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে এমন নয় বরং প্রত্যেক আত্মা তাকে কবরস্থ করা হোক আর নাই হোক সে আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। যেহেতু অধিকাংশ মৃত ব্যক্তিদেরকে কবর দেয়া হয় তাই কবরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ)
অর্থাৎ যখন এ উল্লিখিত বিষয়গুলো সংঘটিত হবে, তখন মানুষের কৃত আমল প্রকাশ পেয়ে যাবে। যা কিছু ভাল মন্দ আমল করেছে, তা সামনে উপস্থিত পাবে। “পশ্চাতে ছাড়া আমল” বলতে নিজের চাল চলন এবং ভাল মন্দ কাজের নমুনা যা মানুষ দুনিয়ায় ছেড়ে যায় এবং লোকেরা সেই আদর্শের ওপর আমল করে। যদি ভাল আদর্শ রেখে মারা যায় আর লোকেরা তার অনুসরণ করে তাহলে তার জন্য সওয়াব পাবে আর খারাপ আদর্শ ছেড়ে আসলে পাপের ভাগী হবে।
(مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيْمِ)
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তিরস্কার করে বলছেন: কোন্ বস্তু তোমাদেরকে ধোঁকা ও প্রতারণায় ফেলে রেখেছে। যার কারণে তুমি প্রভুকে অস্বীকার করছো। অথচ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্ব প্রদান করেছেন, তোমাদের সামনে এ নিদর্শন পাঠ করে শোনানো হচ্ছে।
(فَعَدَلَكَ) অর্থাৎ উত্তম আকৃতি ও উপযুক্ত গঠন দান করেছেন। বুসর বিন জাহহাশ আল কুরাশী (রাঃ) বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হাতের তালুতে থুথু ফেলে তার ওপর আঙ্গুল রাখলেন এবং বললেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: হে আদম সন্তান! তুমি কি আমাকে অপারগ করতে পারবে? অথচ আমি তোমাকে এই রকম জিনিস হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর সুঠাম করেছি এবং উত্তম গঠন ও আকৃতি দান করেছি। অতঃপর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে চলাফেরা করতে শিখিয়েছি। পরিশেষে তোমার ঠিকানা হবে মাটির গর্ভে। অথচ তুমি বড়ই অহংকার করছো, আমার পথে দান করা থেকে বিরত থেকেছো। তারপর যখন কণ্ঠনালীতে নিঃশ্বাস এসে যায় তখন বলছো; আমি দান খয়রাত করে আসি, এখন দান খয়রাত করার সময় কোথায়? (ইবনু মাযাহ হা. ২৭০৭, সনদ হাসান।)
(فِيْٓ أَيِّ صُوْرَةٍ مَّا شَا۬ءَ رَكَّبَكَ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ভ্রুণকে যার মত ইচ্ছা তার রূপ ও আকারে সৃষ্টি করেন। তার চেহারা পিতা-মাতা, মামা অথবা চাচাদের মত করেন। আবার তিনি ইচ্ছা করলে পশুদের আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ যে, তিনি এরূপ করবেন না। উম্মু সুলাইম (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন : মহিলারা যদি স্বপ্নে তা দেখে পুরুষেরা যা দেখে (এবং এতে কি গোসল করতে হবে?) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : মহিলারা যদি ঐরূপ দেখে (অর্থাৎ স্বপ্নদোষ হয়) তাহলে গোসল করতে হবে। উম্মু সুলাইম (রাঃ) বলেন: এতে আমি লজ্জাবোধ করলাম: তিনি বললেন: এরূপ কি হয়? নাবী (সাঃ) বললেন : হ্যাঁ, তা নাহলে বাচ্চা (পিতা-মাতার) সদৃশ কিভাবে হয়? পুরুষের বীর্য মোটা ও সাদা আর মহিলাদের বীর্য পাতলা ও হলুদ বর্ণের। অতএব যার বীর্য প্রাধান্য পাবে তার সাদৃশ্য নিয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। (সহীহ মুসলিম হা. ৭৩৬) আল্লাহ তা‘আলা এত সুন্দর করে মানুষ সৃষ্টি করলেন এবং সবকিছু তার কর্তৃত্বাধীন করে দিলেন তারপরেও কিভাবে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করে, তাঁর দীনকে বর্জন করে?
(كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُوْنَ بِالدِّيْنِ)
অর্থাৎ এত সতর্ক, নসিহত ও স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও তোমরা কিভাবে দীনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ওপর বহাল রয়েছো।
(وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِيْنَ)
অর্থাৎ তোমাদের আমলসমূহ সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন সম্মানিত ফেরেশতা। তারা তোমাদের কথা ও কাজসমূহ জানে এবং লিপিবদ্ধ করে। এতে অন্তরের কাজ ও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রতঙ্গের কাজ সবকিছু শামিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের সম্মান কর। তাঁরা নাপাক ও পায়খানা যাওয়া অবস্থা ছাড়া কখনও তোমাদের থেকে পৃথক হয় না। অন্য বর্ণনায় গোসলের কথা এসেছে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ১/২৬৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আকাশ, তারকা, সাগর ও কবরের কী অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
২. মানুষ দুনিয়াতে ভাল বা মন্দ কোন কাজের নমুনা রেখে গেলে তার ফলাফল মারা যাওয়ার পরেও পাবে।
৩. মানুষ ভাল-মন্দ যা করছে সবকিছু ফেরেশতা লিখে রাখছেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings