72:1

قُلۡ أُوحِىَ إِلَىَّ أَنَّهُ ٱسۡتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ ٱلۡجِنِّ فَقَالُوٓاۡ إِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡءَانًا عَجَبًا١

Saheeh International

Say, [O Muhammad], "It has been revealed to me that a group of the jinn listened and said, 'Indeed, we have heard an amazing Qur'an.

Tafsir "Tafsir Fathul Mazid" (Bengali)

নামকরণ : الجن-জিন একটি জাতি, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকেও আমাদের মত এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। জিনদের থেকে কোন নাবী-রাসূল আগমন করেনি। মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তা‘আলা যে নাবী বা রাসূল প্রেরণ করেন তা উভয় জাতির জন্য নাবী বা রাসূল হিসাবে বিবেচিত। এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الجن শব্দ থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। শানে নুযূল : ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : একদল সাহাবী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উকায বাজারের দিকে যাত্রা করলেন। এমন সময় জিনদের আসমানী খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে দেওয়া হল এবং তাদের দিকে ছুড়ে মারা হল লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জিন শয়তানরা ফিরে আসলে অন্য জিনেরা বলল : তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল : আসমানী খবরাদি শোনার ক্ষেত্রে আমাদের ওপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং লেলিহান অগ্নিশিখা ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন শয়তান বলল : আসমানি খবরাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে তোমাদের প্রতি যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা অবশ্যই নতুন কোন ঘটনা ঘটার কারণে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত (সারা পৃথিবী) সফর কর এবং দেখ কী নতুন ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে আসমানি খবরাদি সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলছেন : যারা তিহামার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল, তারা “নাখলা” নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখান থেকে উকায বাজারে যাওয়ার মনস্থ করছিলেন। এমন সময় সাহাবীদের নিয়ে ফজর সালাত আদায় করছিলেন। জিনদের ঐ দলটি কুরআন শুনতে পেয়ে আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল এবং বলল : আসমানি খবর আর তোমাদের মাঝে এটাই বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা স্বজাতির কাছে ফিরে এসে বলল : হে আমাদের জাতি আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি যা সঠিক পথ দেখায়। এতে আমরা ঈমান এনেছি আর আমরা কখনো প্রতিপালকের সাথে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ সূরাটি অবতীর্ণ করলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯২১, সহীহ মুসলিম হা. ৪৪৯) সূরা আহকাফের ২৯ নম্বর আয়াতের টীকায় এ ঘটনা উল্লেখ আছে। সূরায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে : ১. এতে ইসলামের কয়েকটি মৌলিক আকীদাহর ওপর জিনদের সাক্ষ্য হাযির করা হয়েছে। এসব আকীদাহকে মুশরিকরা সরাসরি অস্বীকার করত এবং এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হত। কখনো তারা দাবী করত যে, মুহাম্মাদ তাদের কাছে অদৃশ্য আকীদাহ বিশ্বাস সংক্রান্ত যেসব কথা বলে থাকে তা সে জিনদের থেকে সংগ্রহ করে। এর জবাবে স্বয়ং জিনদের সাক্ষ্য উপস্থিত করা হয়েছে। জিনেরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে শ্রবণের পূর্বে কুরআন সম্পর্কে কিছুই জানতো না। এ কারণে যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনলো তখনি তারা ভয়ে ও আতংকে এত অধীর হয়ে পড়লো যে, তারা কিছুতেই চুপ থাকতে পারলো না। তারা সর্বত্র এ কথা প্রচার করে দিলো। ২. এ সূরা দ্বারা পাঠকদের মনে জিনদের ব্যাপারে বিরাজমান অনেক ভ্রান্ত ধারণার সংশোধন করা হয়েছে। এসব ভুল ধারণা কুরআন নাযিল হওয়ার সময়কার শ্রোতাদের মনেও ছিল, তাদের ও পরের লোকদের মনেও ছিল। কুরআন এ অদৃশ্য সৃষ্টির প্রকৃত তথ্য কোন অতিরঞ্জন ও রাখঢাক ছাড়াই প্রকাশ করেছে। কুরআনের প্রাথমিক শ্রোতা আরবরা ভাবতো যে, পৃথিবীর ওপর জিনদের একটি আধিপত্য রয়েছে, সে জন্যই একজন আরব পৌত্তলিক যখন কোন এলাকায় অবতরণ করত তখন তারা সে এলাকার জিনদের থেকে আশ্রয় চাইতো। ১-৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর : এ আয়াতগুলো প্রমাণ করছে, জিনদের মধ্যে একশ্রেণির জিন রয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসী। তারা মু’মিন। আব্দুর রহমান বলেন : আমি মাসরূককে জিজ্ঞাসা করলাম, যে রাতে জিনরা মনোযোগের সাথে কুরআন শ্রবণ করেছিল ঐ রাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের উপস্থিতির কথা জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন : তোমার পিতা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, একটি গাছ তাদের উপস্থিতির খবর দিয়েছিল। (সহীহ বুখারী হা. ৩৮৫৯, সহীহ মুসলিম হা. ৪৫০)شَطَطًا অর্থ جور বা মিথ্যা কথা। (وَّأَنَّا ظَنَنَّآ أَنْ لَّنْ تَقُوْلَ....) অর্থাৎ আমাদের বিশ্বাস ছিল-মানুষ ও জিনেরা আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে না। এখন আমরা কুরআন শুনলাম এবং তাদের ভ্রান্ত আকিদাহ জানতে পারলাম। (...كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنْسِ يَعُوْذُوْنَ) অর্থাৎ জাহিলিয়াতের যুগে একটি প্রচলন ছিল যে, যখন তারা কোথাও সফর করত তখন সেখানে অবস্থিত জিনদের থেকে আশ্রয় চাইত। যেমন অঞ্চলের বিশেষ ব্যক্তি এবং সরদারের কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। ইসলাম এ প্রচলন বাতিল করে দিয়েছে। আশ্রয় চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে সে শির্কে লিপ্ত হবে। যাবতীয় বালা মসিবত ও অনিষ্ট থেকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতে হবে।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে ব্যক্তি কোন জায়গায় অবতরণ করবে এবং বলবে : أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ আমি আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। তাহলে সে স্থান ত্যাগ করার পূর্বে তাকে কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম হা. ৭০৫৩)رَهَقًا অর্থ : অবাধ্যতা, অহংকার। জিনদের কাছে মানুষের আশ্রয় চাওয়ার কারণে তাদের অহংকার আরো বেড়ে যেত। يَّبْعَثَ اللّٰهُ এখানে بعث এর দু’টি অর্থ হতে পারে- (১) কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না বলে বিশ্বাস করত, (২) কাউকে আর নাবীরূপে প্রেরণ করবেন না-এ বিশ্বাস রাখতো। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় : ১. জিনদের মধ্যেও অনেক মু’মিন জিন রয়েছে। ২. আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে। কোন জিন শয়তান বা মানুষ শয়তানের কাছে নয়।

Arabic Font Size

30

Translation Font Size

17

Arabic Font Face

Help spread the knowledge of Islam

Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.

Support Us