Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 270
Saheeh International
And whatever you spend of expenditures or make of vows - indeed, Allah knows of it. And for the wrongdoers there are no helpers.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
মহান আল্লাহ্ সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি প্রত্যেকটি দান, প্রতিজ্ঞা বা নযর ও ভালো কাজের খবর রাখেন। তাঁর যেসব বান্দা তাঁর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে, স্বীয় সৎকাজের প্রতিদানের আশা রাখে, তাঁর ওয়া‘দার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখে, তাদেরকে তিনি উত্তম প্রতিদান দিবেন। পক্ষান্তরে যারা তাঁর আদেশ ও নিষেধ অমান্য করবে, তাঁর সাথে অন্যদেরও উপাসনা করবে, তারা অত্যাচারী। কিয়ামতের দিন তাদেরকে বিভিন্ন প্রকারের কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে এবং সেই দিন এমন থাকবে না যে তাদেরকে ঐ শাস্তি হতে মুক্তি দিতে পারে বা কোন সাহায্য করতে পারে।
প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য দান করার গুরুত্ব
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ اِنْ تُبْدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا هِیَ١ۚ وَاِنْ تُخْفُوْهَا وَ تُؤْتُوْهَا الْفُقَرَآءَ فَهُوَ خَیْرٌ لَّكُمْ ﴾
প্রকাশ্যভাবে দান করাও ভালো এবং গোপনে দরিদ্র ও মিসকীনদেরকে দেয়াও উত্তম। কেননা গোপন দানে রিয়াকারী বহু দূরে সরে থাকে। তবে যদি প্রকাশ্য দানের ব্যাপারে দাতার মহৎ কোন উদ্দেশ্য থাকে তাহলে সেটা অন্য কথা। যেমন তার উদ্দেশ্য এই যে, তার দেখাদেখি অন্যরাও দান করবে ইত্যাদি।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
الْجَاهِرُ بِالْقُرْآنِ كَالْجَاهِرِ بِالصَّدَقَةِ وَالْمُسِرُّ بِالْقُرْآنِ كَالْمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ.
‘প্রকাশ্য দানকারী উচ্চ শব্দে কুর’আন পাঠকের ন্যায় এবং গোপনে দানকারী ধীরে ধীরে কুর’আন পাঠকের ন্যায়।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান আবূ দাঊদ২/৩৮/১৩৩৩, জামি‘ তিরমিযী-৫/১৬৫/১৯১৯, সুনান নাসাঈ -৫/৮৪/২৫৬০, মুসনাদ আহমাদ -৪/১৫১, ১৫৮) কুর’আন মাজীদের এই আয়াত দ্বারা গোপন দানের শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত হচ্ছে।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: إِمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجِمَالٍ فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقُ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ.
‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ সাত প্রকারের লোককে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায় বিচারক বাদশাহ। (২) সেই নব-যুবক যে তার যৌবন মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদতে অতিবাহিত করেছে। (৩) ঐ দুই ব্যক্তি যারা মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসা রেখেছেন, ঐ জন্যই তারা একত্রিত থাকে এবং ঐ জন্যই পৃথক হয়। (৪) ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মাসজিদ হতে বের হওয়া থেকে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত মাসজিদে সংযুক্ত থাকে। (৫) ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে মহান আল্লাহ্র যিকর করে, অতঃপর তার নয়নযুগল হতে অশ্র“ধারা নেমে আসে। (৬) ঐ ব্যক্তি যাকে একজন বংশ মর্যাদা ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী নারী নির্লজ্জতার কাজে আহ্বান করে তখন সে বলে, নিশ্চয়ই আমি সারা জগতের রাব্ব মহান আল্লাহ্কে ভয় করি। (৭) ঐ ব্যক্তি যে এতো গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানতে পারে না।’ (সহীহুল বুখারী-২/৭১৫/৯১, ফাতহুল বারী -৩/৩৪৪, সহীহ মুসলিম-২/৭১৫, জামি‘ তিরমিযী-৪/৫১৬/২৩৯১, সুনান নাসাঈ -৮/৬১৩/৫৩৯৫, মুসনাদ আহমাদ -২/৪৩৯)
মুসনাদ আহমাদে রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْأَرْضَ جَعَلَتْ تَمِيدُ، فَخَلَقَ الْجِبَالَ فَأَلْقَاهَا عَلَيْهَا فَاسْتَقَرَّتْ، فَتَعَجَّبَتِالْمَلَائِكَةُ مِنْ خَلْقِ الْجِبَالِ، فَقَالَتْ: يَا رَبِّ، فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْجِبَالِ؟ قَالَ: نَعَمْ، الْحَدِيدُ. قَالَتْ: يَا رَبِّ، فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْحَدِيدِ؟ قَالَ: نَعَمْ، النَّارُ. قَالَتْ: يَا رَبِّ، فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: نَعَمْ، الْمَاءُ. قَالَتْ: يَا رَبِّ، فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الْمَاءِ؟ قَالَ: نَعَمْ، الرِّيحُ. قَالَتْ: يَا رَبِّ، فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الرِّيحِ؟ قَالَ: نَعَمْ، ابنُ آدَمَ يَتَصَدَّقُ بِيَمِينِهِ فَيُخْفِيهَا مِنْ شَمَالِهِ.
‘যখন মহান আল্লাহ্ পৃথিবী সৃষ্টি করেন তখন পৃথিবী দুলতে আরম্ভ করে। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পর্বত সৃষ্টি করে পৃথিবীর মধ্যে গেড়ে দেন। ফলে পৃথিবীর ক¤পন থেমে যায়। মহান আল্লাহ্ পর্বতরাজীকে এতো শক্ত করে সৃষ্টি করেছেন দেখে ফিরিশতাগণ মহান আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করেনঃ হে মহান আল্লাহ্! আপনার সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে পর্বত অপেক্ষা শক্ত আর কিছু আছে কি? মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হ্যাঁ লৌহ রয়েছে, এর চেয়ে শক্ত হচ্ছে অগ্নি এর চেয়ে শক্ত পানি, এর চেয়ে শক্ত বাতাস। তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ হে মহান আল্লাহ্! বাতাস অপেক্ষা শক্ত অন্য কিছু আছে কি? মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হ্যাঁ সেই আদম সন্তান যে এমন গোপন দান করে যে, তার দক্ষিণ হস্ত যা খরচ করে বাম হস্ত তা জানতে পারে না। আয়াতুল কুরসীর তাফসীরে এই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, উত্তম দান হচ্ছে এটাই যা গোপন কোন অভাবগ্রস্তকে দেয়া হয় এবং মালের স্বল্পতা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ্র পথে খরচ করা হয়। অতঃপর তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেন। (ইবনু আবী হাতিম, মুসনাদ আহমাদ -৩/১২৪, জামি‘ তিরমিযী-৫/৪২৩/৩৩৬৯) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
صَدَقَةُالسِّرِّتُطْفِئُغَضَبَالرَّبِّعَزَّوَجَلَّ.
‘গোপন দান মহান আল্লাহ্র ক্রোধ প্রশমিত করে।’ (হাদীসটি হাসান। জামি‘ তিরমিযী-৩/৫২/৬৬৪, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ-৩/১১৫, সিলসিলাতুস সহীহাহ-১৯০৮) শা‘বী (রহঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ) এবং ‘উমার ফারুক (রাঃ) -এর সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়। ‘উমার (রাঃ) তো তার অর্ধেক মাল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খিদমতে এনে হাজির করেন। আর আবূ বাকর (রাঃ) বাড়ীতে যা ছিলো সবই এনে উপস্থিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমার (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করেনঃ পরিবারবর্গের জন্য কিছু রেখে এসেছো কি? ‘উমার (রাঃ) উত্তর দেনঃ এতোটিই ছেড়ে এসেছি। আবূ বাকর (রাঃ) -এর এটা প্রকাশ করার ইচ্ছা ছিলো না এবং গোপনে সবকিছু তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তাকেও যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন তখন বাধ্য হয়ে তিনি বলেনঃ মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অঙ্গীকারই যথেষ্ট। একথা শুনে ‘উমার (রাঃ) কেঁদে ফেলেন এবং বলেনঃ হে আবূ বাকর (রাঃ) ! যে কোন সৎকার্যের দিকে আমরা অগ্রসর হয়েছি, আপনাকে অগ্রেই দেখেছি। এই আয়াতের শব্দগুলো সাধারণ দান। ফরয হোক, নফল হোক, যাকাত হোক বা খায়রাত হোক, প্রকাশ্যে দান করার চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নফল দান গোপনে দেয়ার ফযীলত সত্তরগুণ : কিন্তু ফরয দান অর্থাৎ যাকাত প্রকাশ্যে দেয়ার ফযীলত পঞ্চাশগুণ।
অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘দানের বিনিময়ে মহান আল্লাহ্ তোমাদের পাপ ও অন্যায় দূর করে দিবেন, বিশেষ করে যখন গোপনে দান করা হবে। এর বিনিময়ে তোমরা বহু সুফল প্রাপ্ত হবে। এর দ্বারা তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং পাপসমূহ ক্ষমা হয়ে যাবে।’ ‘ইউকাফ্ফেরু’ শব্দকে ইউকাফ্ফের পড়া হয়েছে। এতে বাহ্যতঃ এটা শর্তের জবাবের স্থলে عَطْف হবে, যা হচ্ছে (২নং সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত-২৭১) فَنِعِمَّهِىَ শব্দটি। যেমন فَاَصَّدَّقَوَاَكُنْ -এর মধ্যে (৬৩ নং সূরাহ আল মুনাফিকূন, আয়াত-১০) اَكُنْ শব্দটি রয়েছে। এরপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘তোমাদের কোন পাপ ও সাওয়াবের কাজ, দানশীলতা ও কার্পণ্য, গোপনীয় ও প্রকাশ্য, সৎ উদ্দেশ্য ও দুনিয়া অনুসন্ধান প্রভৃতি কিছুই মহান আল্লাহ্র অজানা নেই। সুতরাং তিনি পূর্ণভাবে প্রতিদান প্রদান করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings