Surah Al Baqarah Tafseer
Tafseer of Al-Baqarah : 187
Saheeh International
It has been made permissible for you the night preceding fasting to go to your wives [for sexual relations]. They are clothing for you and you are clothing for them. Allah knows that you used to deceive yourselves, so He accepted your repentance and forgave you. So now, have relations with them and seek that which Allah has decreed for you. And eat and drink until the white thread of dawn becomes distinct to you from the black thread [of night]. Then complete the fast until the sunset. And do not have relations with them as long as you are staying for worship in the mosques. These are the limits [set by] Allah, so do not approach them. Thus does Allah make clear His ordinances to the people that they may become righteous.
Ibn Kathir Partial
Tafseer 'Ibn Kathir Partial' (BN)
রামাযানের রাতে পানাহার ও স্ত্রী গমন করা যাবে
এটা মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মুসলিমগণের প্রতি একটি অবকাশ এবং পূর্বের যে বিধান ছিলো তা রহিতকরণ। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইফতারের পর থেকে ‘ঈশা পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস বৈধ ছিলো। আর যদি কেউ এর পূর্বেই শুইয়ে যেতো তাহলে নিদ্রা এলেই তার জন্য ঐ সব কর্ম হারাম হয়ে যেতো। এর ফলে সাহাবীগণ (রাঃ) কষ্ট অনুভব করছিলেন। ফলে এই ‘রুখসাতে’র আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় এবং তারা সহজেই নির্দেশ পেয়ে যান। رَفَثٌ এর অর্থ এখানে ‘স্ত্রী সহবাস’। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আতা (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ), তাঊস (রহঃ), সালিম ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রহঃ), ‘আমর ইবনে দীনার (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), যুহরী (রহঃ), যাহহাক (রহঃ), ইবরাহীম নাসা‘ঈ (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ), ‘আতা আল খুরাসানী (রহঃ) এবং মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রহঃ)-ও এটাই বলেছেন। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৬৭-৩৭১)
لِبَاسٌ এর ভাবার্থ হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা। রাবী‘ ইবনে আনাস (রহঃ) এর অর্থ ‘লেপ’ নিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এতো গাঢ় যার জন্য সিয়ামের রাতেও তাদেরকে মিলনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণের হাদীস ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে যে, ইফতারের পূর্বে কেউ ঘুমিয়ে পড়ার পর রাতের মধ্যেই জেগে উঠলেও সে পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস করতে পারতো না। কারণ তখন এই নির্দেশই ছিলো। অতঃপর মহান আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করে আগের নির্দেশ উঠিয়ে নেন। এখন সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি মাগরিব থেকে সুবহি সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলন করতে পারবে। কায়িস ইবনে সিরমা (রাঃ) সারাদিন জমিতে কাজ করে সন্ধ্যার সময়ে বাড়িতে ফিরে আসে। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, কিছু খাবার আছে কি? তিনি বলেনঃ ‘কিছুই নেই। আমি যাচ্ছি এবং কোথাও হতে নিয়ে আসছি।’ তিনি যান, আর এদিকে তাকে ঘুম পেয়ে বসে। স্ত্রী ফিরে এসে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে খুবই দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, এখন এই রাত এবং পরবর্তী সারাদিন কিভাবে কাটবে? অতঃপর দিনের অর্ধভাগ অতিবাহিত হলে কায়িস (রাঃ) ক্ষুধার জ্বালায় চেতনা হারিয়ে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে এর আলোচনা হয়। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং মুসলিমগণ সন্তুষ্ট হয়ে যান। (হাদীস সহীহ। তাফসীর তাবারী ৩/৪৯৫, সহীহুল বুখার ৪/১৫৪/১৯১৫, সুনান আবূ দাউদ ২/২৯৫,২৩২৪,জামি‘ তিরমিযী ৫/১৯৪/২৯৬৮, সুনান দারিমী-২/১০/১৬৯৩, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ৩/২০/১৯০৪, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৯৫)
একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, সাহাবীগণ (রাঃ) সারা রামাযানে স্ত্রীদের নিকট যেতেন না। কিন্তু কতক সাহাবী (রাঃ) ভুল করে বসতেন। ফলে عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَیْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ١ۚ فَالْـٰٔنَ بَاشِرُوْهُنَّ এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এই ভুল কয়েকজন মনীষীর হয়েছিলো। তাদের মধ্যে ‘উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ছিলেন একজন। যিনি ‘ঈশার সালাতের পর স্বীয় স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছিলেন। অতঃপর তিনি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করেন। ফলে عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَیْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ١ۚ فَالْـٰٔنَ بَاشِرُوْهُنَّ এই রহমতের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে আল ‘আউফী (রহঃ) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী ৩/৪৯৬-৪৯৮)
একটি বর্ণনায় রয়েছে যে ‘উমার (রাঃ) এসে যখন এই ঘটনাটি বর্ণনা করেন তখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেনঃ হে ‘উমার (রাঃ)! তোমার ব্যাপারে তো এটা আশা করা যায়নি। অতঃপর সেই সময়েই احل لكم ليلة الصيام الرفث الى نسائكم এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, কায়িস (রাঃ) ‘ঈশার সালাতের পরে ঘুম হতে চেতনা লাভ করে পানাহার করে ফেলেছিলেন। সকালে তিনি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে হাজির হয়ে এই দোষ স্বীকার করেছিলেন।
একটি বর্ণনায় এটাও রয়েছে, সাহাবীগণ (রাঃ) পুরো রামাযান মাসে স্ত্রীদের নিকট যেতেন না। কিন্তু কতক সাহাবী (রাঃ) ভুল করে বসতেন। ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহুল বুখারী-৮/৩০/৫৪০৮, ফাতহুল বারী ৮/৩০) ‘আলী ইবনে আবি তালহা (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ রামাযান মাসে মুসলিমগণ ‘ঈশা সালাত আদায় করার পর তারা আর স্ত্রী গমন করতেন না এবং পরবর্তী রাত না আসা পর্যন্ত খাদ্যও খেতেন না। এমনকি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সহ কেউ কেউ তাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করেন এবং ‘ঈশা সালাত আদায় করার পর খাবারও খেয়ে ফেলেন। তারা এই বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করেন। তখন মহান আল্লাহ احللكمليلةالصيامالرفثالىنسائكم এই আয়াতটি নাযিল করেন। এখানে الرفث থেকে উদ্দেশ্য হলো স্ত্রী মিলন।
অতঃপর ‘মহান আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে।’ অর্থাৎ তোমরা ‘ঈশার পর স্ত্রী মিলন ও পানাহার করার মধ্যে ভুল করতেছিলে। ‘তারপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সহবাস করো।’
মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ﴾ ‘অতএব মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান করো।’ অর্থাৎ সন্তান চাও। ‘তোমরা আহার ও পান করতে থাকো যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা থেকে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায়। অতঃপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ অতএব এ সবই ছিলো মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে দয়া ও অকুম্পা। ﴿وَابْتَغُوْا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَكُمْ﴾ ‘অতএব মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান করো।’ এর ভাবার্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), আনাস (রাঃ), শুরাহ আল কাযী (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), ইকরামাহ (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ), ‘আতা (রহঃ), বারী‘ ইবনে আনাস (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ), যা‘ঈদ ইবনে আসলাম (রহঃ), হাকাম ইবনে ‘উবাদাহ (রহঃ), মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), যাহহাক (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং অন্যান্যরা বলেছেন যে, এটা হলো সন্তান-সন্ততি। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৭৭-৩৭৮, তাফসীর তাবারী ৩/৫০৬-৫০৭)
কাতাদাহ (রহঃ) আরো বলেন যে, এর অর্থ হলো মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য যা হালাল করেছেন তার জন্য অনুমতি চাওয়া। এসব উক্তির এভাবে সাদৃশ্য দান করা যেতে পারে যে, সাধারণভাবে ভাবার্থ সবগুলোই হবে। সহবাসের অনুমতির পর পানাহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে যে, সুবহি সাদিক পর্যন্ত এর অনুমতি রয়েছে।
সাহরী খাওয়ার শেষ সময়
মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿ وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا حَتّٰى یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ مِنَ الْخَیْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ١۪ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَى الَّیْلِ﴾
‘তোমরা আহার ও পান করতে থাকো যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা থেকে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায়। অতঃপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ আমরা ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি যে, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে রামাযান মাসের রাতের খাবার খাওয়া, পান করা এবং স্ত্রী গমন করা হালাল করেছেন, যতোক্ষণ না রাতের কালো আঁধার দূর হয়ে সুবহি সাদিক এর আলো পরিলক্ষিত হয়। মহান আল্লাহ এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যতোক্ষণ না সাদা সুতা থেকে কালো সুতা পার্থক্য করা যায়।’ অতঃপর তিনি আরো পরিস্কার করে জানিয়ে দিলেন, এটা হলো ঊষার লগ্ন। সহীহুল বুখারীতে রয়েছে, সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) বলেনঃ ‘পূর্বে مِنَ الْفَجْرِ শব্দটি অবতীর্ণ হয়নি। ‘আর প্রতুষ্যে কালো সুতা হতে সাদা সুতা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা আহার ও পান করো’ আয়াত নাযিল হওয়ার পর কিছু লোক তাদের পায়ে সাদা ও কালো সুতা বেঁধে নেন। আর যে পর্যন্ত সাদা ও কালোর মধ্যে প্রভেদ করা যেতো সে পর্যন্ত তারা পানাহার করতো। অতঃপর ফজর শব্দটি অবতীর্ণ হয়। ফলে জানা যায় যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে রাত ও দিন। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৪/১৫৭/১৯১৭, ৮/৩১/৪৫১১, সহীহ মুসলিম ২/৩৫/৭৬৭, সুনান আবূ দাউদ ২/৩০৪/২৩৪৯, ফাতহুল বারী ৮/৩১) সহীহুল বুখারীতে অন্য হাদীসে রয়েছে, ‘আদী ইবনে হাতীম (রাঃ) বলেনঃ ‘আমিও আমার বালিশের নীচে সাদা ও কালো দু’টি সুতা রেখেছিলাম এবং যে পর্যন্ত এই দুই রঙের মধ্যে পার্থক্য না করা যেতো সে পর্যন্ত পানাহার করতাম। সকালে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এটা বর্ণনা করি। তখন তিনি বলেনঃ ‘তোমার বালিশ তো খুব লম্বা চওড়া’ বরং তা হচ্ছে রাতের অন্ধকার এবং দিনের শুভ্রতা। (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম- ২/৩৩/৭৬৬, ৭৬৭, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৭৭)
সাহরী খাওয়ার নির্দেশ
ঊষা পর্যন্ত খাওয়া এবং পান করার অনুমতি দিয়ে মহান আল্লাহ সাহরী খাওয়াকে উৎসাহিত করেছেন, অর্থাৎ এটি তাঁর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাড় বা অনুমোদন। মহান আল্লাহ চান যে, তাঁর বান্দারা তার অনুগ্রহ গ্রহণ করুক এবং নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করুক। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে সাহরী খাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحور بَرَكَةٌ
‘তোমরা সাহরী খাবে, তাতে বরকত রয়েছে।’ (সহীহুল বুখারী-৪/১৬৫/১৯২৩, সহীহ মুসলিম- ২/৪৫/৭৭০,ফাতহুল বারী ৪/১৬৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ
إن فَصْل (1) مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَر
‘আমাদের এবং আহলে কিতাবের মধ্যে পার্থক্য সাহরী খাওয়া।’ (সহীহ মুসলিম ২/৪৬/৭৭০, ৭৭১)
তিনি আরো বলেছেনঃ
السَّحور أكْلُهُ بَرَكَةٌ؛ فَلَا تَدَعُوهُ، وَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ يَجْرَع جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ
‘সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। সুতরাং তোমরা এটা পরিত্যাগ করো না। যদি কিছুই না থাকে তাহলে এক ঢোক পানিই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সেহরি ভোজনকারীদের প্রতি করুণা বর্ষণ করেন।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৪) এই প্রকারের আরো বহু হাদীস রয়েছে।
সাহরী বিলম্বে খাওয়া উচিত
সাহরী বিলম্বে খাওয়া উচিত, যেন সাহরীর খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সুবহি সাদিক হয়ে যায়। আনাস (রাঃ) বলেনঃ ‘আমরা সাহরী খাওয়া মাত্রই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতাম। আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলোঃ যে, সাহরী খাওয়ার শেষ সময় ও ফজরের আযানের শুরুর মাঝে কত সময়ের ব্যবধান থাকতো। তিনি বলেনঃ আযান ও সাহরীর মধ্যে ব্যবধান শুধুমাত্র এতোটুকুই থাকতো যে, পঞ্চাশটি আয়াত পড়ে নেয়া যায়।’ (সহীহুল বুখারী ৪/১৬৪/১৯২১, সহীহ মুসলিম ২/৪৭/৭৭১, ফাতহুল বারী ৪/১৬৪) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْإِفْطَارَ وَأَخَّرُوا السُّحُورَ.
‘যে পর্যন্ত আমার উম্মাত ইফতারে তাড়াতাড়ি ও সাহরীতে বিলম্ব করবে সে পর্যন্ত তারা মঙ্গলের মধ্যে থাকবে। (সহীহুল বুখারী ৪/২৩৪/১৯৫৭, সহীহ মুসলিম ২/৪৭/৭৭১, মুসনাদে আহমাদে- ৫/১৪৭, ১৭২)
হাদীস দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম রেখেছেন বরকতময় খাদ্য। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ-৪/১২৬, ১২৭, ১৩২, সুনান নাসাঈ-৪/৪৫৪/২১১৩, ২১৬৪, সুনান আবূ দাউদ-২/৩০৩/২৩৪৪, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্-১৯৩৮) মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীসে আছে, হুযাইফাহ (রাঃ) বলেনঃ
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাহরী খেয়েছি এমন সময়ে যে, যেন সূর্য উদিতই হয়ে যাবে।’ (হাদীসটি সহীহ। সুনান নাসাঈ ৪/৪৫০/২১৫১, সুনান ইবনে মাজাহ- ১/৫৪১/১৬৯৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯৬/৩৯৯, ৪০০, ৪০৫) কিন্তু এই হাদীসের বর্ণনাকরী একজনই এবং তিনি হচ্ছেন ‘আসিম ইবনু আবূ নাজুদ। এর ভাবার্থ হচ্ছে দিন নিকটবর্তী হওয়া। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
﴿وَاِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغْنَ اَجَلَهُنَّ فَاَمْسِكُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ اَوْ سَرِّحُوْهُنَّ بِمَعْرُوْفٍ﴾
‘যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দাও এবং তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে আসে তখন হয় তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করে রেখে দাও, নইলে ভালোভাবে বিদায় দাও।’ (২ নং সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ২৩১) এখানে ‘তাদের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে আসে’ অর্থাৎ ইদ্দতের নিকটবর্তী হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অধিকাংশ সাহাবী (রাঃ)-এর বিলম্বে সাহরী খাওয়া এবং শেষ সময় পর্যন্ত খেতে থাকা সাব্যস্ত আছে। যেমন আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ), ‘আলী (রাঃ), ইবনে মাস‘ঊদ (রহঃ), হুযাইফাহ (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ইবনে ‘উমার (রাঃ), ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) ও যায়দ ইবনে সাবিত (রাঃ)। তাবি‘ঈদেরও একটি বিরাট দল হতে সুবহি সাদিক হয়ে যাওয়ার একেবারে নিকটবর্তী সময়েই সাহরী খাওয়া বর্ণিত আছে। যেমন মুহাম্মাদ ইবনে ‘আলী ইবনে হুসাইন (রহঃ), আবূ মিযলাজ (রহঃ), ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) আবূয যুহা (রহঃ) ও আবূ ওয়াইল (রহঃ) প্রমুখ ইবনে মাস‘উদের ছাত্রগণ, ‘আতা (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), হাকিম ইবনে ‘উয়াইনাহ (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), উরওয়া ইবনে যুবাইর (রহঃ), আবুশ শাশা (রহঃ) জাবির ইবনে মা‘মার ইবনু রাশিদ (রহঃ), আ‘মাশ (রহঃ) এবং জাবির ইবনে রুশদের (রহঃ)-ও এটাই মাযহাব। মহান আল্লাহ এদের সবারই ওপর শান্তি বর্ষিত করুন।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَا يَمْنَعُكُمْ أذانُ بِلَالٍ عَنْ سَحُوركم، فَإِنَّهُ يُنَادِي بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى تَسْمَعُوا أَذَانَ ابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ لَا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.
‘বিলাল (রাঃ) এর আযান শুনে তোমরা সাহরী খাওয়া হতে বিরত হবে না। কেননা তিনি রাত থাকতেই আযান দিয়ে থাকেন। তোমরা খেতে ও পান করতে থাকো যে পর্যন্ত না ‘আবদুল্লাহ ইবনে উম্মু মাকতূম আযান দেন। ফজর প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি আযান দেন না।’ (সহীহুল বুখারী-৪/১৬২/১৯১৯, সহীহ মুসলিম- ২/৭৬৮, ফাতহুল বারী ৪/১৬২) মুসনাদে আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَيْسَ الفجرُ الْمُسْتَطِيلُ فِي الْأُفُقِ وَلَكِنَّهُ الْمُعْتَرِضُ الْأَحْمَرُ
‘এটা ফজর নয় যা আকাশের দিগন্তে লম্বভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফজর হলো লাল রং বিশিষ্ট এবং দিগন্তে প্রকাশমান। (হাদীসটি হাসান। মুসনাদে আহমাদ ৪/২৩, জামি তিরমিযী-৩/৮৫/৭০৫, সুনান আবূ দাউদ ২/৩০৪/২৩৪৮, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্-৩/২১১) তিরমিযীতেও এই বর্ণনাটি রয়েছে। তাতে রয়েছেঃ
‘সেই প্রথম ফজরকে দেখে নাও যা প্রকাশিত হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। সেই সময় পানাহার থেকে বিরত হয়ো না, বরং খেতে ও পান করতেই থাকো, যে পর্যন্ত না দিগন্তে লালিমা প্রকাশ পায়। (জামি‘ তিরমিযী ৩/৩৮৯)
‘যুনুব’ অবস্থায় সিয়াম পালন করা যাবে
জিজ্ঞাস্যঃ যেহেতু মহান আল্লাহ সিয়ামপালনকারীর জন্য স্ত্রী সহবাসও পানাহারের শেষ সময় সুবহি সাদিক নির্ধারণ করেছেন, কাজেই এর দ্বারা এই মাস’আলার ওপর দালীল গ্রহণ করা যেতে পারে, সকালে যে ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় উঠলো, অতঃপর গোসল করে তার সিয়াম পুরা করলো, তার ওপর কোন দোষ নেই। চার ইমাম ও পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিজ্ঞজনদের এটাই অভিমত। সহীহুল বুখারী ও মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সহবাস করে সকালে অপবিত্র অবস্থায় উঠতেন, অতঃপর গোসল করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন। (সহীহুল বুখারী ৪/১৬৯, ১৭০/১৯২৫, ১৯২৬, সহীহ মুসলিম-২/৭৮০, ৭৭১/৭৮) তাঁর এই অপবিত্রতা স্বপ্ন দোষের কারণে হতো না। উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, এর পরে তিনি সিয়াম ছেড়েও দিতেন না এবং কাযাও করতেন না। (ফাতহুল বারী ৪/১৮২, সহীহ মুসলিম ২/৭৭/৭৮০)
সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একটি লোক বলেঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ফজরের সালাতের সময় হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি অপবিত্র থাকি, আমি সিয়াম পালন করতে পারি কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেনঃ ‘এরূপ ঘটনা স্বয়ং আমারও ঘটে থাকে এবং আমি সিয়াম পালন করে থাকি।’ লোকটি বলেঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা তো আপনার মতো নই। আপনার পূর্বের ও পরের সমস্ত পাপ মা‘ফ করে দেয়া হয়েছে।’ তখন তিনি বলেনঃ
وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أكونَ أَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَعْلَمُكُمْ بِمَا أَتَّقِي
‘মহান আল্লাহ্র শপথ! আমি তো আশা রাখি যে, তোমাদের সবার অপেক্ষা মহান আল্লাহকে বেশি ভয় আমিই করি এবং তোমাদের সবার চেয়ে আল্লাহভীরুতার কথা আমিই বেশি জানি।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ২/৭৯/৭৮১, সুনান আবূ দাউদ ২/৩১২/২৩৮৯, মওয়াত্তা ইমাম মালিক-১/৯/২৮৯, মুসনাদে আহমাদ-৬/৬৭/২৪৫)
মুসনাদে আহমাদের একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন ফজরের আযান হয়ে যায় এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অপবিত্র থাকে সে যেন ঐদিন সাওম না রাখে। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৩/৩১৪) এই হাদীসটির ইসনাদ খুবই উত্তম এবং এটা ইমাম বুখারী (রহঃ) ও ইমাম মুসলিম (রহঃ) এর শর্তের ওপর রয়েছে। এই হাদীসটি সহীহুল বুখারীর ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি ফযল ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন।
সুনানে নাসাঈর মধ্যেও এই হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি ‘উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে এবং ফযল ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন কিন্তু মারফূ‘ করে বর্ণনা করেননি। এ জন্যই কোন কোন ‘আলেমের উক্তি এই যে, এই হাদীসটির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। কেননা এটা মারফূ‘ নয়। অন্যান্য কতকগুলো ‘আলেমের মাযহাব এটাই। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), সালিম (রাঃ), আতা (রহঃ), হিসাম ইবনে ‘উরওয়া (রহঃ) এবং হাসান বাসরী (রহঃ) এ কথাই বলেন। কেউ কেউ বলেন যে যদি কেউ নাপাক অবস্থায় শুয়ে যায় এবং জেগে উঠে দেখে যে, সুবহে সাদিক হয়ে গেছে তবে তার সাওমের কোন ক্ষতি হবে না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং উম্মু সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের ভাবার্থ এটাই। আর যদি সে ইচ্ছাপূর্বক গোসল না করে এবং সকাল হয়ে যায় তবে তার সাওম হবে না। কেউ কেউ বলেন যে, যদি ফরয সাওম হয় তবে পূর্ণ করে নিবে এবং পরে আবার অবশ্যই কাযা করতে হবে। আর যদি নফল সাওম হয় তবে কোন দোষ নেই। ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) এটাই বলেন। খাজা হাসান বাসরী (রহঃ) হতেও একটি বর্ণনায় এটা রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা মানসূখ হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ইতিহাসে কোন প্রমাণ নেই যার দ্বারা মানসূখ সাব্যস্ত হতে পারে। ইবনে হাযাম (রহঃ) বলেন যে, এর নাসিখ তথা রহিতকারী হচ্ছে কুর’আনুল কারীমের এই আয়াতটিই। কিন্তু এটাও খুব দূরের কথা। কেননা, এই আয়াতটি পরে হওয়ার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। বরং এদিক দিয়ে তো বাহ্যত এই হাদীসটি এই আয়াতটির পরের বলে মনে হচ্ছে। কোন কোন লোক বলেন যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটির মধ্যকার না বাচক لا শব্দটি হচ্ছে কামাল বা পূর্ণতার জন্য। অর্থাৎ ঐ লোকটির পূর্ণ সাওম হয় না। কেননা উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দ্বারা সাওমর বৈধতা স্পষ্ট রূপে সাব্যস্ত হয়েছে। আর এটাই সঠিক পন্থাও বটে এবং সমুদয় উক্তির মধ্যে এই উক্তিটিই উত্তম। তাছাড়া এটা বলাতে দু’টি বর্ণনার মধ্যে সাদৃশ্যও হয়ে যাচ্ছে।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতে হবে
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পূর্ণ করো।’ এর দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, সূর্য অস্তমিত হওয়া মাত্রই ইফতার করা উচিত। আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَاهُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَاهُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ
‘যখন এদিক দিয়ে রাত্রি আগমন করে এবং ওদিক দিয়ে দিন বিদায় নেয় তখন যেন সিয়াম পালনকারী ইফতার করে। (ফাতহুল বারী ৪/২৩১, সহীহুল বুখারী ৪/২৩১/১৯৫৪, সহীহ মুসলিম-২/৫১/৭৭২, সুনান আবূ দাউদ-২/৩০৪/২৩৫১, জামি‘ তিরমিযী-৩/৮১/৬৯৮, মুসনাদে আহমাদ-১/৩৫, ৪৮, ৫৪ ) সাহল ইবনে সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ
‘যে পর্যন্ত মানুষ ইফতারে তাড়াতাড়ি করবে সে পর্যন্ত মঙ্গল থাকবে। (ফাতহুল বারী ৪/২৩৪, সহীহ মুসলিম ২/৭৭১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ يَقُولُ اللَّهُ، عَزَّ وَجَلَّ: إِنَّ أَحَبَّ عِبَادِي إِلِيَّ أعجلُهم فِطْرًا
‘মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আমার নিকট ঐসব বান্দাগণ সবচেয়ে প্রিয় যারা ইফতারে তাড়াতাড়ি করে।’ (মুসনাদে আহমাদ-২/২৩৮/৭২৪০, জামি‘ তিরমিযী ৩/৮৩/৭০০) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এই হাদীসটিকে ‘হাসান গরীব’ বলেছেন।
একাধিক্রমে সিয়াম পালন করা যাবে না
তাফসীরে আহমাদে অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, বাশীর ইবনে খাসাসিয়্যাহ (রাঃ)-এর সহধর্মিনী লাইলা (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি ইফতার ছাড়াই দু’টি সিয়ামকে মিলিত করতে ইচ্ছা করি। তখন আমার স্বামী আমাকে নিষেধ করেন এবং বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ
يَفْعَلُ ذَلِكَ النَّصَارَى، ولكنْ صُوموا كَمَا أَمَرَكُمُ اللَّهُ، وَأَتِمُّوا الصيامَ إِلَى اللَّيْلِ، فَإِذَا كَانَ اللَّيْلُ فَأَفْطِرُوا.
‘এটা খ্রিষ্টানদের কাজ। তোমরা তো ঐভাবেই সিয়াম পালন করবে যেভাবে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন। আর তা হচ্ছে এই যে, তোমরা রাতে ইফতার করে নাও।’ (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৫, মুসনাদে ‘আবদ ইবনে হুমাইদ-৪২৯) এক সিয়ামকে অন্য সিয়ামের সাথে মিলানো নিষিদ্ধ হওয়া সম্বন্ধে আরো বহু হাদীস রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لَا تُوَاصِلُوا. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّكَ تُوَاصِلُ. قَالَ: فَإِنِّي لَسْتُ مِثْلَكُمْ، إِنِّي أبِيتُ يُطْعمني رَبِّي وَيَسْقِينِي. قَالَ: فَلَمْ يَنْتَهُوا عَنِ الْوِصَالِ، فَوَاصَلَ بِهِمُ النَّبِيُّ # يَوْمَيْنِ وَلَيْلَتَيْنِ، ثُمَّ رَأَوُا الْهِلَالَ، فَقَالَ: لَوْ تَأَخَّرَ الْهِلَالُ لَزِدْتُكُمْ.
‘তোমরা এক সাওম অপর সাওমের সাথে মিলিত করো না।’ তখন জনগণ বলেঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! স্বয়ং আপনি তো মিলিয়ে থাকেন।’ তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মতো নই। আমি রাত্রি অতিবাহিত করি আর প্রভু আমাকে আহার করিয়ে ও পানি পান করিয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু লোক তবুও ঐ কাজ হতে বিরত হয় না। তখন তিনি তাদের সাথে দু’দিন ও দু’রাতের সিয়াম বরাবর রাখতে থাকেন। অতঃপর চাঁদ দেখা দেয়ায় তিনি বলেন,ঃ যদি চাঁদ উদিত না হতো তাহলে আমি এভাবেই সিয়ামকে মিলিয়ে যেতাম।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৪/২৪২/১৯৬৫, মুসনাদে আহমাদ ২/২৬১, ২৮১, ৫১৬ ফাতহুল বারী ৪/২৩৮, সহীহ মুসলিম ২/৫৭/৭৭৪) ইফতার করা ছাড়াই এবং রাতে কিছু না খেয়েই অন্য সিয়ামের সাথে মিলিয়ে নেয়ার নিষিদ্ধতার ব্যাপারে সহীহুল বুখারী ও মুসলিমে আনাস (রাঃ), ইবনে ‘উমার (রাঃ) এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকেও মারফূ‘ হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। (সহীহুল বুখারী-৪/১৬৫/১৯২২, ৪/২৩৭/১৯৬৪, ১৩/২৩৭/৭২৪১, সহীহ মুসলিম-২/৭৭৫/৫৯, ২/৫৬/৭৭৪, ২/৬১/৭৭৬) সুতরাং সাব্যস্ত হলো যে, এটা উম্মাতের জন্য নিষিদ্ধ; কিন্তু তিনি স্বয়ং তাদের থেকে বিশিষ্ট ছিলেন। তাঁর এর ওপরে ক্ষমতা ছিলো এবং এর ওপরে মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তাঁকে সাহায্য করা হতো। এটাও মনে রাখা উচিত যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বলেছেন, ‘আমার প্রভু আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন’ এর ভাবার্থ প্রকৃত খাওয়ানো ও পান করানো নয়। কেননা এরূপ হলে তো এক সিয়ামের সাথে অন্য সিয়ামকে মিলানো হচ্ছে না। কাজেই এটা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক সাহায্য।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে রয়েছেঃ
لَا تُوَاصِلُوا، فَأَيُّكُمْ أَرَادَ أَنْ يُوَاصِلَ فَلْيُوَاصِلْ إِلَى السَّحَرِ. قَالُوا: فَإِنَّكَ تواصِل يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: إِنِّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ، إِنِّي أَبَيْتُ لِي مُطْعِم يُطْعِمُنِي، وَسَاقٍ يَسْقِينِي.
তোমরা এক সাওমকে অপর সাওমের সাথে মিলিত করো না, যদি একান্তভাবে করতেই চাও তাহলে সাহরী পর্যন্ত করো। জনগণ বলেঃ ‘আপনি তো মিলিয়ে থাকেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘আমি তোমাদের মতো নই। আমাকে তো রাতেই আহারদাতা আহার করিয়ে থাকেন এবং পান করিয়ে থাকেন।’ (সহীহুল বুখারী ৪/২৩৭/১৯৬৩, ফাতহুল বারী ৪/৩৩৮, সুনান আবূ দাউদ ২/৩০৭/২৩৬১, সুনান দারিমী ২/১৫/১৭০৫, মুসনাদে আহদাম ৩/৮,৮৭, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ৩/২৮১/২০৭৩)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, একজন মহিলা সাহাবী মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করেন। সেই সময় তিনি সাহরী খাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেনঃ এসো তুমিও খেয়ে নাও। স্ত্রী লোকটি বলেনঃ আমি সাওম অবস্থায় রয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি কিরূপে সাওম রেখে থাকো? সে তখন বর্ণনা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মতো এক সাহরীর সময় থেকে নিয়ে দ্বিতীয় সাহরীর সময় পর্যন্ত মিলিত সাওম রাখো না কেন ? (হাদীসটি য ‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী-৩/৫৩৭/৩০৩৫)
মুসনাদে আহমাদের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এক সাহরী হতে দ্বিতীয় সাহরী পর্যন্ত মিলিত সাওম রাখতেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। মুসনাদে আহমাদ ১/১৪১) তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) প্রভৃতি পূর্বের মনীষীগণ হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ক্রমাগত কয়েকদিন পর্যন্ত কিছু না খেয়েই সাওম রাখতেন। কেউ কেউ বলেন যে, এটা উপাসনা হিসেবে ছিলো না, বরং আত্মাকে দমন ও আধ্যাত্মিক সাধনা হিসেবে ছিলো। আবার এরও সম্ভাবনা রয়েছে যে, তাদের ধারণায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই নিষেধ ছিলো দয়া ও স্নেহ হিসেবে, অবৈধ বলে দেয়া হিসেবে নয়। যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনসাধারণের প্রতি দয়া পরবশ হয়েই এর থেকে নিষেধ করেছিলেন। সুতরাং ইবনে যুবাইর (রাঃ) তার পুত্র ‘আমির (রাঃ) এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণকারীগণ তাদের আত্মায় শক্তি লাভ করতেন এবং সাওমের ওপর সাওম রেখে যেতেন। এটাও বর্ণিত আছে যে, যখন তারা ইফতার করতেন তখন সর্ব প্রথম ঘি ও তিত্ত আঠা খেতেন যাতে প্রথমেই খাদ্য পৌঁছে যাওয়ার ফলে নাড়ি জ্বলে না যায়। বর্ণিত আছে যে, ইবনু যুবাইর (রাঃ) ক্রমাগত সাতদিন ধরে সাওম রেখে এবং এর মাধ্যকালে দিনে বা রাতে কিছুই খেতেন না। অথচ সপ্তম দিনে তাকে খুবই সুস্থ এবং সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রূপে দেখা যেতো।
আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) বলেনঃ ‘মহান আল্লাহ দিনের সিয়াম ফরয করে দিয়েছেন। যখন রাত এসে যায়, তখন যে চায় খাবে এবং যার ইচ্ছা না হয় সে খাবে না।’
ই‘তিকাফ
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ ﴿وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَ اَنْتُمْ عٰكِفُوْنَ١ۙ فِی الْمَسٰجِدِ﴾ ‘আর মাসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না।’ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি এই যে, যে ব্যক্তি মাসজিদে ই‘তিকাফে বসেছে তা রামাযান মাসেই হোক অথবা অন্য কোন মাসেই হোক, ই‘তিকাফ পুরা না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য দিন ও রাতে স্ত্রী সহবাস হারাম। (তাফসীর তাবারী ৩/৫৪০) যাহহাক (রহঃ) বলেন যে, পূর্বে মানুষ ই‘তিকাফ অবস্থায়ও স্ত্রী সহবাস করতো। ফলে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং মাসজিদে ই‘তিকাফের জন্য অবস্থানের সময় এটা হারাম করে দেয়া হয়। মুজাহিদ (রহঃ) এবং কাতাদাহ (রহঃ) এ কথাই বলেন। সুতরাং ‘আলিমগণের সর্বসম্মত ফাতাওয়া এই যে, যদি ই‘তিকাফকারী খুবই প্রয়োজন বশতঃ বাড়ী যায, যেমন প্রস্রাব-পায়াখানার জন্য বা খাদ্য খাবার জন্য, তাহলে ঐ কাজ শেষ করার পরেই তাকে মাসজিদে চলে আসতে হবে। সেখানে অবস্থান জায়িয নয়। স্ত্রীকে চুম্বন-আলিঙ্গন ইত্যাদিও বৈধ নয়। ই‘তিকাফ ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন কাজে লিপ্ত হওয়া জায়িয নয়। তবে হাঁটতে হাঁটতে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে নেয় সেটা অন্য কথা। ই‘তিকাফের আরো অনেক আহকাম রয়েছে। কতকগুলো আহকামের মধ্যে মতভেদও রয়েছে। এগুলো আমি আমার (ইবনে কাসীর) পৃথক গ্রন্থ কিতাবুস সিয়াম এর শেষে বর্ণনা করেছি। এ জন্য অধিকাংশ গ্রন্থকারও নিজ নিজ গ্রন্থে সিয়ামের পর পরই ই‘তিকাফের নির্দেশাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন। এতে এ কথার দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে, ই‘তিকাফ সিয়াম অবস্থায় করা কিংবা রামাযানের শেষ ভাগে করা উচিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না তিনি এই নশ্বর জগৎ হতে বিদায় গ্রহণ করেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইনতিকালের পর তাঁর সহধর্মিণীগণ অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন (রাঃ) ই‘তিকাফ করতেন।’ (সহীহুল বুখারী ৪/৩১৮/২০৬, ফাতহুল বারী ৪/৩১৮, সহীহ মুসলিম ২/৫/৮৩১)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, সুফিয়া বিনতি হুয়াই (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ই‘তিকাফের অবস্থায় তাঁর খিদমাতে উপস্থিত হতেন এবং কোন প্রয়োজনীয় কথা জিজ্ঞেস করার থাকলে তা জিজ্ঞেস করে চলে যেতেন। একবার রাতে যখন তিনি চলে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাঁর সাথে সাথে যান। কেননা তাঁর বাড়ী মাসজিদে নাববী হতে দূরে অবস্থিত ছিলো। পথে দু’জন আনসারী সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর স্ত্রীকে দেখে তাঁরা লজ্জিত হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপে চলতে থাকেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
عَلَى رِسْلكما إِنَّهَا صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ" أَيْ: لَا تُسْرِعَا، وَاعْلَمَا أَنَّهَا صَفِيَّةُ بِنْتُ حُيَيٍّ، أَيْ: زَوْجَتِي.
‘তোমরা থামো এবং জেনে রেখো যে, ইনি আমার স্ত্রী সুফিয়া বিনতি হুয়াই (রাঃ)।’ তখন তারা বলেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ আমরা কি অন্য কোন ধারণা করতে পারি! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ ابْنِ آدَمَ مَجْرَى الدَّمِ، وَإِنِّي خَشِيتُ أَنْ يَقْذِفَ فِي قُلُوبِكُمَا شَيْئًا أَوْ قَالَ: شَرًّا
‘শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় রক্তের ন্যায় চলাচল করে থাকে। আমার ধারণা হলো যে, সে তোমাদের অন্তরে কোন কু-ধারণা সৃষ্টি করে দেয় কি না।’ (সহীহুল বুখারী-৪/৩২৬/২০৩৫, ২০৩৮, সুনান আবূ দাউদ ২/৩৩২/২৪৭০, সুনান ইবনে মাজাহ ১/৫৬৬/১৭৭৯, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৭, ফাতহুল বারী ৪/৩২৬) ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এই নিজস্ব ঘটনা হতে তাঁর উম্মাতবর্গকে শিক্ষা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা যেন অপবাদের স্থান থেকে দূরে থাকে। নতুবা এটা অসম্ভব কথা যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মহান সাহাবীগণ তাঁর সম্বন্ধে কোন কু-ধারণা অন্তরে পোষণ করতে পারেন এবং এটাও অসম্ভব যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সম্বন্ধে এরূপ ধারণা রাখতে পারেন।
উল্লিখিত আয়াতে مُبَاشِرَت এর ভাবার্থ হচ্ছে স্ত্রীর সাথে মিলন এবং তার কারণসমূহ। যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি। নচেৎ কোন জিনিস লেনদেন ইত্যাদি সব কিছুই জায়িয। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ
يُدْني إِلِيَّ رَأْسَهُ فأرجِّلُه وَأَنَا حَائِضٌ، وَكَانَ لَا يَدْخُلُ الْبَيْتَ إِلَّا لِحَاجَةِ (রাঃ) كَانَ رَسُولُ اللَّهِ
‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফের অবস্থায় আমার দিকে মাথা নুইয়ে দিতেন এবং আমি তাঁর মাথার চুল আঁচড়ে দিতাম। অথচ আমি মাসিক বা ঋতুর অবস্থায় থাকতাম।’ তিনি মানবীয় প্রয়োজন পুরা করার উদ্দেশ্যে ছাড়া বাড়ীতে আসতেন না।’ (সহীহুল বুখারী ৪/৩২০, সহীহ মুসলিম ১/৬/২৪৪, সুনান আবূ দাউদ ২/৩৩২/২৪৬৭, জামি‘ তিরমিযী ৩/১৬৭/৮০৪, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ১/৩১২/১, মুসনাদে আহমাদ ৬/৮১, ৬/১৮১, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ২২৩০, ফাতহুল বারী ৪/৩২৬, ৪/৩২০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘ই‘তিকাফ অবস্থায় আমি তো চলতে চলতেই বাড়ীর রুগীকে পরিদর্শন করে থাকি।’ অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘এই হচ্ছে আমার বর্ণনাকৃত কথা, ফরযকৃত বিষয়সমূহ।’ তার মধ্যে যা কিছু বৈধ এবং যা কিছু অবৈধ ইত্যাদি। মোট কথা, এই সব হচ্ছে আমার সীমারেখা। সাবধান! তোমরা তার নিকটেও যাবে না এবং তা অতিক্রম করবে না। কেউ কেউ বলেন যে, এই সীমা হচ্ছে ই‘তিকাফ অবস্থায় স্ত্রী-মিলন হতে দূরে থাকা। ‘আবদুর রহমান ইবনে যায়দ ইবনে আসলাম (রহঃ) বলেনঃ এই আয়াতগুলোর মধ্যে চারটি নির্দেশকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে অতঃপর তিনি পাঠ করেনঃ ﴿اُحِلَّ لَكُمْ لَیْلَةَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰى نِسَآىِٕكُمْ﴾ ‘রামাযানের রাতে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।’
﴿ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَى الَّیْلِ﴾ ‘অতঃপর রাত সমাগম পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পূর্ণ করো।’
﴿كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ﴾ ‘এভাবে মহান আল্লাহ মানবমণ্ডলীর জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বিবৃত করেন।’
﴿لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ﴾ ‘যেন তারা সংযত হয়।’
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেভাবে আমি সিয়াম ও তার নির্দেশাবলী, তার জিজ্ঞাস্য বিষয়সমূহ এবং তার ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছি, অনুরূপভাবে অন্যান্য নির্দেশাবলীও আমি আমার বান্দা ও রাসূলের মাধ্যমে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য বর্ণনা করেছি। যেন তারা জানতে পারে যে হিদায়াত কি এবং আনুগত্য কাকে বলে এবং এর ফলে যেন তারা মহান আল্লাহভীরু হতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ
﴿هُوَ الَّذِیْ یُنَزِّلُ عَلٰى عَبْدِهۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لِّیُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوْرِ وَ اِنَّ اللّٰهَ بِكُمْ لَرَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ﴾
‘তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন, তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোকে নিয়ে আসার জন্য; মহান আল্লাহতো তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।’ (৫৭ নং সূরা হাদীদ, আয়াত নং ৯)
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings