2:154
وَلَا تَقُولُواۡ لِمَن يُقۡتَلُ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتُۢۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشۡعُرُونَ١٥٤
Saheeh International
And do not say about those who are killed in the way of Allah, "They are dead." Rather, they are alive, but you perceive [it] not.
ধৈর্য ও সালাতের মর্যাদা অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ‘শোকরের’ বর্ণনা শেষ করার পর ‘সবর’ বা ধৈর্যের বর্ণনা দিচ্ছেন। আর সাথে সাথেই সালাতের বর্ণনা দিয়ে এসব সৎ কাজকে মুক্তি লাভের মাধ্যম করে নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। এটা স্পষ্ট কথা যে, মানুষ যখন সুখে থাকে তখন সেটা হচ্ছে তার জন্য শোকরের সময়। আর যদি কষ্টে থাকে তাহলে তা হচ্ছে তার ধৈর্য ধারণের সময়। যেমন হাদীসে রয়েছেঃ"عجبًا للمؤمن. لا يقضي الله له قضاء إلا كان خيرًا له: إن أصابته سراء، فشكر، كان خيرًا له؛ وإن أصابته ضراء فصبر كان خيرًا له".‘মু’মিনের অবস্থান কতোই না উত্তম যে, প্রত্যেক কাজে তার জন্য মঙ্গলই নিহিত রয়েছে। সে শান্তি লাভ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এর ফলে সে প্রতিদান পেয়ে থাকে। আর সে কষ্ট পেলে ধৈর্যধারণ করে এবং এরও সে প্রতিদান পেয়ে থাকে। (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ৪/৬৪/২২৯৫, মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৩২/৩৩৩) অতঃপর মহান আল্লাহ অত্র আয়াতের মধ্যে এটারও বর্ণনা দিয়েছেন যে, বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে ধৈর্য ও সালাত। যেমন এর পূর্বে বর্ণিত হয়েছেঃ ﴿وَ اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ١ؕ وَ اِنَّهَا لَكَبِیْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخٰشِعِیْنَ﴾‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং নিশ্চয়ই এটা বিনয়ীদের ছাড়া অন্যদের ওপর কঠিন কাজ।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ৪৫) ‘সবর’ দু’ প্রকার। প্রথম সাবর হচ্ছে নিষিদ্ধ ও পাপের কাজ ছেড়ে দেয়ার ওপর ‘সবর’। দ্বিতীয় হচ্ছে আনুগত্য ও সাওয়াবের কাজ করার ওপর ‘সবর’। এ প্রকার ‘সবর’ প্রথম ‘সবর’ হতে বড়। উল্লিখিত দুইটি ছাড়াও আরো এক প্রকারে ধৈর্য আছে, তা হচ্ছে বিপদ ও দুঃখের সময় ‘সবর’। (অতএব ‘সবর’ মোট তিন প্রকার। যথা- ১. পাপ ও মহান আল্লাহ্র নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করা। ২. আনুগত্য মূলক কাজ বাস্তবায়ন করার ধৈর্য ধারণ করা। ৩. বিভিন্ন বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা) এটা ওয়াজিব। যেমন অপরাধ ও পাপ হতে ক্ষমা প্রার্থনা করা ওয়াজিব।‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন যে, জীবনের ওপর কঠিন হলেও, স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও এবং মনে না চাইলেও ধৈর্যের সাথে মহান আল্লাহ্র আদেশ পালন করা হচ্ছে এক ধরনের ‘সবর।’ দ্বিতীয় ‘সবর’ হচ্ছে প্রকৃতির ও মনের চাহিদা মুতাবিক হলেও মহান আল্লাহ্র অসন্তুষ্টির কাজ হতে বিরত থাকা।﴿یُوَفَّى الصّٰبِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَیْرِ حِسَابٍ﴾ ধৈর্যশীলদেরকে অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে। (৩৯ নং সূরা যুমার, আয়াত নং ১০)সা‘ঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ) বলেন যে, ‘সবর’ এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আগত বিপদের প্রতিদান মহান আল্লাহ্র নিকট পাওয়ার বিশ্বাস রেখে তার জন্য সাওয়াবের প্রার্থনা করা, প্রত্যেক ভয়, উদ্বেগ এবং কাঠিন্যের স্থলে ধৈর্যধারণ করা এবং সাওয়াবের আশায় এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।যারা ধৈর্যধারণ করার গুণাগুণ অর্জন করেছে তারা হবে ঐ লোকদের দলভুক্ত যাদেরকে মহান আল্লাহ অভিনন্দন জানাবেন কিয়ামত দিবসে। (৩৩ নং সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪৪) মহান আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/১৪৪) শহীদ-গণের রয়েছে নি‘য়ামতপূর্ণ জীবন মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘মহান আল্লাহ্র পথে শহীদ ব্যক্তিগণকে তোমরা মৃত বলোনা। বরং তাঁরা এমন জীবন লাভ করেছে যা তোমরা অনুধাবন করতে পারো না।’ তারা ‘বারযাখী’ জীবন অর্থাৎ মৃত্যু ও কিয়ামতের মধ্যবর্তী অবকাশ লাভ করেছে এবং সেখানে তাঁরা আহার্য পাচ্ছে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছেঃ"إن أرواح الشهداء في حواصل طير خضر تسرح في الجنة حيث شاءت ثم تأوي إلى قناديل مُعَلَّقة تحت العرش، فاطَّلع عليهم ربك اطِّلاعَة،فقال: ماذا تبغون؟ فقالوا: يا ربنا، وأيّ شيء نبغي، وقد أعطيتنا ما لم تعط أحدًا من خلقك؟ ثم عاد إليهم بمثل هذا، فلما رأوا أنهم لا يُتْرَكُون من أن يسألوا، قالوا: نريد أن تردنا إلى الدار الدنيا، فنقاتل في سبيلك، حتى نقتل فيك مرة أخرى؛ لما يرون من ثواب الشهادة -فيقول الرب جلّ جلاله: إني كتبتُ أنَّهم إليها لا يرجعون".‘শহীদগণের আত্মাগুলো সবুজ রঙের পাখিসমূহের দেহের ভিতর রয়েছে এবং তারা জান্নাতের মধ্যে যথেচ্ছা ঘুরে বেড়ায়, অতঃপর তারা ‘আরশের নীচে ঝুলন্ত বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাদের প্রভু তাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘এখন তোমরা কি চাও?’ তারা উত্তরে বলেঃ ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি তো আমাদের ঐ সব জিনিস দিয়েছেন যা অন্য কাউকেও দেননি। সুতরাং এখন আর আমাদের কোন জিনিসের প্রয়োজন হবে?’ তবুও পুনরায় একই প্রশ্ন করা হয়। যখন তারা দেখে যে, অব্যহতি হচ্ছে না, তখন তারা বলেঃ ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা চাই যে, আপনি আমাদেরকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন। আমরা আপনার পথে আবার যুদ্ধ করে পুনরায় শাহাদাত বরণ করে আপনার নিকট ফিরে আসবো। এর ফলে আমরা শাহদাতের দ্বিগুণ মর্যাদা লাভ করবো।’ প্রবল প্রতাপান্বিত রাব্ব তখন বলেনঃ ‘এটা হতে পারে না। আমি তো এটা লিখেই দিয়েছি যে, কেউই মৃত্যুর পর আর দুনিয়ায় ফিরে যাবেনা।’ (মুসলিম ৩/১২১/১৫০২, জামি‘ তিরমিযী ৫/২১৫/৩০১১, সুনান ইবনে মাজাহ ২/৯৩৬/২৮০১, সুনান দারিমী ২/২৭১/২৪১০) ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন,‘আবদুর রহমান ইবনে কা‘ব ইবনে মালিক (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "نَسَمَةُ المؤمن طائر تَعْلَقُ في شجر الجنة، حتى يرجعه الله إلى جسده يوم يبعثه" (2) ‘মু’মিনদের রুহ একটি পাখি যা জান্নাতের কাছে অবস্থান করে এবং কিয়ামতের দিন সে নিজের দেহে ফিরে আসবে। (হাদীস সহীহ। মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৫৫, ৪৬০, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক-১/৪৯/২৪০, সুনান নাসাঈ-৪/৪১৪/২০৭২, জামি‘ তিরমিযী ৪/১৫১/১৬৪১, সুনান ইবনে মাজাহ-২/১৪২৮/৪২৭১) এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক মু’মিনদের আত্মা সেখানে জীবিত রয়েছে। কিন্তু শহীদগণের আত্মার এক বিশেষ সম্মান, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us