2:127
وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٰهِــۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ١٢٧
Saheeh International
And [mention] when Abraham was raising the foundations of the House and [with him] Ishmael, [saying], "Our Lord, accept [this] from us. Indeed You are the Hearing, the Knowing.
মক্কা হলো পবিত্রতম স্থান ইমাম আবূ জা‘ফর ইবনে জারীর আত- তাবারী (রহঃ) বলেন যে, জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ"إن إبراهيم حَرَّم بيت الله وأمَّنَه وإني حرمت المدينة ما بين لابتيها فلا يُصَادُ صيدها ولا يقطع عضاهها"‘ইবরাহীম (আঃ) মাক্কা কে হারাম বানিয়েছিলেন। আমি মদীনাকে এবং এর দু’ধারের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করলাম। এর শিকার খাওয়া হবে না, এখানকার বৃক্ষ কর্তন করা হবে না, এখানে অস্ত্র-শস্ত্র উত্তোলন করা নিষেধ।’ (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীর তাবারী ৩/৪৮/২০২৯, সহীহ মুসলিম ২/৪৫৮/৯৯২, সুনান নাসাঈ কুবরা-২/৪৮৭-৪৮৮/৪২৮৪) ইমাম নাসাঈ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনে বাশ্শার থেকে তিনি বুনদার (রহঃ) থেকে এরূপই বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম মুসলিম (রহঃ) ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে জারীর (রহঃ) একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ"إن إبراهيم كان عبد الله وخليله وإني عبدُ الله ورسوله وإن إبراهيم حَرَّم مكة وإني حرمت المدينة ما بين لابتيها، عضاهَها وصيدَها، لا يحمل فيها سلاح لقتال، ولا يقطع منها شجرة إلا لعلف بعير"নিশ্চয় ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন মহান আল্লাহ্র একজন অন্যতম বান্দা ও বন্ধু। আর আমি মহান আল্লাহ্র বান্দা ও তার রাসূল। ‘ইবরাহীম (আঃ) মাক্কাকে হারাম বানিয়েছিলেন। আমি মাদীনাকে এবং এর দু’ধারের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করলাম। এখানকার বৃক্ষ কর্তন করা হবে না, এর শিকার খাওয়া হবে না, এখানে অস্ত্র-শস্ত্র উত্তোলন করা নিষেধ। উটের খাদ্য বা ঘাস ব্যতীত এখানকার কোন গাছ কাটা যাবে না।’ (তাফসীরে ত্বাবারী ৩/৪৮/২০৩০)সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটির পূর্ণরূপ হলো- জনগণ টাটকা খেজুর নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে হাজির হলে তিনি মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলতেন, হে মহান আল্লাহ! আপনি আমাদের খেজুরে, আমাদের শহরে এবং আমাদের ওযনে ‘বরকত’ দান করুন। হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) আপনার বান্দা, আপনার দোস্ত এবং আপনার রাসূল ছিলেন। আমিও আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল। তিনি আপনার নিকট মাক্কার জন্য প্রার্থনা জানিয়েছেন। আমি ও আপনার নিকট মাদীনার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছি। যেমন তিনি মাক্কার জন্য প্রার্থনা জানিয়েছিলেন, বরং এ রকমই আরো একটি। অতঃপর কোন ছোট ছেলেকে ডেকে ঐ খেজুর তাকে দিয়ে দিতেন। (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ২/৪৭৩/১০০০, জামি‘ তিমমিযী ৫/৪৭২/৩৪৫৪, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ২/২/৮৮৫) আনাস বিন মালিক (রহঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আবূ ত্বালহা (রাঃ) কে বললেনঃ তোমাদের ছোট ছোট বালকদের মধ্যে একটি বালককে আমার খিদমতের জন্য অনুসন্ধান করো। আবূ ত্বালহা (রাঃ) আমাকেই নিয়ে যান। তখন আমি বিদেশে ও বাড়িতে তার খিদমতেই অবস্থান করতে থাকি। একবার তিনি বিদেশ হতে আসছিলেন। সম্মুখে উহুদ পর্বত দৃষ্টি গোচর হলে তিনি বললেন, এ পর্বত আমাকে ভালোবাসে এবং আমিও এ পর্বতকে ভালোবাসি। মদিনা চোখের সামনে পড়লে তিনি বলেনঃ হে মহান আল্লাহ! আমি এর দু’ধারের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম রূপে নির্ধারণ করছি। যেমন ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম রূপে নির্ধারণ করেছিলেন। হে আল্লাহ! তাদের মুদ্দ, সা‘ এবং ওযনে বরকত দান করুন। সহীহুল বুখারীতে অতিরিক্ত আছে যে, তাদের অর্থাৎ মাদীনা বাসীর মুদ্দ, সা‘ এবং ওযনে বরকত দান করুন। আনাস (রাঃ) হতেই আর একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে মহান আল্লাহ! মক্কায় আপনি যে ‘বরকত’ দান করেছেন তার দ্বিগুণ ‘বরকত’ মাদীনায় দান করুন। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ৪/৪৮৮৫, সহীহ মুসলিম ২/৪৬৬/৯৯৪) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে মহান আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম বানিয়েছেন, আমি মাদীনাকে হারাম বানালাম। এখানে কাউকেও হত্যা করা হবে না এবং চারা পশুর খাদ্য ছাড়া বৃক্ষাদির পাতাও ঝরানো হবে না। হে মহান আল্লাহ আমাদের মাদীনায় ‘বরকত’ দাও, আমাদের সা‘ তে ‘বরকত’ দাও, হে মহান আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ এর মধ্যে ‘বরকত’ দাও, হে মহান আল্লাহ! তুমি প্রতিটি ‘বরকত’ এর সাথে দিগুণ ‘বরকত’ দাও। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ৪/১৮৩৪, সহীহ মুসলিম ২/৪৭৫/১০০১, ১০০২, এবং ২/৪৪৫/৯৮৬, ৯৮৭) এ বিষয়ের আরো বহু হাদীস রয়েছে যদ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মাক্কার মতো মদীনাও সম্মানিত স্থান। এখানে এসব হাদীস বর্ণনা করায় আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাক্কার মর্যাদাও এখানকার নিরাপত্তার বর্ণনা দেয়া। কেউ কেউতো বলেন যে, প্রথম হতেই এটা মর্যাদা পূর্ণ ও নিরাপদ স্থান। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ইবরাহীম (আঃ) এর ‘আমল হতে এর মর্যাদা ও নিরাপত্তা সূচীত হয়। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশি স্পষ্ট।সহীহুল বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিজয়ের দিন বলেছেনঃ ‘যখন হতে মহান আল্লাহ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেন তখন থেকেই এই শহরকে মর্যাদাপূর্ণরূপে বানিয়েছেন। এখন কিয়ামত পর্যন্ত এর মর্যাদা অক্ষুন্নই থাকবে। এখানে যুদ্ধ বিগ্রহ কারো জন্য বৈধ নয়। আমার জন্য শুধুমাত্র আজকের দিনেই কিছুক্ষণের জন্য বৈধ ছিলো। এর অবৈধতা রয়েই গেলো। জেনে রেখো, এর কাঁটা কাটা যাবে না, এর শিকার তাড়া করা যাবেনা। এখানে কারো পতিত হারানো জিনিস উঠিয়ে নেয়া যাবে না, কিন্তু যে এটা মালিকের নিকট পৌঁছে দিবে তার জন্য জায়িয। এর ঘাস কেটে নেয়া হবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি এ হাদীসটি খুৎবায় বর্ণনা করেছিলেন এবং ‘আব্বাস (রাঃ) এর প্রশ্নের কারণে তিনি ‘ইযখির’ নামক ঘাস কাটার অনুমতি দিয়েছিলেন। (ফাতহুল বারী ৪/৫৬, মুসলিম ২/৯৮৬)‘আমর ইবনে সা‘ঈদ (রাঃ) যখন মাক্কার দিকে সেনাবাহিনী প্রেরণ করছিলেন সেই সময় ইবনে সুরাইহ্ আদভী (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ ‘হে আমীর! মাক্কা বিজয়ের দিন অতি প্রত্যুষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে খুৎবা দেন তা আমি নিজ কানে শুনেছি, মনে রেখেছি এবং সেই সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বচোক্ষে দেখেছি, মহান আল্লাহ্র প্রশংসার পর তিনি বলেনঃ ‘মহান আল্লাহই মাক্কাকে হারাম করেছেন, মানুষ করেনি। কোন মু’মিনের জন্য এখানে রক্ত প্রবাহিত করা এবং বৃক্ষাদি কেটে নেয়া বৈধ নয়। যদি কেউ আমার এই যুদ্ধকে প্রমাণরূপে গ্রহণ করতে চায় তাহলে তাকে বলবে যে, আমার জন্য শুধুমাত্র আজকের দিন এ মুহূর্তের জন্যই যুদ্ধ বৈধ ছিলো। অতঃপর পুনরায় এ শহরের মর্যাদা ফিরে এসেছে যেমন কাল ছিলো। সাবধান! তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছো, তাদের নিকট অবশ্যই এ সংবাদ পৌঁছে দিবে যারা আজ এই জনসমাবেশে নেই।’ কিন্তু আমার এ হাদীসটি শুনে তিনি পরিস্কারভাবে উত্তর দেনঃ ‘আমি তোমার চেয়ে এ হাদীসটি বেশি জানি।’ ‘মাক্কাতুল হারাম’ অবাধ্য রক্ত পিপাসুকে এবং ধ্বংসকারীকে রক্ষা করেন না।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-১/১০৪, ফাতহুল বারী ৪/৫০, সহীহ মুসলিম ২/৪৪৬/৯৮৭) কেউ যেন এ দু’টি হাদীসকে পরস্পর বিরোধী মনে না করে। এ দু’টির মধ্যে সাদৃশ্য এভাবে হবে যে মাক্কা প্রথম দিন হতেই মর্যাদাপূর্ণ তো ছিলোই, কিন্তু মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) এর মাধ্যমে এ মাক্কার সম্মান ও মর্যাদার কথা প্রচার করেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো তখন হতেই রাসূল ছিলেন যখন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার জন্য খামির প্রস্তুত হয়েছিলো; বরং সেই সময় হতেই তাঁর নাম শেষ নবীরূপে লিখিত ছিলো। কিন্তু তথাপিও ইবরাহীম (আঃ) তাঁর নবুওয়াতের জন্য মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলেনঃ ﴿رَبَّنَا وَ ابْعَثْ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ ﴾‘হে আমাদের রাব্ব! তাদের মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১২৯)এ প্রার্থনা মহান আল্লাহ কবূল করেন এবং তাকদীরে লিখিত ঐ কথা প্রকাশিত হয়। একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘আপনার নবুওয়াত সূত্রের কথা কিছু আলোচনা করুন।’ তখন তিনি বলেনঃ ‘আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা, আমার সম্বন্ধে ‘ঈসা (আঃ) সুসংবাদ দান এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেন যে, তার মধ্য হতে যেন একটি আলো বেরিয়ে সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করে দিলো এবং তা দৃষ্টিগোচর হতে থাকলো।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫/২৬২) ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে নিরাপত্তা ও উত্তম রিযকের শহরের জন্য দু‘আ করেছিলেন ইবরাহীম (আঃ) প্রার্থনা করেছিলেনঃ ﴿رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا﴾হে আমরা রাব্ব! এ স্থানকে আপনি নিরাপত্তাময় শহরে পরিণত করুন। (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১২৬) অর্থাৎ এখানে অবস্থানকারীদেরকে ভীতি শূন্য রাখুন। মহান আল্লাহ তা কবূল করেন। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿وَمَنْدَخَلَهٗكَانَاٰمِنًا﴾‘আর যে এর মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয়।’ (৩ নং সূরা আল ‘ইমরান, আয়াত নং ৯৭)অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا اٰمِنًا وَّ یُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ﴾‘তারা কি দেখে না যে, আমি হারামকে নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চতুস্পার্শ্বে যে সব মানুষ আছে তাদের ওপর হামলা করা হয়। (২৯ নং সূরা ‘আনকাবূত, আয়াত নং ৬৭) এ প্রকারে আরো বহু আয়াত রয়েছে এবং এ সম্পর্কীয় বহু হাদীসও বর্ণিত হয়েছে যে, মাক্কায় যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ "لا يحل لأحد أن يحمل بمكة السلاح".‘মাক্কায় অস্ত্র-শস্ত্র বহন করাও কারো জন্য বৈধ নয়।’ (সহীহ মুসলিম ২/৪৪৬/৯৮৭) তার এ প্রার্থনা কা‘বা ঘর নির্মাণের পূর্বে ছিলো এ জন্যই মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا﴾‘হে আমার রাব্ব! এ শহরকে নিরাপদ রাখুন।’ (১৪ নং সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং ৩৫) দু‘আর মধ্যে এই শহর বলার কারণ হলো কা‘বা ঘর নির্মাণের পূর্বে ইবরাহীম (আঃ)-এরূপ দু‘আ করেছিলেন। আবার সূরাহ্ ইবরাহীমে এ প্রার্থনা এভাবে রয়েছেঃ ﴿رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا﴾‘হে আমার রাব্ব! এ শহরকে নিরাপদ রাখুন।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১২৬) সম্ভবত এটি দ্বিতীয় বারের প্রার্থনা ছিলো, যখন বায়তুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয় ও মাক্কা শহর হয়ে যায় এবং ইসহাক (আঃ) জন্ম গ্রহণ করেন, যিনি ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর চেয়ে তের বছরের ছোট ছিলেন। এ জন্যই এ প্রার্থনা শেষে তাঁর জন্ম লাভের জন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবরাহীম (আঃ) তাঁর দু‘আর শেষে বলেনঃ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِیْ وَهَبَ لِیْ عَلَى الْكِبَرِ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ١ؕ اِنَّ رَبِّیْ لَسَمِیْعُ الدُّعَآءِ﴾‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্র প্রাপ্য যিনি আমাকে আমার বার্ধ্যকের সময় ইসমা‘ইল ও ইসহাককে দান করেছেন; আমার রাব্ব অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। (১৪ নং সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং ৩৯)ইবরাহীম (আঃ) যখন তাঁর সন্তানদের জন্য ইমামতির প্রার্থনা জানালেন এবং অত্যাচারীদের বঞ্চিত হওয়ার ঘোষণা শুনলেন এবং বুঝতে পারলেন যে, তাঁর পরে আগমনকারীদের মধ্যে অনেকে অবাধ্যও হবে। তখন তিনি ভয়ে শুধুমাত্র মু’মিনদের জন্যই আহার্যের প্রার্থনা জানালেনঃ﴿وَّ ارْزُقْ اَهْلَه مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ﴾ ‘আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান আনে, তাদের ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান করো।’ কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জানিয়ে দিলেন যেঃ﴿قَالَوَمَنْكَفَرَفَاُمَتِّعُهٗقَلِیْلًاثُمَّاَضْطَرُّهٗۤاِلٰىعَذَابِالنَّارِ١ؕوَبِئْسَالْمَصِیْرُ﴾‘তিনি বললেন, ‘যে কেউ কুফরী করবে তাকেও আমি কিছু দিনের জন্য উপকার লাভ করতে দিবো এবং তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে দাখিল করবো, আর কতোই না নিকৃষ্ট তাদের ফিরার জায়গা!’ অতএব মহান আল্লাহ ইহলৌকিক সুখ সম্ভোগ কাফিরদেরকেও দিবেন। যেমন অন্যত্র তিনি বলেনঃ ﴿كُلًّا نُّمِدُّ هٰۤؤُلَآءِ وَ هٰۤؤُلَآءِ مِنْ عَطَآءِ رَبِّكَ وَ مَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحْظُوْرًا﴾‘তোমার রাব্ব তাঁর দান দ্বারা এদেরকে এবং তাদেরকে সাহায্য করেন এবং তোমার রবের দান অবারিত। (১৭ নং সূরা ইসরাহ, আয়াত নং ২০) অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿قُلْ اِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَى اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَؕ۶۹ مَتَاعٌ فِی الدُّنْیَا ثُمَّ اِلَیْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِیْقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِیْدَ بِمَا كَانُوْا یَكْفُرُوْنَ﴾তুমি বলোঃ যারা মহান আল্লাহ্র ওপর মিথ্যা রচনা করে তারা সফলকাম হবে না। এটা দুনিয়ার সামান্য আরাম আয়েশ মাত্র, অতঃপর আমারই দিকে তাদের ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তাদেরকে কুফরীর বিনিময়ে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো। (১০ নং সূরা ইউনুস, আয়াত নং ৬৯-৭০) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ﴿وَ مَنْ كَفَرَ فَلَا یَحْزُنْكَ كُفْرُهٗ١ؕ اِلَیْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوْا١ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ۲۳ نُمَتِّعُهُمْ قَلِیْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ اِلٰى عَذَابٍ غَلِیْظٍ﴾কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন তোমাকে ক্লিষ্ট না করে। আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তাদেরকে অবহিত করবো তারা যা করতো। অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বন্ধে মহান আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিবো স্বল্পকালের জন্য। অতঃপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো। (৩১ নং সূরা লুকমান, আয়াত নং ২৩-২৪) অন্যস্থানে মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿وَ لَوْ لَاۤ اَنْ یَّكُوْنَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ یَّكْفُرُ بِالرَّحْمٰنِ لِبُیُوْتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَّ مَعَارِجَ عَلَیْهَا یَظْهَرُوْنَۙ۳۳ وَ لِبُیُوْتِهِمْ اَبْوَابًا وَّ سُرُرًا عَلَیْهَا یَتَّكِـُٔوْنَۙ۳۴ وَ زُخْرُفًا١ؕ وَ اِنْ كُلُّ ذٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا١ؕ وَ الْاٰخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِیْنَ﴾সত্য প্রত্যাখ্যানে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, এই আশঙ্কা না থাকলে দয়াময় মহান আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিড়ি যাতে তারা আরোহণ করে। আর তাদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত দরজা, বিশ্রামের জন্য পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসতো এবং স্বর্ণের নির্মিতও। আর এই সবই তো শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। মুত্তাক্বীদের জন্য তোমার রবের নিকট রয়েছে আখিরাতের কল্যাণ। (৪৩ নং সূরা আয যুখরুফ, আয়াত নং ৩৩-৩৫)অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿ثُمَّاَضْطَرُّهٗۤاِلٰىعَذَابِالنَّارِ١ؕوَبِئْسَالْمَصِیْرُ﴾‘অতঃপর তাদেরকে অগ্নির শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো, ঐ গন্তব্য স্থান নিকৃষ্টতম।’ (২ নং সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ১২৬) অত্র আয়াতাংশের ভাবার্থ এই যে, মহান আল্লাহ তাদেরকে দেখছেন এবং অবকাশ দিচ্ছেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করবেন। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿وَ كَاَیِّنْ مِّنْ قَرْیَةٍ اَمْلَیْتُ لَهَا وَ هِیَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ اَخَذْتُهَا١ۚ وَ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ﴾‘আর আমি অবকাশ দিয়েছি কতো জনপদকে যখন তারা ছিলো অত্যাচারী; অতঃপর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।’ (২২ নং সূরা হাজ্জ, আয়াত নং ৪৮)সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ"لا أحد أصبر على أذى سمعه من الله؛ إنهم يجعلون له ولدا، وهو يرزقهم ويعافيهم" ‘কষ্টদায়ক কথা শুনে মহান আল্লাহ অপেক্ষা বেশি ধৈর্যধারণকারী আর কেউই নেই। তারা তাঁর সন্তান সাব্যস্ত করছে, অথচ তিনি তাদেরকে আহার্যও দিচ্ছেন এবং নিরাপত্তাও দান করেছেন। (সহীহুল বুখারী ৬০৯৯, সহীহ মুসলিম ২৮০৪, ফাতহুল বারী ১৩/৩৭২, সহীহ মুসলিম ৪/২১৬০)অন্য একটি সহীহ হাদীসেও রয়েছে যেঃ "إن الله ليملي للظالم حتى إذا أخذه لم يفلته".‘মহান আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ঢিল দেন, অতঃপর হঠাৎ তাদেরকে ধরে ফেলেন আর কখনো রেহাই দেননা।’ (ফাতহুল বারী ৮/২০৫)এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেনঃ﴿وَ كَذٰلِكَ اَخْذُ رَبِّكَ اِذَاۤ اَخَذَ الْقُرٰى وَ هِیَ ظَالِمَةٌ١ؕ اِنَّ اَخْذَهٗۤ اَلِیْمٌ شَدِیْدٌ﴾এরূপই তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদের পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর। (১১ নং সূরা হুদ, আয়াত নং ১০২) কোন কোন ক্বারী পাঠ করতেনঃ قالومنكفرفأمتعه ‘তিনি বললেন, ‘যে কেউ কুফরী করবে তাকেও আমি কিছু দিনের জন্য উপকার লাভ করতে দিবো।’ এই বাক্যকে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত করার পঠন খুবই বিরল এবং তা সপ্ত পাঠকের পঠনের বিপরীত। রচনা রীতিরও এটা উল্টো। কেননা قال ক্রিয়া পদের ضمير টি মহান আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু এ বিরল পঠনে এর কর্তা ও উক্তিকারী ইবরাহীম (আঃ) হচ্ছেন। আর এটা বাক্যরীতির সম্পূর্ণ উল্টো। কা‘বা ঘর তৈরী এবং ইব্রাহীম (আঃ)-এর আন্তরিক প্রার্থনা قواعد শব্দটি قاعدة এর বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে থামের নিম্নতল এবং ভিত্তি। মহান আল্লাহ তার নবী (আঃ)-কে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি তোমার সম্প্রদায়কে ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির সংবাদ দিয়ে দাও। একটি কিরা’আতে واسمعيل এর পরে يقولان ও রয়েছে। এরই প্রমাণ রূপে مسلمين শব্দটিও এসেছে।ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমা‘ইল (আঃ) শুভ কাজ শুরু করেন এবং তা গৃহীত হয় কিনা এ ভয় তাঁদের রয়েছে। এ জন্যই তারা মহান আল্লাহ্র নিকট এটি কবূল করার প্রার্থনা জানাচ্ছেন। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ﴿رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا١ؕ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ۱۲۷ رَبَّنَا وَ اجْعَلْنَا مُسْلِمَیْنِ لَكَ وَ مِنْ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ١۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَ تُبْ عَلَیْنَا١ۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِیْمُ﴾ ওয়াহাইব ইবনে ওয়ার্দ (রহঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে খুব ক্রন্দন করতেন এবং বলতেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্র প্রিয় বন্ধু এবং নবী ইবরাহীম (আঃ)! মহান আল্লাহ্র কাজ তাঁর হুকুমেই রয়েছেন, তাঁর হুকুমেই তাঁর ঘর নির্মাণ করেছেন, তথাপি ভয় করছেন যে, না জানি মহান আল্লাহ্র নিকট এটি না মঞ্জুর হয়।’ (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৮৪) মহান আল্লাহ মু’মিনদের অবস্থা এরকমই বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿وَ الَّذِیْنَ یُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّ قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ ﴾‘যারা তাদের দানের বস্তু দান করে আর তাদের অন্তর ভীত শঙ্কিত থাকে।’ (২৩ নং সূরা মু’মিনূন, আয়াত নং ৬০)সহীহ হাদীসে রয়েছে, যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, অতি সত্বরই তা যথা স্থানে আসছে। ইমাম বুখারী (সনদ সহীহ। সহীহুল বুখারী ৩১৮৪, আহাদীসুল আম্বিয়া লি ইমাম বুখারী ৬/৩৩৬৪, মুসনাদে আহমাদ ১/৩৪৭/৩২৫০) (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ইসামাঈল (আঃ) তাঁর মাকে সাথে নিয়ে চলতে চলতে ইবরাহীম (আঃ) এমন এক জায়গায় একটি গাছের নীচে পৌঁছে, যে গাছের নীচে অবস্থিত ছিলো যমযম কূপ এবং ওপরের দিকে ছিলো কা‘বা ঘরের অবস্থান। তখন ইসমাঈল (আঃ) এতোই ছোট ছিলেন যে, তাঁকে তাঁর মাকেই দেখাশোনা করতে হতো। মাক্কায় তখন কোন জনবসতি ছিলো না এবং পানিরও কোন ব্যবস্থা ছিলো না। একটি ব্যাগে সামান্য কিছু খেজুর এবং একটি পানির পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানিসহ ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে সেখানে রেখে চলে আসেন। ইবরাহীম (আঃ) যখন চলে আসছিলেন তখন ইসমাঈল (আঃ) এর মা তাঁর পিছু পিছু আসেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ হে ইবরাহীম (আঃ)! আপনি আমাদেরকে এই বিরাণ ভূমিতে কার কাছে রেখে চলে যাচ্ছেন, যেখানে কোন লোক বসতি নেই? তিনি এ প্রশ্নটি বার বারই করছিলেন। কিন্তু ইবরাহীম (আঃ)-কোন উত্তরই দিচ্ছিলেন না। ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মা তাঁকে প্রশ্ন করলেন মহান আল্লাহ কি আপনাকে এরূপ করতে বলেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।’ তখন তিনি বললেনঃ তাহলে এতে আমি খুশি, কারণ মহান আল্লাহ আমাদের ত্যাগ করবেন না। এরপর ইবরাহীম (আঃ) সেখান থেকে চলে আসেন। কিছু দূর পথ অতিক্রম করার পর যখন তাদের আর দেখা যাচ্ছিলো না তখন সানাইয়াহ নামক স্থানে পৌঁছে কা‘বার দিকে ফিরে দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ্র কাছে দু‘আ করলেনঃ﴿رَبَّنَاۤ اِنِّیْۤ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّیَّتِیْ بِوَادٍ غَیْرِ ذِیْ زَرْعٍ عِنْدَ بَیْتِكَ الْمُحَرَّمِ﴾ ‘হে আমাদের রাব্ব! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসোবাস করলাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র গৃহের নিকট।’ (১৪ নং সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং ৩৭) মহান আল্লাহ্ ইব্রাহীম (আঃ) এর দূয়া কবূল করে সর্বপ্রথম নিয়ামত হিসেবে যমযম কূপ দান করলেন ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মা অতঃপর শিশু ইসমাঈল (আঃ)-এর কাছে ফিরে আসেন, পানি পান করেন এবং ছেলের পরিচর্যা করতে থাকেন। এক সময় তাদের সাথে থাকা পানি ফুরিয়ে যায় এবং তারা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। মা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে তাঁর তৃষ্ণার কথা বুঝতে পারলেন। তিনি তাঁকে রেখে একটু দূরে সরে গেলেন। কারণ তিনি ছেলের তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না। তিনি যেখানে অবস্থান করছিলেন তার কাছে একটি পাহাড় দেখতে পেলেন যার নাম ছিলো ‘সাফা।’ তিনি সেই পাহাড়ের ওপর আরোহণ করলেন এবং কাউকে দেখতে পাওয়ার আশায় এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন। কিন্তু সব আশা বৃথা! অতঃপর তিনি ঐ পাহাড় থেকে নেমে কাপড় উঁচিয়ে যেমনটি কোন লোক পরিশ্রান্ত হয়ে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌঁড়ায়, তেমনি দৌঁড়ে গিয়ে ‘মারওয়া’ পাহাড়ে আরোহণ করেন। ওখানেও কাউকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলেন। এভাবে তিনি দুই পাহাড়ের মাঝে সাত বার দৌড়ালেন। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ জন্যই হাজ্জ কিংবা ‘উমরাহ্ করার সময় লোকদেরকে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌঁড়াতে হয়।যখন ইসমা‘ঈল (আঃ) এর মা মারওয়া পৌঁছেন তখন তিনি যেন কারো আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি নিজে নিজে ধ্বনি করলেন। তিনি আবার আওয়াজ শুনতে চেষ্টা করলেন এবং পুনরায় শব্দ শোনার পর বললেনঃ আমি আপনার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, আপনার কাছে কি কোন খাদ্য আছে? তিনি দেখতে পেলেন যে, যে স্থানটিতে বর্তমান যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে ফিরিশতা তার পায়ের গোড়ালি দ্বারা অথবা পাখা দ্বারা মাটি খুঁড়ছেন এবং ঐ স্থান থেকে ফোয়ারা হয়ে পানি বের হয়ে আসছে। ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মা অত্যন্ত আশ্চর্যাম্বিত হলেন এবং তিনিও মাটি খুঁড়ে তার দুই হাত দিয়ে পানি রাখার পাত্রে তিনিও মাটি খুঁড়ে তার দুই হাত দিয়ে পানি রাখার পাত্রে পানি ভর্তি করতে শুরু করেন। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ"يرحم الله أم إسماعيل، لو تركت زمزم -أو قال: لو لم تغرف من الماء -لكانت زمزم عينًا مَعينًا"ইসমা‘ঈল (আঃ) এর মায়ের প্রতি মহান আল্লাহ দয়া করুন! তিনি যদি পানি-প্রবাহ বন্ধ করার জন্যে কূপের চারিদিকে বাঁধ না দিতেন তাহলে যমযমের পানি-প্রবাহ সমস্ত পৃথিবী সায়লাব হয়ে যেতো। (সনদ সহীহ। সহীহুল বুখারী ৩১৮৪, আহাদীসুল আম্বিয়া লি ইমাম বুখারী ৬/৩৩৬৪, মুসনাদ আহমাদ ১/৩৪৭/৩২৫০) ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর মা পেট ভরে যা পান করে তার ছেলেও তৃষ্ণা মেটালেন। ফিরিশতা তাকে বললেনঃ আপনি ভয় পাবেন না, এই বালক এবং তাঁর পিতা উভয়ে মিলে এখানে মহান আল্লাহ্র ঘর তৈরী করবেন। মহান আল্লাহ্র নাম স্মরণকারীকে মহান আল্লাহ কখনো পরিত্যাগ করবেন না। ঐ সময় ঘরের উঁচ্চতা ছিলো সমতল ভূমির সমান। পানির প্রবাহ এর ডান ও বাম দিকের উচ্চতা পর্যন্ত উঠতো। জনহীন উপত্যকায় ‘জারহাম’ গোত্রের আগমন কিছুদিন পর ঘটনাক্রমে ‘জারহাম’ গোত্রের লোক ‘কিদার’ পথে যাচ্ছিলো। তারা কা‘বা ঘরের নিম্নাংশে অবতরণ করে। কিছু পানিচর পাখির প্রতি তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ায় তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ ‘এটি পানির পাখি এবং এখানে পানি ছিলো না আমরা কয়েকবার এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেছি। এতোটা শুষ্ক জঙ্গল ও জনহীন প্রান্তর। এখানে পানি এলো কোথা থেকে?’ প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য তারা লোক পাঠিয়ে দেয়। তারা ফিরে এসে সংবাদ দেয় যে, সেখানে বহু প্রাণী রয়েছে। তখন তারা সবাই চলে আসে এবং ইসমাঈল (আঃ) এর মায়ের নিকট আরয করেঃ আপনি অনুমতি দিলে আমরাও এখানে অবস্থান করি। এটা পানির জায়গা।’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে। আপনারা স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করুন। কিন্তু পানির ওপর অধিকার আমারই থাকবে। তারা তাঁর প্রস্তাবে রাযি হলেন। ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসমাঈল (আঃ) এর মা তখন চাচ্ছিলেন যে, সেখানে লোকবসতি গড়ে উঠুক যাতে তাদের সাথে নিয়ে একত্রে বাস করা যায়। এভাবে ঐ লোকজন বসোবাস করতে শুরু করে এবং আস্তে আস্তে তাদের আত্মীয় স্বজনও তাদের সাথে এসে যোগ দিতে থাকে। অতঃপর ইসমাঈল (আঃ) বড় হয়ে যৌবন প্রাপ্ত হোন এবং তাদের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তাদের কাছ থেকে তিনি ‘আরবী ভাষা শিখেন এবং তারাও ইসমাঈল (আঃ) এর কথা মেনে চলতেন। আর এখানেই ইসমাঈল (আঃ) এর মা ইন্তিকাল করেন। প্রিয় পুত্র ও পুত্র বধূর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ও কথোপকথন এক সময় ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে তাঁর পোষ্যদের দেখার ইচ্ছা জাগে এবং মাক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন। (অবশ্য ইবরাহীম (আঃ) এর আগেও একবার মাক্কায় এসেছিলেন, যখন ইসমাঈল (আঃ) এর বয়স ১০/১২ বছর। স্বপ্নে প্রিয় পূত্র ইসমাঈল (আঃ) কে যবেহ করার আদেশ প্রাপ্ত হয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই ইবরাহীম (আঃ) আবারো তথা দ্বিতীয় বার মাক্কায় আগমন করেন। (আর রাহীকুল মাখতূম) তিনি যখন মাক্কা পৌঁছেন তখন তাঁর ছেলে ইসমা‘ঈল (আঃ) বাড়ীতে ছিলেন না। তিনি তাঁর পুত্রবধুকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘সে কোথায় রয়েছে?’ উত্তর আসেঃ তিনি পানাহারের খোঁজে বেরিয়েছেন। অর্থাৎ শিকার করতে গেছেন।’ তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমাদের অবস্থা কি?’ সে বলেঃ ‘অবস্থা খারাপ, বড়ই দারিদ্রতা ও সঙ্কীর্ণতার মধ্যে দিন যাপন করছি।’ তিনি বলেনঃ তোমার স্বামী বাড়ী এলে তাকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে যে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করে।’ ইসমাঈল (আঃ) ফিরে এসে যেন কোন মানুষের আগমনের ইঙ্গিত পান। তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এখানে কোন লোকের আগমন ঘটেছিলো কি?’ স্ত্রী বলেঃ ‘হ্যাঁ’ এরূপ এরূপ আকৃতির একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এসেছিলো। তিনি আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে আমি বলি যে, তিনি শিকার করতে বেরিয়েছেন। তার পরে জিজ্ঞেস করেন, ‘দিন যাপন কিভাবে হচ্ছে? ‘আমি বলি যে, আমরা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ ও কঠিন অবস্থায় দিন যাপন করছি।’ ইসমাঈল (আঃ) বলেনঃ ‘আমাকে কিছু বলতে বলেছেন কি?’ স্ত্রী বলেঃ ‘হ্যাঁ, তিনি বলেছেন তোমার স্বামী আসলে তাকে বলবে যে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ পরিবর্তন করে।’ ইসমাঈল (আঃ) তখন বললেনঃ ‘হে আমার সহধর্মিনী! জেনে রেখো যে, উনি আমার পিতা। তিনি যা বলে গেছেন তার ভাবার্থ এই যে, যেহেতু তুমি অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছো সে জন্য আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। যাও, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। তাকে তালাক দিয়ে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের চেষ্টা কিছুদিন পর ইবরাহীম (আঃ) মহান আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে পুনরায় এখানে আসেন। ঘটনাক্রমে এবারও ইসমাঈল (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। পুত্রবধূকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে, তিনি তাদের জন্য আহার্যের অনুসন্ধানে বেরিয়েছেন। পুত্রবধূ বলেঃ ‘আপনি বসুন যা কিছু হাযির রয়েছে তাই আহার করুন।’ তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘বলতো! তোমাদের দিন যাপন কিভাবে হচ্ছে এবং তোমাদের অবস্থা কিরূপ?’ উত্তর আসেঃ ‘আলহামদু লিল্লাহ! আমরা ভালোই আছি এবং মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহে সুখে-স্বচ্ছন্দে আমাদের দিন যাপন হচ্ছে। এ জন্য আমরা মহান আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমাদের আহার্য কি? উত্তর আসেঃ ‘গোশত।’ জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমরা পান করো কি?’ উত্তর হয়ঃ পানি।’ তিনি প্রার্থনা করেনঃ হে প্রভু! আপনি তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি শস্য তাদের নিকট থাকতো এবং তারা এটা বলতো তাহলে ইবরাহীম (আঃ) তাদের জন্য শস্যেরও বরকত চাইতেন। এখন এ প্রার্থনার বরকতে মাক্কাবাসী শুধুমাত্র গোশত ও পানির ওপরেই দিন যাপন করতে পারে, অন্য লোক পারে না।’ ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ ‘আচ্ছা, আমি যাচ্ছি, তোমার স্বামীকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে যে সে যেন তার চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপরে ইসমাঈল (আঃ) সমস্ত সংবাদ অবগত হোন। তিনি বলেনঃ তিনি ছিলেন আমার সম্মানিত পিতা। আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, আমি যেন তোমাকে পৃথক না করি। তৃতীয় বার পুনরায় আগমন ও পূত্রের সাথে সাক্ষাৎ এবং কা‘বা ঘর নির্মাণ আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম (আঃ) মহান আল্লাহ্র অনুমতি লাভ করে এখানে আসেন। ইসমাঈল (আঃ) যমযম কূপের পাশে একটি পাহাড়ের ওপর তীর সোজা করছিলেন। এমতাবস্থায় ইবরাহীম (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইসমাঈল (আঃ) পিতাকে দেখামাত্রই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পিতা-পুত্রের মিলন হলে ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ হে ইসমাঈল! আমার প্রতি মহান আল্লাহ্র একটি নির্দেশ হয়েছে তিনি বলেনঃ যে নির্দেশ হয়েছে তা পালন করুন বাবা। তিনি বলেন হে আমার প্রিয় পুত্র! তোমাকেও আমার সাথে থাকতে হবে। তিনি আরয করেনঃ আমি হাযির বাবা! তিনি বলেনঃ এ স্থানে মহান আল্লাহ্র একটি ঘর নির্মাণ করতে হবে। তিনি বলেন খুব ভালো কথা বাবা! এরপর পিতা ও পুত্র মিলে বায়তুল্লার ভিত্তি স্থাপন করেন এবং উঁচু করতে আরম্ভ করেন। ইসমাঈল (আঃ) পাথর এনে দিতেন এবং ইবরাহীম (আঃ) তা দিয়ে দেয়াল গাঁথতে থাকেন। দেয়াল কিছুটা উঁচু হলে ইসমা‘ঈল (আঃ) এ পাথরটি অর্থাৎ মাকামে ইবরাহীমের পাথরটি নিয়ে আসেন। এই উঁচু পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম (আঃ) কা‘বা ঘরের পাথর গাঁথতেন এবং পিতা পুত্র উভয়ই এ দু‘আ পড়তেনঃ ﴿رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ﴾হে রাব্ব! আপনি আমাদের এ খিদমত কবূল করুন, আপনি শ্রবণকারী ও দর্শনকারী। (সনদটি সহীহ। ফাতহুল বারী ৬/৪৫৬, সহীহুল বুখারী ৩১৮৪, আহাদীসুল আম্বিয়া লি ইমাম বুখারী-৬/৩৩৬৪, মুসনাদ আহমাদ ১/৩৪৭/৩২৫০) এ ভাবেই তিনি অর্থাৎ ইমাম বুখারী স্বীয় ‘কিতাবুল আম্বিয়া’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনাটি অন্যান্য হাদীসের কিতাবের কোথাও বা সংক্ষিপ্তভাবে আবার কোথাও বা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। একটি বিশুদ্ধ হাদীসে এটাও রয়েছে যে, ইবরাহীম (আঃ) যখন বায়তুল্লার নিকটবর্তী হোন তখন তার মাথার ওপরে মেঘের মতো একটি জিনিস লক্ষ্য করেন। তার মধ্য হতে শব্দ আসছিলোঃ হে ইবরাহীম (আঃ)! যতো দূর পর্যন্ত এই মেঘের ছায়া রয়েছে ততো দূর পর্যন্ত স্থানের মাটি তুমি বায়তুল্লার মধ্যে নিয়ে নাও। কম বেশি যেন না হয়। ঐ বর্ণনায় এটাও আছে যে, বায়তুল্লাহ নির্মাণের পর ইবরাহীম (আঃ) তথায় হাজেরা ও ইসমাঈল (আঃ)-কে ছেড়ে চলে আসেন। কিন্তু প্রথম বর্ণনাটিই সঠিক। আর এভাবেই সামঞ্জস্য হতে পারে যে, পূর্বে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু নির্মাণ করেছিলেন পরে এবং নির্মাণ কার্যে পিতা- পুত্র উভয়েই অংশ নিয়েছিলেন। যেমন কুরআনের শব্দগুলোও এর সাক্ষ্য বহন করে। ‘আলী (রাঃ) বায়তুল্লাহ নির্মাণ সম্পরর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন মহান আল্লাহ্র ঘর নির্মাণ করেন। ইবরাহীম (আঃ) হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন যে, ঐ ঘর কোথায় নির্মাণ করতে হবে এবং কতো বড় করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে। তখন সাকীনা অবতীর্ণ হয় এবং তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, যেখানেই এটা থেমে যাবে সেখানেই ঘর নির্মাণ করতে হবে। এবার ঘরের নির্মাণ কার্য আরম্ভ করেন। হাজারে আসওয়াদের বিবরণ হাজারে আসওয়াদের নিকট পৌঁছলে তিনি ইসমাঈল (আঃ)-কে বলেনঃ বৎস! কোন ভালো পাথর খুঁজে নিয়ে এসো। তিনি ভালো পাথর খুঁজে আনেন। এসে দেখেন যে, তাঁর আব্বা অন্য পাথর তথায় লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন আব্বা! এটা কে এনেছে? তিনি বলেন: মহান আল্লাহ্র নির্দেশক্রমে জিবরাঈল (আঃ) এ পাথর খানা আকাশ হতে নিয়ে এসেছেন। কা‘বুল আহবার (রাঃ) বলেন যে, এখন যেখানে বায়তুল্লাহ রয়েছে পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তথায় পানির ওপর বুদ্ধদের সাথে ফেনা হয়েছিলো। এখান হতেই পৃথিবী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ‘আলী (রাঃ) বলেন যে, কা‘বা ঘর নির্মাণের জন্য ইবরাহীম (আঃ) আরমেনিয়া হতে এসেছিলেন। সুদ্দী (রহঃ) বলেন যে, জিবরাঈল (আঃ) হাজরে আসওয়াদ ভারত হতে এনেছিলেন। সেই সময় পাথরটি সাদা চকচকে ইয়াকুত অর্থাৎ মণি ছিলো। আদম (আঃ)-এর সাথে জান্নাত হতে অবতীর্ণ হয়েছিলো। পরবর্তীকালে মানুষের পাপ পুণ্য হস্ত স্পর্শের ফলে এটা কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। এক বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, এর ভিত্তি পূর্ব হতেই বিদ্যমান ছিলো। এর ওপরেই ইবরাহীম (আঃ) নির্মাণ কার্য আরম্ভ করেন। মুসনাদে ‘আবদুর রাজ্জাকের মধ্যে রয়েছে যে, আদম (আঃ) ভারতে অবতরণ করেছিলেনঃ সেই সময় তার দেহ দীর্ঘ ছিলো। পৃথিবীতে আগমনের পর ফিরিশতাদের তাসবীহ, সালাত, দু‘আ ইত্যাদি শুনতে পেতেন। যখন দেহ খাটো হয়ে যায় এবং ঐ সব ভালো শব্দ আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে মাক্কার দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি মাক্কার দিকে যেতে থাকেন। যেখানে যেখানে তার পদচিহ্ন পড়ে সেখানে সেখানে জনবসতি স্থাপিত হয়। এখানে মহান আল্লাহ জান্নাত হতে একটি ইয়াকুত অবতীর্ণ করেন এবং বায়তুল্লার স্থানে রেখে দেন, আর ঐ স্থানকেই স্বীয় ঘরের জায়গা হিসাবে নির্ধারন করেন। আদম (আঃ) এখানে তাওয়াফ করতে থাকেন এবং এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। নূহ (আঃ) এর প্লাবনের যুগে এটা উঠে যায় এবং ইবরাহীম (আঃ) এর যুগে পুনরায় নির্মাণ করিয়ে নেন। আদম (আঃ) এ ঘরটিকে হেরা, তূর, যীতা, তূরে সাইনা এবং জুদী এই পাঁচটি পাহাড় দ্বারা নির্মাণ করেন। কিন্তু এই সমুদয় বর্ণনার মধ্যেই স্পষ্ট ভাবে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, পৃথিবী সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করা হয়েছিলো। বায়তুল্লার চিহ্ন ঠিক করার জন্য জিবরাঈল (আঃ) ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে গিয়েছিলেন। সেই সময় এখানে বন্য বৃক্ষাদি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। বহু দূরে আমালিক সম্প্রদায়ের বসতি ছিলো। এখানে তিনি ইসমাঈল (আঃ) ও তার মাকে একটি কুড়ে ঘরে রেখে গিয়েছিলেন। অন্য একটি বননায় রয়েছে যে, বায়তুল্লার চারটি স্তম্ভ আছে এবং সপ্তম জমি পর্যন্ত তা নিচে গিয়েছে। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, যুলকারনাইন যখন এখানে পৌছেন এবং ইবরাহীম (আঃ) কে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করতে দেখেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি এটা কি করছেন? তিনি উত্তরে বললেন, মহান আল্লাহ্র নির্দেশক্রমে আমি তাঁর ঘর নির্মাণ করছি। যুলকারনাইন জ্ঞিজ্ঞেস করেন, এর প্রমাণ কি আছে? ইবরাহীম (আঃ) বলেন, এই নেকড়ে বাঘগুলো সাক্ষ্য দিবে। অতঃপর পাঁচটি নেকড়ে বাঘ বললো, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এঁরা দু’জন নির্দেশ প্রাপ্ত। যুলকারনাইন এতে খুশি হোন এবং বলেন, আমি মেনে নিলাম। আরযাকীর তারীখে মাক্কা নামক গ্রন্থে রয়েছে যে, যুলকারনাইন ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর সাথে বায়তুল্লার তাওয়াফ করেছেন। সহীহুল বুখারীর মধ্যে রয়েছে যে, قواعد শব্দের অর্থ হচ্ছে ভিত্তি। এটা قاعدة শব্দের বহুবচন। কুর’আন মাজীদের মধ্যে অন্য জায়গায় والقواعدمنالنساء ও এসেছে। (২৪:৬০) এরও এক বচন হচ্ছে قاعدة। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ"لولا أن قومك حديثو عهد بجاهلية -أو قال: بكفر -لأنفقت كنز الكعبة في سبيل الله، ولجعلت بابها بالأرض، ولأدخلت فيها الحجر"‘তুমি কি দেখেছো না যে, তোমার গোত্র যখন বায়তুল্লার নিমাণ করে, তখন ইবরাহীম (আঃ) এর ভিত্তি হতে ছোট করে দেয়। আমি বলি, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি এটা বাড়িয়ে দিয়ে মূল ভিত্তির ওপর করে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেন, তোমার গোষ্ঠীর লোকেরা যদি নতুন ইসলাম গ্রহণ কারী না হতো এবং তাদের কুফরীর যুগ যদি নিকটে না থাকতো তবে আমি তাই করতাম।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার (রাঃ) এ হাদীসটি জানার পর বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কারণেই হাজারে আসওয়াদের, পাশ্ববর্তী দু’টি স্তম্ভকে স্পর্শ করতেন না। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ"لولا أن قومك حديثو عهد بجاهلية -أو قال: بكفر -لأنفقت كنز الكعبة في سبيل الله، ولجعلت بابها بالأرض، ولأدخلت فيها الحجر"হে ‘আয়িশাহ্! যদি তোমার গোষ্ঠী অজ্ঞতার যুগের নিকটবর্তী না হতো তবে আমি অবশ্যই কা‘বার ধনাগারকে মহান আল্লাহ্র পথে দান করে দিতাম এবং দরজাকে ভূমির সাথে লাগিয়ে দিতাম এবং হাতীম কে বায়তুল্লার মধ্যে ভরে দিতাম।সহীহুল বুখারীর মধ্যে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ " فجعلت لها بابين: بابًا يدخل منه الناس، وبابًا يخرجون"আমি এর দ্বিতীয় দরজাও করতাম, একটি আসার জন্য এবং অপরটি যাওয়ার জন্য। ইবনে যুবাইর (রহঃ) তাঁর খিলাফতের যুগে এরকমই করেছিলেন। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি একে ভেঙ্গে দিতাম এবং ইবরাহীম (আঃ) এর ভিত্তির ওপর নির্মাণ করতাম। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি একটি পূর্বমুখী করতাম এবং একটি পশ্চিমমুখী করতাম এবং হাজরে আসওয়াদ হতে ৬ হাত হাতীম এর মধ্যে ভরে দিতাম যাকে কুরাইশরা এর বাইরে করে দিয়েছে। (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ১/২৭১/১২৬, ৩/৫১৩/১৫৮৩ ও ৮/১৯/৪৪৮৪, সহীহ মুসলিম ২/৪০০/৯৬৯ ও ২/৯৬৮-৯৮২, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ১/১০৪/৩৬৩, সুনান দারিমী ২/৭৬/১৮৬৯, সুনান নাসাঈ ৫/২৩৫-২৩৭/২৯০০-২৯০৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৭, ১১৩, ১৭৭, ২৪৭, ২৫৩, ৩৬২) কা‘বা ঘর নতুন করে নির্মাণ মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইয়াসার (রহঃ) তাঁর গ্রন্থে (সীরাতুন্নাবী (সীরাত ইবনু হিশাম)-১/১৬৮-১৭১, তারীখুত ত্বাবারী- ১/৫২৫, দালায়িলুন নবুওয়াত লিল বাইহাক্বী ২/৬১) বর্ণনা করেনঃ মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বয়স যখন ৩৫ বছর তথা নবুওয়াতের পাঁচ বছর পূর্বে কুরাইশরা কা‘বা ঘরকে নতুনভাবে নির্মাণ করার ইচ্ছা করে। কারণ ছিলো এই যে, এর দেয়াল ছিলো খুব ছোট এবং ছাদও ছিলো না। দ্বিতীয়তঃ ‘বায়তুল্লার ধনাগার চুরি হয়েগিয়েছিলো, যা ঐ ঘরের মধ্যে একটি গভীর গর্তে রক্ষিত ছিলো। এই চোরাই মাল ‘খুযা‘আ’ গোত্রীয় বানী মালীহ্ ইবনে ‘আমরের ক্রীতদাস ‘দুয়ায়েক’ নামক ব্যক্তির নিকট পাওয়া গিয়েছিলো। যাক, এই চুরির অপরাধে দুয়ায়েকের হাত কেটে দেয়া হয়। কিছু লোক দাবী করেন যে, যারা ঐ ধন-ভাণ্ডার চুরি করেছিলো তারা সেটি ‘দুয়ায়েক’ এর কাছে রেখে গিয়েছিলো।তাছাড়া এই ঘর নির্মাণের ব্যাপারে তারা মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিরাট সুযোগ লাভ করেছিলো। তা এই যে, রোম রাজ্যের বণিকদের একটি নৌকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেদ্দায় এসে নোঙ্গর করে। ঐ নৌকায় বহু মূল্যবান কাঠ বোঝাই করা ছিলো। এই কাঠগুলো কা‘বা ঘরের ছাদে কাজে লাগতে পারে এই চিন্তা করে কুরাইশরা ঐ কাঠগুলো কিনে নেয় এবং কিবতী গোত্রের একজন ছুতারকে কা‘বার ছাদ নির্মাণ এর দায়িত্ব অর্পণ করে। কা‘বা ঘর নির্মাণ ও অদৃশ্য ইঙ্গিত কা‘বা ঘর নির্মাণে প্রস্তুতি চলছিলো বটে, কিন্তু বায়তুল্লাহকে ভেঙ্গে দিতে তারা ভয় পাচ্ছিল। মহান আল্লাহ্র ইঙ্গিতে এরও ব্যবস্থা হয়ে যায়। বায়তুল্লার কোষাগারে একটি সাপ ছিলো। যখনই কোন লোক এর নিকটে যেতো তখনই সে হ্যাঁ করে তার দিকে ধাবিত হতো। এই সাপটি প্রত্যহ ঐ গর্ত হতে বেরিয়ে বায়তুল্লার দেয়ালে এসে বসে থাকতো। একবার ঐ সাপটি এখানে বসেই ছিলো, এমন সময় মহান আল্লাহ একটা বিরাট পাখি পাঠিয়ে দেন। পাখিটি সাপটিকে ধরে নিয়ে উড়ে যায়। কুরাইশরা এবার বুঝতে পারলো যে, তাদের ইচ্ছা মহান আল্লাহ্র ইচ্ছার অনুরূপই হয়েছে। কারণ কাঠও তারা পেয়ে গেছে, মিস্ত্রীও তাদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে এবং সাপকেও মহান আল্লাহ সরিয়ে দিয়েছেন। এবার তারা কা‘বা ঘরকে ভেঙ্গে নতুনভাবে নির্মাণ করার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। সর্বপ্রথম ইবনে ওয়াহাব নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কা‘বা ঘরের একটি পাথর নামিয়ে নেয়, কিন্তু পাথরটি তার হাত থেকে উড়ে গিয়ে পুনরায় স্বস্থানে বসে যায়। তখন সে সমস্ত কুরাইশকে সম্বোধন করে বলেঃ শুনে রেখো! মহান আল্লাহ্র ঘর নির্মাণ কাজে সবাই যেন নিজ নিজ উত্তম ও পবিত্র মালই খরচ করে। এতে ব্যভিচার দ্বারা উপার্জিত সম্পদ, সুদের টাকা এবং অত্যাচারের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ কাজে লাগানো যাবে না। ইবনে ইসহাক (রহঃ) বলেন যে, এ পরামর্শ দিয়েছিলো ওয়ালিদ ইবনে মুগীরাহ ইবনে ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে মাখযূম নামক ব্যক্তি। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/২০৪) ইবনে ইসহাক (রহঃ) এটাও উল্লেখ করেন যে, কুরাইশরা কা‘বা ঘরকে পুনরায় নির্মাণ করার জন্য তাদের যথাসাথ্য চেষ্টা করতে লাগলো, তাদের এক এক গোত্র কা‘বা ঘরের এক এক অংশ নির্মাণের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হলো। এরপর বায়তুল্লাহ নির্মাণের জন্য এর বিভিন্ন অংশ গোত্রসমূহের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় ঠিকই, কিন্তু কা‘বা ঘর ভাঙ্গার জন্য প্রথমে আঘাত করতে কেউই সাহস করছিলো না। অবশেষে ওয়ালিদ ইবনে মুগীরাহ বলেঃ ‘আমি আরম্ভ করছি।’ এ বলে সে কোদাল নিয়ে ওপরে উঠে যায় এবং বলে ‘হে মহান আল্লাহ! আপনি খুবই ভালো জানেন যে, আমাদের ইচ্ছা খারাপ নয়, আমরা আপনার ঘর ধ্বংস করতে চাই না, বরং ওটিকে উন্নতি করার চিন্তায়ই আছি।’ এ কথা বলে দু’টি স্তম্ভের দু’ধারে কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়। অতঃপর কুরাইশরা বলেঃ আপাততঃ এ কাজ রেখে দাও, রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করি যদি এ ব্যক্তির ওপর কোন শাস্তি নেমে আসে তাহলে তো এ পাথর ঐ স্থানেই রেখে দেয়া হবে এবং আমাদেরকে এ কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। আর যদি কোন শাস্তি না আসে তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, এটা ভেঙ্গে দেয়া মহান আল্লাহ্র অসন্তুষ্টির কারণ নয়। সুতরাং আগামীকাল আমরা সবাই মিলে এ কাজ শুরু করবো। অতঃপর সকাল হয় এবং সব দিক দিয়েই মঙ্গল পরিলক্ষিত হয়। তখন সবাই এসে বায়তুল্লার পূর্ব ইমারত ভেঙ্গে দেয়। অবশেষে তারা পূর্ব ভিত্তি অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) এর ভিত্তি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এখানে সবুজ পাথর ছিলো এবং যেন একটির সাথে অপরটির সংযোগ ছিলো। একটি লোক দু’টি পাথরকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে তাতে এতো জোরে কোদাল চালায় যে, সেটি আন্দোলিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত মাক্কা ভূমি আন্দোলিত হয়ে উঠে। তখন জনগণ বুঝতে পারে যে, পাথরগুলোকে পৃথক করে তার স্থানে অন্য পাথর লাগানো মহান আল্লাহ্র নিকট গৃহীত নয়। কাজেই সেটা তাদের শক্তির বাইরের কাজ। সুতরাং তারা ঐ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ঐ পাথরগুলোকে ঐভাবেই রেখে দেয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/২০৭) কালো পাথর স্থাপন করা নিয়ে বিরোধ অবশেষে তারা ‘হাজরে আসওয়াদ’ রাখার স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এখন প্রত্যেক গোত্রই এই মর্যাদায় অংশ নিতে পারে। সুতরাং তারা পরস্পরের ঝগড়া বিবাদ করতে থাকে, এমনকি যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। ‘বানু আবদুদ্দার’ এবং ‘বানু ‘আদী’ রক্তপূর্ণ একটি পাত্রে হাত ডুবিয়ে শপথ করে বলে, আমরা সবাই মারা যাবো এটাও ভালো, তথাপি ‘হাজরে আসওয়াদ’ কাউকেও রাখতে দিবো না।’ এভাবেই চার পাঁচ দিন কেটে যায়। অতঃপর কুরাইশরা পরস্পর পরামর্শের জন্য মাসজিদে একত্রিত হয়। আবূ উমাইয়া ইবনে মুগীরাহ ছিলো, কুরাইশদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বয়স্ক ও জ্ঞানী ব্যক্তি। সে সকলকে সম্বোধন করে বলে, ‘হে জনমণ্ডলী! তোমরা কোন একজনকে সালিশ নির্বাচিত করো এবং সে যা ফায়সালা করে তাই মেনে নাও। সালিশ নির্বাচনের ব্যাপারেও মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, সুতরাং তোমরা এক কাজ করো, আগামীকাল ফজরে সর্বপ্রথম যে মাসজিদুল কা‘বায় প্রবেশ করবে সেই আমাদের সালিশদার নির্বাচিত হবে।’ এ প্রস্তাব সবাই সমর্থন করে। সর্বপ্রথম কে প্রবেশ করে এটি দেখার জন্য সবাই অপেক্ষামান থাকে। হাজরে আসওয়াদ ও আল-আমীনের মধ্যস্থতা পরদিন সর্বপ্রথম যিনি মাসজিদুল হারামে আগমন করেন তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁকে দেখা মাত্রই এসব লোক খুশি হয়ে যায় এবং বলেঃ ‘তাঁর মধ্যস্থতা আমরা মেনে নিতে রাযী আছি। ইনি তো আল-আমীন! ইনি তো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! অতঃপর তারা সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে। তিনি বলেনঃ ‘আপনারা একটি বড় ও মোটা চাদর নিয়ে আসুন।’ তারা তা নিয়ে আসে। তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ’ উঠিয়ে এনে স্বহস্তে ঐ চাদরে রেখে দেন এবং বলেনঃ ‘ প্রত্যেক গোত্রের নেতা এসে এই চাদরের কোণা ধরুন এবং এভাবেই আপনারা সবাই ‘হাজরে আসওয়াদ’ উঠানোর কাজে শরীক হয়ে যান।’ এ কথা শুনে সমস্ত লোক আনন্দ প্রকাশ করে এবং সকল গোত্র প্রধানরা চাদরটি উত্তোলন করে। যখন ওটা রাখার স্থানে পৌঁছে তখন মহান আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথরটি স্বহস্তে উঠিয়ে নিয়ে যথাস্থানে রেখে দেন। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আবূ দাউদ আত ত্বায়ালিসী ১১৩, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৫৮, দালায়িলুন নবুওয়াত লিল বাইহাক্বী ২/৫৬,৫৭, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রাজ্জাক ৫/৫৯০৩, মুসনাদ আহমাদ ৩/৪২৫, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৩/২৯২, সীরাতে ইবনে হিশাম ১/১৭১, ১৭২) এভাবে সেই ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ নিমিষেই মিটে যায়। আর এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে তাঁর ঘরে ঐ বরকতময় পাথরটি স্থাপন করিয়ে নেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওপর ওয়াহী আসার পূর্বে কুরাইশরা তাঁকে ‘আল-আমীন’ বলতো। এরপর ওপরের অংশ নির্মিত হয়। এভাবে মহান আল্লাহ্র ঘরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইচ্ছা অনুযায়ী যুবাইর (রাঃ) কা‘বা ঘর পুর্ননির্মাণ করেন ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক (রহঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে কা‘বা ঘর আঠারো হাত লম্বা ছিলো। ইয়ামান দেশীয় ‘কাবাতী’ পর্দা তার ওপর চড়ানো হতো। পরে এটির ওপর চাদর আবৃত করা হয়। সর্বপ্রথম হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তার ওপর রেশমী পর্দা দ্বারা আবৃত করে। (সীরাতে ইবনে হিশাম ১/২১১) কা‘বা ঘরের ইমারত একই থাকে। ‘আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রাথমিক যুগে ষাট বছর পরে এখানে আগুন লেগে যায়। এর ফলে কা‘বা ঘর পুড়ে যায়। এটা ছিলো ইয়াজিদ ইবনে মু‘আবিয়ার রাজত্বের শেষ কাল এবং তখন ইবনে যুবাইরকে (রাঃ) মক্কায় অবরোধ করে রাখা হয়েছিলো। কা‘বা ঘরের ইমারত ও তার বিভিন্ন যুগের আবর্তন এই সময় মক্কার খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) স্বীয় খালা ‘আয়িশাহ সিদ্দিকা (রাঃ)এর নিকট যে হাদীসটি শুনেছিলেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মনের কথা অনুযায়ী বায়তুল্লাহকে ভেঙ্গে ইব্রাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির ওপর নির্মাণ করেন। হাতীমকে ভিতরে নিয়ে নেন। পূর্ব ও পশ্চিমে দু’টি দরজা রাখেন। একটি ভিতরে আসার জন্য, অপরটি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। দরজা দু’টি মাটির সমান করে রাখেন। তাঁর শাসনামল পর্যন্ত কা‘বা এরূপই থাকে। অবশেষে তিনি যালিম হাজ্জাজের হাতে শহীদ হোন। তখন ‘আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশক্রমে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কা‘বা ঘরকে ভেঙ্গে পুনরায় পূর্বের মতো করে নির্মাণ করে। যেমনটি ইমাম মুসলিম (রহঃ) একটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, ‘আতা (রহঃ) বলেছেনঃ ইয়াজিদ ইবনে মু‘আবিয়ার যুগে যখন সিরিয়াবাসী কা‘বা ঘরের ওপর আক্রমণ করে এবং যা হবার তা হয়ে যায়, সেই সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বায়তুল্লাহকে এরূপ অবস্থাতেই রেখে দেন যেন হাজ্জের মৌসুমে জনগণ একত্রিত হয়ে সব কিছু স্বচক্ষে দেখে। এরপরে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) জনগণের সাথে পরামর্শ করেন এবং জানতে চানঃ কা‘বা ঘরকে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে কি নতুনভাবে নির্মাণ করবো, না কি ভাঙ্গা যা আছে তাকেই মেরামত করবো? ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি কা‘বা ঘরকে সেভাবেই পুর্ননির্মাণ করুন।’ মক্কার লোকেরা মুসলিম হতে শুরু করার সময় কা‘বা ঘর যে অবস্থায় ছিলো। কা‘বা ঘরের পাথরটি ঐ অবস্থায় রেখে দিন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুওয়াতের সময় এটা যে অবস্থায় ছিলো এবং লোকেরা ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছিলো।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ আপনাদের কারো ঘর যদি আগুনে পুড়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই সে তা পুর্ননির্মাণ না করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকবেন না। তাহলে মহাসম্মানিত প্রভুর ঘর সম্পর্কে এরূপ মত পেশ করেন কেন? আচ্ছা তিন দিন পর্যন্ত আমি ইস্তেখারা অর্থাৎ লক্ষণ দেখে শুভ বিচার করবো, তারপরে যা বুঝবো তাই করবো।’ তিনি তিন দিন পর তাঁর মত এই হলো যে, অবশিষ্ট দেয়ালগুলো ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। সুতরাং তিনি এ নির্দেশ দিয়ে দেন।কিন্তু কা‘বা ঘর ভাঙ্গতে কেউই সাহস করছিলো না তারা ভয় করছিলো যে, যে ব্যক্তি ভাঙ্গার জন্য অগ্রসর হবে তার ওপর মহান আল্লাহ্র শাস্তি অবতীর্ণ হবে। কিন্তু একজন সাহসী ব্যক্তি উপরে উঠে একটি পাথর ভেঙ্গে দেন। অন্যরা যখন দেখে যে, তার কোন ক্ষতি হলো না তখন তারা সবাই ভাঙ্গতে আরম্ভ করে এবং ভূমি পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করে দেয়। সেই সময়ে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) চারদিকে স্তম্ভ দাঁড় করিয়ে দেন এবং ওর ওপর পর্দা করে দেন। এবারে বায়তুল্লাহ নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর নিকট হতে আমি শুনেছি, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ"لولا أن الناس حديث عهدُهم بكفر، وليس عندي من النفقة ما يُقَوِّيني على بنائه، لكنت أدخلت فيه من الحجر خمسة أذرع، ولجعلت له بابًا يدخل الناس منه، وبابًا يخرجون منهযদি লোকদের কুফরীর সময়টা নিকটে না হতো এবং আমর নিকট নির্মাণের খরচ থাকতো তাহলে আমি ‘হাতিম’ থেকে পাঁচ হাত পর্যন্ত বায়তুল্লার মধ্যে নিয়ে নিতাম এবং কা‘বার দু’টি দরজা করতাম, একটা আসার দরজা এবং অপরটি বের হওয়ার দরজা।’ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেনঃ এখন আর জনগণের কুফরীর যুগ নিকটে নেই, তাদের ব্যাপারে ভয় দূর হয়ে গেছে এবং কোষাগারও পূর্ণ রয়েছে, আমার নিকট যথেষ্ট অর্থ রয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মনোবাসনা পূর্ণ না করার আমার আর কোন কারণ থাকতে পারে না।’ সুতরাং তিনি পাঁচ হাত ‘হাতিম’ ভিতরে নিয়ে নেন। তখন ইব্রাহীম (আঃ) এর ভিত্তি প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং জনসাধারণ তা স্বচক্ষে দেখে নেয়। এরই ওপর দেয়াল গাঁথা হয়। বায়তুল্লার দৈর্ঘ্য ছিলো আঠারো হাত। তিনি মনে করেছিলেন যে, কা‘বা ঘরটি খুবই ছোট, তাই তিনি কা‘বার সম্মুখভাগ আরো দশ ফুট প্রশস্ত করেন এবং দু’টি দরজার ব্যবস্থা করেন। একটি ছিলো প্রবেশ পথ এবং অপরটি বের হওয়ার পথ। কিন্তু ‘আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) এর শাহাদাতের পর ‘আবদুল মালিকের নিকট পত্র লিখে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাঁর পরামর্শ চায় যে, এখন কি করা যায়? এটাও লিখে পাঠায় যে, ঠিক ইব্রাহীম (আঃ) এর ভিত্তির ওপর যে কা‘বা নির্মিত হয়েছে এটা মক্কার সুবিচারকগণ স্বচক্ষে দেখেছেন।’ কিন্তু ‘আব্দুল মালিক উত্তর দেনঃ ‘আমরা যুবায়ের (রাঃ) এর কাজটির সাথে একমত পোষণ করছি না। দৈর্ঘ্য ঠিক রাখো, কিন্তু ‘হাতিম' কে কা‘বা ঘরের বাইরে রেখে দাও এবং দ্বিতীয় দরজাটি বন্ধ করে দাও।’ হাজ্জাজ ‘আব্দুল মালিকের এই নির্দেশক্রমে কা‘বাকে ভেঙ্গে দিয়ে পূর্বের ভিত্তির ওপরে নির্মাণ করে। (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ২/৪০২/৯৭০, ৯৭১, সুনান নাসাঈ-৫/২১৯/২৯১০) ইমাম নাসাঈ (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যে হাদীসটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন সেখানে ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণ দেয়া হয়নি। (সুনান নাসাঈ-৫/২১৯/২৯১০)কিন্তু ‘আব্দুল ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর ভিত্তিকে ঠিক রাখাই সুন্নাতের পন্থা ছিলো। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইচ্ছাতো সেরূপই ছিলো। কিন্তু সেই সময় তাঁর এই ভয় ছিলো যে, মানুষ হয়তো খারাপ ধারণা করবে। কারণ তারা সবেমাত্র মুসলিম হয়েছে। তাই যখন ‘আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান এ হাদীসটি জানতে পারেন তখন তিনি দুঃখ করে বলেনঃ ‘হায়! আমি যদি এটিকে না ভেঙ্গে পূর্বাবস্থায়ই রেখে দিতাম!’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহ মুসলিম ২/৪০৪/৯৭২)সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে রয়েছে যে, হারিস ইবনে ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) যখন ‘আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের খিলাফাতকালে তাঁর নিকট প্রতিনিধি রূপে গমন করেন তখন ‘আব্দুল মালিক তাঁকে বলেনঃ ‘আমি ধারণা করি যে, আবূ হাবীব অর্থাৎ ‘আব্দুল ইবনে যুবাইর (রাঃ) এ হাদীসটি তাঁর খালা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে শুনেননি।’ তখন হারিস ইবনে ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ ‘অবশ্যই তিনি শুনেছেন।’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে স্বয়ং আমিও শুনেছি।’ আব্দুল মালিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ কি শুনেছেন?’ তিনি বলেনঃ ‘আমি শুনেছি, তিনি বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ‘হে ‘আয়িশাহ! তোমার ‘কাওম’ বায়তুল্লাহকে সঙ্কীর্ণ করে দিয়েছে। যদি তোমার সম্প্রদায়ের শিরকের যুগ নিকটে না হতো তাহলে নতুনভাবে আমি এর কমতি পূরণ করতাম। এসো, আমি তোমাকে এর প্রকৃত ভিত্তি দেখিয়ে দেই, হয়তো তোমার গোত্র আবার একে এর প্রকৃত ভিত্তির ওপর নির্মাণ করতে পারে। অতঃপর তিনি ‘আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) কে প্রায় সাত হাত দেখিয়ে দেন এবং বলেনঃ‘আমি এর দু’টি দরজা নির্ণয় করতাম, একটি আগমনের অপরটি প্রস্থানের এবং দরজা দু’টি মাটির সমান করে রাখতাম। একটি রাখতাম পূর্বমুখী এবং অপরটি রাখতাম পশ্চিমমুখী। তুমি কি জানো যে, তোমার ‘কাওম’ দরজাকে এতো উঁচু করে রেখেছে কেন?’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ ‘না।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘শুধুমাত্র নিজেদের মর্যাদা প্রকাশের জন্য; যাকে চাবে প্রবেশ করতে দিবে এবং যাকে চাবে না প্রবেশ করতে দিবেনা। যখন লোক ভিতরে যেতে চাইতো তখন তারা তাকে ওপর হতে ধাক্কা দিতো, ফলে সে পড়ে যেতো। আর যাকে তারা প্রবেশ করানোর ইচ্ছা করতো তাকে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতো।’ ‘আব্দুল মালিক তখন বলেনঃ ‘হে হারিস! আপনি স্বয়ং এ হাদীসটি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে শুনেছেন?’ তিনি বলেনঃ ‘হ্যাঁ’ আমি স্বয়ং শুনেছি।’ তখন ‘আবদুল মালিক কিছুক্ষণ ধরে লাঠির ওপর ভর দিয়ে চিন্তা করেন। অতঃপর বলেনঃ ‘যদি আমি এটি ঐ রকমই রেখে দিতাম! (সহীহ মুসলিম ২/৯৭১) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে এক ইথিওপীয় দ্বারাকা‘বা ঘর ধ্বংস হবে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ"يخرب الكعبة ذو السُّوَيقتين من الحبشة".কা‘বাকে দু’টি ছোট পা অর্থাৎ পায়ের গোছা বিশিষ্ট একজন হাবশী ধ্বংস করবে।’ (সহীহুল বুখারী ১৫৯৬, ৩/৫৩৮/১৫৯১, সহীহ মুসলিম-২৯০৯, ৪/৫৭/২২৩২, ফাতহুল বারী ৩/৫৩৮, সুনান নাসাঈ৫/২১৬/২৯০৪)ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "كأني به أسودَ أفحَجَ، يقلعها حجرًا حجرًا".‘আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি, সেই কৃষ্ণবর্ণের হাবশী এক একটি পাথরকে পৃথক পৃথক করে দিচ্ছে। (সহীহুল বুখারী ১৫৯৫) ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যেঃ"يُخَرِّب الكعبة ذو السويقتين من الحبشة، ويسلبها حلْيتها () ويجردها من كسوتها. ولكأني أنظر إليه أصيلع أفَيْدعَ يضرب عليها بِمِسْحَاته ومِعْوله"‘কা‘বাকে দু’টি ছোট পায়ের গোছা বিশিষ্ট একজন হাবশী ধ্বংস করবে। কা‘বার আবরণ নিয়ে যাবে এবং এর অর্থ সম্পদও ছিনিয়ে নিবে। সে বাঁকা হাত-পা বিশিষ্ট ও টেকো মাথাওয়ালা হবে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে, সে কোদাল মেরে মেরে টুকরো টুকরো করতে রয়েছে।’ (হাদীস সহীহ (বিভিন্ন শাহেদ থাকায়)। ফাতহুল বারী ৩/৫৩৮, মুসনাদ আহমাদ ২/২২০/৭০৫৩, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৩/২৯৮) খুব সম্ভবত এই দুঃখজনক ঘটনা ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পরে ঘটবে। সহীহুল বুখারীতে একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "ليُحَجَّنَّ البيتُ وليُعْتَمَرَنَّ بعد خروج يأجوج ومأجوج"‘ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পরও তোমরা বায়তুল্লাহয় হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ করবে।’ (সহীহুল বুখারী ৩/৫৩১/১৫৯৩, ফাতহুল বারী ৩/৫৩১, মুসনাদ আহমাদ ৩/২৭,৪৮, ৬৪) ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, ইবরাহীম ও ইসমাঈল প্রার্থনা করেছিলেন এই বলেঃ﴿رَبَّنَا وَ اجْعَلْنَا مُسْلِمَیْنِ لَكَ وَ مِنْ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ١۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَ تُبْ عَلَیْنَا١ۚ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِیْمُ﴾‘হে আমাদের রাব্ব! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যে হতেও আপনার অনুগত এক দল লোক সৃষ্টি করুন। আর আমাদেরকে হাজ্জের আহ্কাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন, নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।’ইবনে জারীর (রহঃ) বলেন, তারা দু’জন উক্ত প্রার্থনার দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে তোমার প্রতি বিনয়ী হয়ে তোমার আদেশ মান্যকারী হিসেবে গ্রহণ করো, আমরা তোমার ‘ইবাদতের ক্ষেত্রে তোমার সাথে কাউকে অংশী সাব্যস্ত করবো না। তুমি ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য ও ‘ইবাদত করবো না। অর্থাৎ আমাদেরকে অকৃত্রিম, অনুগত, একত্ববাদী করে নিন এবং আমাদেরকে অংশীবাদী ও রিয়াকারী হতে রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী করুন। ইবনে জারীর (রহঃ), সালাম বিন মুতী (রহঃ) এর থেকে একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, তারাতো মুসলমানই ছিলেনই, কিন্তু এখন ইসলামের ওপর দৃঢ় ও অটল থাকার প্রার্থনা জানাচ্ছেন। এর উত্তরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন (قدفعلت) অথাৎ আমি তোমাদের এই প্রার্থনা কবূল করলাম। সুদ্দী (রহঃ) বলেনঃ ‘আমাদের বংশধরদের মধ্যে হতে’ আয়াতাংশে বংশধর দ্বারা তার দু’জন উদ্দেশ্য নিয়েছেন ‘আরববাসী। কিন্তু ইবনে জারীর (রহঃ) বলেন এখানে ‘আরব ও অনারব সবাই উদ্দেশ্য। কেননা বানী ইসরাঈলও ইবরাহীম (আঃ) এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত। কুর’আন মাজীদের মধ্যে রয়েছেঃ ﴿وَمِنْقَوْمِمُوْسٰۤىاُمَّةٌیَّهْدُوْنَبِالْحَقِّوَبِهٖیَعْدِلُوْنَ﴾‘মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এক দল লোক আছে যারা সত্য বিধান অনুযায়ী অন্যকে পথ দেখায়, আর সত্য বিধান অনুযায়ী ইনসাফ করে।’ (৭ নং সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত ১৫৯)আমি বলি ইবনে কাসীর (রহঃ) যে কিন্তু রচনা রীতি দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, ইবনে জারীর (রহঃ)-এর উক্তিটি সুদ্দী (রহঃ) এর উক্তির বিরপীত নয়। কেননা এ প্রার্থনা ‘আরবের জন্যই যদিও সাধারণভাবে অন্যেরা ও জড়িত রয়েছে। কেননা, এই প্রার্থনার পরে অন্য প্রার্থনায় রয়েছেঃ তাদের মধ্যেই একজন রাসূল প্রেরণ করুন,এই রাসূল দ্বারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝানো হয়েছে। এ প্রার্থনাও গৃহীত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿هُوَالَّذِیْبَعَثَفِیالْاُمِّیّٖنَرَسُوْلًامِّنْهُمْ﴾‘তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রাসূলকে তাদেরই মধ্য থেকে।’ (৬২ নং সূরা আল-জুমু‘আহ, আয়াত ২) কিন্তু এর দ্বারা তাঁর রিসালাত কারো জন্য বিশিষ্ট হচ্ছে না বরং তাঁর রিসালাত সাধারণ। অর্থাৎ ‘আরব অনারব সবার জন্যই তিনি মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত রাসূল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ﴿قُلْ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنِّیْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَیْكُمْ جَمِیْعَا﴾‘বলো, হে মানব জাতি! আমি তোমাদের সকলের জন্য মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল।’ (৭ নং সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত ১৫৯) ইবরাহীম (আঃ) ও ইসামাঈল (আঃ) নবীদ্বয়ের প্রার্থনার মতো প্রত্যেক আল্লাহ ভীরু লোকেরই প্রার্থনা হওয়া উচিত। কেননা অনুরূপ দু‘আ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে করতে শিখিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ﴿وَ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِیْنَ اِمَامًا﴾ ‘আর যারা প্রার্থনায় বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করো যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। আর আমাদের মুত্তাক্বীদের নেতা বানিয়ে দাও।’ (২৫ নং সূরা ফুরকান, আয়াত নং ৭৪)সুতরাং বান্দাদের পক্ষ থেকে মুহাব্বতের সাথে মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদতের পূর্ণতা হলো যে বান্দা পছন্দ করবে যে তার ঔরসজাত সন্তানাদিও তার মৃত্যুর পরে যেন অংশীহীন মহান আল্লাহ্র ‘ইবাদতে লিপ্ত থাকে, তার সাথে কাউকে শরীক স্থাপন না করে। এ জন্যই মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) কে বললেন, اني جاعلك للناس اماما অর্থাৎ আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য নেতা বানাইলাম। আর এর উত্তরে ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ ومن ذريتى قال لا ينال عهد الظالمين ‘আমার বংশধর হতেও নেতা বানান, মহান আল্লাহ বললেন, অন্যায়কারীগণের প্রতি আমার কোন প্রতিশ্রুতি থাকবে না। ফলে ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ ﴿وَّ اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ﴾ ‘আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে মূর্তি পূজা হতে দূরে রাখুন।’ (১৪ নং সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং ৩৫)আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ"إذا مات ابن آدم انقطع عمله إلا من ثلاث: صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له"‘আদম সন্তান মারা যাওয়া মাত্র তার কার্যাবলী শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। (১) সাদাকাহ জারিয়াহ বা প্রবাহমান সাদাকাহ, (২) ‘ইল্ম, যদ্বারা উপকার লাভ করা হয়, (৩) সৎ সন্তান যারা প্রার্থনা করে।’ (হাদীস সহীহ। সহীহ মুসলিম- ৩/১৪/১২৫৫, সুনান আবূ দাউদ-৩/১১৭/২৮৮০, জামি‘ তিরমিযী-৩/৬৬০/১৩৭৬, সুনান নাসাঈ ২/২৫১/৩৬৫৩, মুসনাদে আহমাদ ২/২৭২) ‘মানাসিক’ কী ইবনে জুরাইজ (রহঃ) ‘আতা থেকে ‘ওয়া আরিনা’ এর অর্থ বলেছেন, আমাদেরকে শিখিয়ে দিন। আর মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, ‘মানাসিকানা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, যবেহ করার জায়গা। আর সা‘ঈদ ইবনে মানসূর মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ইবরাহীম (আঃ) দু‘আয় বলেছিলেন ‘ওয়া আরিনা মানাসিকানা’ অর্থাৎ আমাদেরকে হাজ্জের নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিন। কা‘বা ঘরের ইমারত পূর্ণ হওয়ার পর জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে নিয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আসেন, অতঃপর ‘মারওয়া’ পর্বতে যান এবং বলেন যে, এগুলোই হচ্ছে মহান আল্লাহ্র স্মৃতি নিদর্শন। অতঃপর তাঁকে মিনার দিকে নিয়ে যান। ‘আকাবাহর’ উপরে একটি গাছের পাশে শায়তানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিবরাঈল (আঃ) ইবরাহীম (আঃ) কে বলেনঃ ‘তাকবীর’ পাঠ করে তার ওপর প্রস্তর নিক্ষেপ করুন।’ ইবলীস ওখান হতে পালিয়ে গিয়ে ‘জামরা-ই-আকাবাহর’র পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানেও তিনি তাকে পাথর মারেন। অতঃপর কুলুষ শয়তান নিরাশ হয়ে চলে যান। হাজ্জের আহকামের মধ্যে সে কিছু গোলমাল সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো, কিন্তু সুযোগ পেলো না এবং সম্পূর্ণ রূপে নিরাশ হয়ে গেলো। সেখান থেকে জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে ‘মাশ’আরে হারাম’ নিয়ে যান। অতঃপর ‘আরাফাহ মায়দানে পৌঁছে দেন। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) তাঁকে তিনবার জিজ্ঞেস করেনঃ ‘বলুন, বুঝেছেন?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ’। অন্য বর্ণনায় শায়তানকে তিন জায়গায় পাথর মারার কথা বর্ণিত আছে। প্রত্যেক হাজী শায়তানকে সাতটি করে পাথর মারেন। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৮৭, মুসনাদ আবূ দাউদ আত- ত্বয়ালেসী ৩৫১ পৃষ্ঠা, ২৬৯৭)
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us