22:53
لِّيَجۡعَلَ مَا يُلۡقِى ٱلشَّيۡطَٰنُ فِتۡنَةً لِّلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَٱلۡقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمۡۗ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَفِى شِقَاقِۭ بَعِيدٍ٥٣
Saheeh International
[That is] so He may make what Satan throws in a trial for those within whose hearts is disease and those hard of heart. And indeed, the wrongdoers are in extreme dissension.
৫২-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: অত্র আয়াতে تَمَنّٰي ও أُمْنِيَّتِه۪ এ শব্দদ্বয়ের দুটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। একটি হলন আকাক্সক্ষা করা বা অন্তরে কল্পনা করা। অন্যটি হল- পড়া বা তেলাওয়াত করা। এ ভিত্তিতে أُمْنِيَّتِه۪ এর অর্থ হবে রাসূলের আকাক্সক্ষা করা বা তেলাওয়াত করা। যেমন উসমান (রাঃ)-কে যখন হত্যা করা হয় তখন কবি হাসসান বিন সাবেত বলেছিলেন:تمني كتاب الله أول ليلة ... وآخرها لاقي حِمام المقادرপ্রথম অর্থ অনুযায়ী এর তাৎপর্য হলন যখনই আল্লাহ তা‘আলার রাসূল বা নাবীগণ কোন আকাক্সক্ষা করেন শয়তান তাতে বাধা সৃষ্টি করে, যাতে তা পূর্ণ না হয়। আর রাসূলদের আকাক্সক্ষা এটা হয় যে, সবাই ঈমান আনুক, ইসলাম গ্রহণ করুক। কিন্তু শয়তান বাধা সৃষ্টি করে বেশি সংখ্যক মানুষকে ঈমান আনা হতে দূরে রাখতে চায়। দ্বিতীয় অর্থ অনুযায়ী এর তাৎপর্য দাঁড়াবে যে, যখনই আল্লাহ তা‘আলার রাসূল ও নাবীগণ ওয়াহী তেলাওয়াত করে শোনান, তখনই শয়তান উক্ত ওয়াহীর কথার সাথে নিজের কিছু কথা মিলিয়ে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের এ চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেন। এ তাফসীর অধিকাংশ মুফাসসিরগণ করেছেন। (ইমাম বুখারী সূরা হজ্জের অত্র আয়াতের তাফসীরে নিয়ে এসেছেন, ইগাসাতুল লাহফান ১:৯৩)আর আল্লাহ তা‘আলা এ কথার দ্বারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দিলেন যে, শয়তান এরূপ কার্যকলাপ শুধু তোমার সাথেই করেনি বরং তোমার পূর্ববর্তী সকল নাবীদের সাথেই করেছে। সুতরাং তুমি একটুও বিচলিত হবে না। শয়তানের ঐ সমস্ত চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধি হতে যেমন আমি পূর্বের নাবীদেরকে রক্ষা করেছি, তেমনি তুমিও সুরক্ষিত থাকবে এবং শয়তানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা নিজের বাণীকে পাকাপোক্ত ও সুদৃঢ় করবেন।এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: শয়তানের এ সকল চক্রান্ত করার উদ্দেশ্য হলন যে সকল মানুষের অন্তরে কুফরী ও মুনাফিকীর রোগ রয়েছে এবং যাদের অন্তর অধিক পাপ করতে করতে পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে এদেরকে তার জালে আটকে ফেলে অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করা। কারণ শয়তান কয়েকটি কথা নাবীদের কথার সাথে মিশ্রণ করতে পারলে সে সব কথাকে দলীল বানিয়ে বাতিলকে শক্তিশালী করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। আর এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষাও বটে। ফলে যারা কাফির ও মুনাফিক তারা এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মন্দ কর্মে লিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে যারা মু’মিন, জ্ঞানী তারা এ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় এবং সাথে সাথে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসীরে কিসসাতুল গারানীক قصة الغرانيق উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার জীবনে একদা والنجم إذا থেকে الثالثة الأخري (সূরা নাজমের ১-২০ নং আয়াত) পর্যন্ত পাঠ করেন তখন শয়তান তাঁর কথার সাথে এ কথা মিলিয়ে দিয়ে রাসূলের মুখে প্রকাশ করায় যে, تلك الغرانيق العلي – وإن شفاعتهن لترجي অর্থাৎ এগুলো হল মহান গারানীক এবং তাদের সুপারিশের আশা করা যায়। যখন সূরার শেষ প্রান্তে চলে গেলেন তখন তিনি সিজদা করলেন, সাথে সাথে মুসলিম ও মুশরিক সবাই সিজদা করল। মুশরিকরা বলল: আজ তিনি আমাদের দেবতাদের এমন প্রশংসা করেছেন যা তিনি ইতোপূর্বে করেননি। মক্কায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে, মক্কার মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সিজদা করার মধ্য দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এমনকি এ কথা শুনে হাবশায় যে সকল মুসলিমরা হিজরত করেছিল তারা ফিরে এসেছিল এ ধারণা নিয়ে যে, তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরাও হয়তো ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসে দেখে তারা কাফির রয়ে গেছে। এ ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাতিল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কথা বলবেন না যে, এরা (লাত, উযযা, মানাত ইত্যাদি দেবতা) মহান গারানীক আর এদের সুপারিশ কবুল করার আশা করা যায়, এটা সম্পূর্ণ শিরকী ও কুফরী কথা। তাঁর মুখ দিয়ে এরূপ কথা কোন দিন বের হতে পারে না। এটা যে মিথ্যা তার প্রমাণ পরের আয়াত থেকেই বুঝা যাচ্ছে। কারণ পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: (إِنْ هِيَ إِلَّآ أَسْمَا۬ءٌ سَمَّيْتُمُوْهَآ أَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّآ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ط إِنْ يَّتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَي الْأَنْفُسُ) “এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছ, এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা শুধু অনুমান এবং তাদের প্রবৃত্তি যা চায় তারই অনুসরণ করে।” (সূরা নাজম ৫৩:২৩) পূর্বের আয়াতগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মা‘বূদের প্রশংসা করার পর অত্র আয়াতে নিন্দা করবেন এটা বোধগম্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকরদের মা‘বূদের প্রথমে প্রশংসা করবেন তারপর নিন্দা করা হবে, আর তারা ছেড়ে দিবে? আবার তারা সিজদাও করবে? কখনো হতে পারে না। এছাড়া কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, এ ঘটনা মিথ্যা। তা হলন আল্লাহ তা‘আলা কোন নাবী বা রাসূলগণের ওপর শয়তানের কর্তৃত্ব দেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (إِنَّه۫ لَيْسَ لَه۫ سُلْطٰنٌ عَلَي الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰي رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ - إِنَّمَا سُلْطٰنُه۫ عَلَي الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَه۫ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِه۪ مُشْرِكُوْنَ) “নিশ্চয়ই তার কোন আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকেরই ওপর নির্ভর করে। তার আধিপত্য কেবল তাদেরই ওপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে।” (সূরা নাহাল ১৬:৯৯-১০০) আল্লাহ বলেন: (وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي) “এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না।” (সূরা নাজম ৫৩:৩)শাইখ আলবানী (رحمه الله) نصب المجانيق لنسف قصة الغرانيق গ্রন্থে এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট দশটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন এবং সে সকল বর্ণনার ত্র“টি উল্লেখপূর্বক বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. অজ্ঞ লোকেরাই কেবল শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, জ্ঞানীরা নয়।২. নাবীদের আকাক্সক্ষা হল বেশি বেশি মানুষ ঈমান নিয়ে আসুক তা জানলাম।৩. শয়তানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানলাম।৪. কিসসাতুল গারানীক একটি ভ্রান্ত ও সাজানো মিথ্যা ঘটনা।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us