Surah Al Anbiya Tafseer
Tafseer of Al-Anbya : 88
Saheeh International
So We responded to him and saved him from the distress. And thus do We save the believers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইউনুস (عليه السلام)-এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। النُّوْنُ অর্থ মাছ, আর ذَا النُّوْنِ অর্থ মাছওয়ালা। সূরা ক্বালামের ৪৮ নং আয়াতে সাহেবুল হূত
(صاحب الحوت)
তথা মাছ ওয়ালা বলা হয়েছে। এ নামে নামকরণের পেছনে একটি বিশেষ ঘটনার জড়িত রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা
আল্লাহ তা‘আলা ইউনুস (عليه السلام)-কে ইরাকের নীনাওয়া (বর্তমান মুসেল) নামক শহরের নিকটবর্তী জনপদের অধিবাসীদের প্রতি নাবী হিসেবে প্রেরণ করেন। এখানে আশুরীদের শাসন ছিল, যারা এক লক্ষ্য বানী ইসরাঈলকে বন্দী করে রেখেছিল, সুতরাং তাদের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য ইউনুস (عليه السلام)-কে প্রেরণ করা হয়। তিনি যথারীতি তাঁর সম্প্রদায়কে তাওহীদের দিকে আহ্বান করলেন। কিন্তু তারা তাঁর কথা কর্ণপাত করল না এবং ঈমানও আনল না। বারংবার দাওয়াত দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তিনি এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। ইতোমধ্যে তাঁর জাতির ওপর আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দিল। তিনি জনপদ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, তিনদিন পর তোমাদের ওপর আযাব আসতে পারে। তারা ভাবল নাবী কখনো মিথ্যা বলেন না। ফলে তাঁর জাতি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত কুফর ও শির্ক হতে তাওবা করে এবং সকলকে নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেল। সেখানে আসন্ন গযব হতে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করে, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা কবূল করেন এবং আযাব তুলে নেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَوْلَا کَانَتْ قَرْیَةٌ اٰمَنَتْ فَنَفَعَھَآ اِیْمَانُھَآ اِلَّا قَوْمَ یُوْنُسَﺋ لَمَّآ اٰمَنُوْا کَشَفْنَا عَنْھُمْ عَذَابَ الْخِزْیِ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَمَتَّعْنٰھُمْ اِلٰی حِیْنٍ)
“অতএব কোন জনপদবাসী কেন এমন হল না যে, তারা এমন সময় ঈমান আনত যখন ঈমান আনলে তাদের উপকারে আসত? তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত। তারা যখন ঈমান আনল তখন আমি তাদের হতে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি তুলে নিলাম এবং তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিলাম।” (সূরা ইউনুস ১০:৮৬)
ওদিকে ইউনুস (عليه السلام) ভেবেছিলেন যে, তাঁর জাতি আল্লাহ তা‘আলার গযবে ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু পরে জানতে পারলেন যে, আদৌ গযব আসেনি। তখন তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন যে, এখন তাঁর জাতি তাকে মিথ্যাবাদী ভাববে এবং মিথ্যাবাদীর শাস্তি হিসেবে প্রথানুযায়ী হত্যা করবে। তখন তিনি জনপদে ফিরে না গিয়ে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের অপেক্ষা না করে রাগান্বিত হয়ে অন্যত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَاِنَّ یُوْنُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِیْنَﯚﺚاِذْ اَبَقَ اِلَی الْفُلْکِ الْمَشْحُوْنِﯛﺫ فَسَاھَمَ فَکَانَ مِنَ الْمُدْحَضِیْنَﯜﺆفَالْتَقَمَھُ الْحُوْتُ وَھُوَ مُلِیْمٌ)
“আর ইউনুসও ছিল রাসূলদের মধ্যে একজন। যখন সে পালিয়ে বোঝাই নৌযানে গিয়ে পৌঁছল, অতঃপর সে লটারীতে শরীক হল এবং অপরাধী সাব্যস্ত হল। তারপর একটি মাছ তাকে গিলে ফেলল, তখন সে নিজেকে তিরস্কার করতে লাগল।” (সূরা সফফাত ৩৭:১৩৯-১৪২)
মাছের পেটে ইউনুস (عليه السلام):
হিজরতকালে নদী পার হওয়ার সময় মাঝ নদীতে হঠাৎ নৌকা ডুবে যাবার উপক্রম হলে মাঝি বলল, একজনকে নদীতে ফেলে দিতে হবে। নইলে সবাইকে ডুবে মরতে হবে। লটারীতে পরপর তিনবার ইউনুস (عليه السلام) এর নাম আসে। ফলে তিনি নদীতে নিক্ষিপ্ত হন। নদীতে ফেলে দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে একটি বিরাটকায় মাছ তাঁকে গলধঃকরণ করে নেয়। কিন্তু মাছের পেটে হযম হননি বরং এটা ছিল তাঁর জন্য নিরাপদ কয়েদখানা। মাওয়ার্দী বলেন: মাছের পেটে অবস্থান করাটা তাঁকে শাস্তি দানের উদ্দেশ্যে ছিল না বরং আদব শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ছিল। যেমন পিতা তার শিশু সন্তানকে শাসন করে শিক্ষা দিয়ে থাকে। (কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
ইউনুস (عليه السلام)-এর মুক্তি:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَوْلَآ أَنَّه۫ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِيْنَ)
অর্থাৎ যদি মাছের পেটে যাওয়ার পূর্ব থেকেই তাঁর অধিক ইবাদত ও সৎ আমল না থাকত এবং মাছের পেটে যাওয়ার পর তাওবাহ ইস্তিগফার ও তাসবীহ পাঠ না করত তাহলে মাছের পেটেই থেকে যেতো, সেখানেই তার কবর হতো এবং সেখান হতেই কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান হতো। তাওবাহ-ইস্তিগফার ও তাসবীহ দ্বারা বিপদাপদ দূর হয় এবং তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি মাছের পেটে থাকাবস্থায় বিশেষভাবে এ কালেমা পাঠ করতেন
( لَّآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحٰنَكَ ﺣ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ)
‘তুমি ব্যতীত কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)
তাঁর অধিক পরিমাণ ইবাদত ও সৎ আমল এবং তাওবা ইস্তিগফারের ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবূল করত মাছের পেট থেকে জীবিত অবস্থায় নদীর তীরে তরুলতাহীন শূন্য এলাকায় রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন ইউনুস (عليه السلام) স্বাভাবিকভাবেই রুগ্ন ছিলেন। ঐ অবস্থায় সেখানে উদ্গত লাউ জাতীয় গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করেছিলেন যা পুষ্টিসমৃদ্ধ ছিল। কোন বর্ণনাতে লাউ গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে। ছায়া ও অন্যান্য উপকার নেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এভাবে আল্লাহ তা‘আলা বিপদ থেকে তাঁকে মুক্ত করেন। সূরা সফফাতের ১৩৯-১৪৮ নং আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
( فَظَنَّ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَيْهِ)
“সে মনে করেছিল আমি তার প্রতি সংকীর্ণতা করব না।” এর দুটি অর্থ হতে পারে, দুটিই সঠিক ১. ইউনুস (عليه السلام) ধারণা করেছিলেন তাঁর প্রতি মাছের পেটের ভিতরে আল্লাহ তা‘আলা সংকীর্ণতা সৃষ্টি করবেন না। ২. অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওপর শাস্তির ফয়সালা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওপর ক্ষমতা রাখেন না বা পাকড়াও করতে পারবেন না এমন ব্যাখ্যা করা ভুল, কারণ কোন নাবীরই আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে এমন ধারণা থাকতে পারে না। (আযউয়াউল বায়ান)
সুতরাং দীনের পথে দাওয়াত দিতে গিয়ে অধৈর্য হওয়া যাবে না, বরং সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করতে হবে। তবে কেউ বিপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা থেকে উদ্ধার করবেন। কারণ শেষ আয়াতে মু’মিনদেরকে সে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন অবস্থাতেই অধৈর্য হওয়া যাবে না, ধৈর্যধারণ করে যা অর্জন সম্ভব ধৈর্যহারা হয়ে তা সম্ভব নয়।
২. যেকোন কঠিন মুহূর্তে কেবল আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
৩. কাজ করার পর আফসোস করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করা উচিত।
৪. নেক নিয়তে বিপদগ্রস্ত অবস্থায়
(لَّآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحٰنَكَ ﺣ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ)
এ দু‘আ পড়লে আল্লাহ তা‘আলা তা সহজ করে দেন।
৫. যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আস্থাশীল তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই সাহায্য করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings