21:70
وَأَرَادُواۡ بِهِۦ كَيۡدًا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَخۡسَرِينَ٧٠
Saheeh International
And they intended for him harm, but We made them the greatest losers.
৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর: এটা নিয়ম যে, মানুষ যখন দলীল প্রমাণ পেশ করতে অপারগ হয়ে যায় তখন হয় পুণ্য তাকে আকর্ষণ করে, না হয় পাপ তার উপর জয়যুক্ত হয়। এখানে এই লোকগুলিকে তাদের মন্দভাগ্য ঘিরে ফেলে এবং তারা দলীল প্রমাণ পেশ করতে অপারগ হয়ে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) উপর শক্তি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। পরস্পর পরামর্শক্রমে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আগুনে নিক্ষেপ করা হোক, যাতে তাদের দেবতাদের মর্যাদা রক্ষা পায়। এর উপর তাদের সবাই একমত হয়ে গেল এবং খড়ি জমা করার কাজে লেগে পড়লো। এমন কি তাদের রুগ্না নারীরাও মানত করলো যে, যদি তারা রোগ হতে আরোগ্য লাভ করে তবে তারাও হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) পোড়াবার জন্যে খড়ি আনয়ন করবে। যমীনে একটা বড় ও গভীর গর্ত তারা খনন করলো এবং খড়ি দ্বারা তা পূর্ণ করে দিলো। খড়ির স্তুপ খাড়া করে তারা তাতে আগুন ধরিয়ে দিলো। ভূ-পৃষ্ঠে কখনো এমন ভয়াবহ আগুন দেখা যায় নাই। অগ্নি শিখা যখন আকাশচুম্বী হয়ে উঠলো এবং ওর পার্শ্বে গমন অসম্ব হয়ে পড়লো তখন তারা হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়লো যে, কেমন করে তারা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) আগুনে নিক্ষেপ করবে? (শেষ পর্যন্ত পারস্যের কুর্দিস্তানের একজন। বেদুইনের পরামর্শক্রমে একটি লোহার দোলনা তৈরী করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, তাঁকে ওটায় বসিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হবে এবং এই ভাবে তাকে অগ্নি কুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। ঐ বেদুঈন লোকটির নাম ছিল হায়ন। বর্ণিত আছে যে, ঐলোকটিকে তৎক্ষণাৎ আল্লাহ যমীনে ধ্বসিয়ে দেন। যখন তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় তখন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মকর্তা।" রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর সাহাবীদের (রাঃ) কাছে যখন এ খবর পৌঁছে যে, সমস্ত আরব বীর সৈনিকদেরকে নিয়ে তার মুকাবিলার জন্যে আসছে তখন তিনিও উপরোক্ত দুআটি পাঠ করেন। এটাও বর্ণিত আছে যে, যখন মুশরিকরা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করতে থাকে তখন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আকাশে আপনি (মাবুদ) একাই এবং যমীনে আমি একাই আপনার ইবাদত করি। (এটা মুসনাদে আবি ইয়ালায় হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে) বর্ণিত আছে যে, যখন কাফিররা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) বাধতে থাকে তখন তিনি পাঠ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আপনি পবিত্র, প্রশংসা আপনারই জন্যে, রাজত্ব আপনারই, আপনার কোন অংশীদার নেই।” হযরত শুআইব জুবাঈ (রঃ) বলেন যে, ঐ সময় হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বয়স ছিল মাত্র ষোল বছর। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, ঐ সময়েই হযরত জিবরাঈল (আঃ) তার সামনে আসমান ও যমীনের মাঝে আবির্ভূত হন এবং তাঁকে বলেনঃ “আপনার কোন প্রয়েজিন আছে কি? উত্তরে তিনি বলেনঃ “আপনার কাছে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমার প্রয়োজন আছে আল্লার কাছে।”হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, বৃষ্টির দারোগা ফেরেশতা সব সময় কান খাড়া করে প্রস্তুত ছিলেন যে, কখন আল্লাহর হুকুম হবে এবং তিনি ঐ আগুনে বৃষ্টি বর্ষণ করে তা ঠাণ্ডা করে দিবেন। কিন্তু মহান আল্লাহ সরাসরি আগুনকেই হুকুম করলেনঃ “হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের (আঃ) জন্যে ঠাণ্ডা ও নিরাপদ হয়ে যাও।” বর্ণিত আছে যে, এই হুকুমের সাথে সাথেই সারা পৃথিবীর আগুন ঠাণ্ডা হয়ে যায়। হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) বলেন যে, ঐ দিন সারা দুনিয়ায় কেউই আগুন দ্বারা কোন উপকার লাভ করতে পারে নাই। হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বন্ধনের রশিগুলি আগুনে পুড়ে যায় বটে, কিন্তু তাঁর নিজের শরীরের একটি লোমও পুড়ে নাই। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ আগুনকে নিদের্শ দেয়া হয় যে, যেন হযরত ইবরাহীম খলীলের (আঃ) কোনই ক্ষতি না করে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যদি আগুনকে শুধু ঠাণ্ডা হওয়ার নির্দেশ দেয়া হতো তবে ঠাণ্ডাই তার ক্ষতি করতো। এজন্যেই সাথে সাথেই ওকে নিদের্শ দেনঃ “নিরাপদ হয়ে যাও।'যহহাক (রাঃ) বলেন যে, মুশরিকরা খুব বড় ও গভীর গর্ত খনন করেছিল। এবং ওটাকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করেছিল। চতুর্দিকে আগুনের শিখা বের হচ্ছিল। তারা ওর মধ্যে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু অগ্নি তাকে স্পর্শও করেনি। শেষ পর্যন্ত মহামহিমান্বিত আল্লাহ ওকে ঠাণ্ডা করে দেন। উল্লিখিত আছে যে, ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) মুখ হতে ঘর্ম মুছতে ছিলেন। সুতরাং এইটুকু ছাড়া আগুন তার আর কোন কষ্ট দেয় নাই।সুদ্দী (রাঃ) বলেন যে, ছায়াকারী ফেরেশতা ঐ সময় তার সাথে ছিলেন। বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) ঐ অগ্নিকুণ্ডে চল্লিশ দিন অথবা পঞ্চাশ দিন ছিলেন। তিনি বলতেনঃ “এই দিনগুলিতে আমি যতটা আরাম ও আনন্দবোধ করেছিলাম, ওর থেকে বের হওয়ার পর ততটা আরাম ও শান্তি লাভ করি নাই। যদি আমার সারা জীবনটাই ওর মধ্যে অতিবাহিত হয়ে যেতো তবে কতই না ভাল হতো!”হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, হযরত ইবরাহীমের পিতা সবচেয়ে উত্তম যে কথাটি বলে ছিলেন তা এই যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) আগুন হতে সম্পূর্ণ সুস্থ ও নিরপিদ অবস্থায় বের হয়ে আসেন, ঐ সময় তাকে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে আসতে দেখে সে তাকে বলেছিলঃ “হে ইবরাহীম (আঃ)! তোমার প্রতিপালক বড়ই বুযর্গ ও মহান এবং বড়ই শক্তিশালী।"হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, ঐদিন যতগুলি জীবজন্তু বের হয় সবাই ঐ আগুন নিবিয়ে দিবার চেষ্টা করতে থাকে, একমাত্র গিরগিট (টিকটিকির চেয়ে বড় এক প্রকার বিষাক্ত প্রাণী) এর ব্যতিক্রম। হযরত যুহরী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গিগিটকে মেরে ফেলার হুকুম দিয়েছেন এবং ওকে ফাসেক বলেছেন। হযরত আয়েশার (রাঃ) ঘরে একটি বর্শা দেখে একটি স্ত্রী লোক তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ঘরে এটা কেন রেখেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “গিরগিটকে মারবার জন্যে এটা রেখেছি। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে সময় হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয় সেই সময় গিরগিট ছাড়া সমস্ত জীবজন্তু ঐ আগুন নিবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গিরগিট ঐ আগুনে ফু দিচ্ছিল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গিরগিটকে মেরে ফেলার নিদের্শ দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু আমি করে দিলাম তাদের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।হযরত আতিয়্যাহ আওফী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য দেখবার জন্যে ঐ কাফিরদের বাদশাহ এসেছিল। একদিকে হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো, আর অপরদিকে ঐ আগুনেরই একটি স্ফুলিঙ্গ উড়ে এসে ঐ বাদশাহ বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর পড়ে যায় এবং সেখানেই সবারই সামনে তাকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন ভাবে তূলা জ্বলে থাকে।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us